চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জেরে দুই দেশ পরস্পরের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ইসলামাবাদের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ভারতের বিমান পরিবহন। এ অবস্থা কাটাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তদবির করছে, যেন চীন সরকারকে তাদের অধীন জিনজিয়াংয়ের আকাশ ব্যবহারের অনুমতি দিতে রাজি করানোর উদ্যোগ নেয় ভারতীয় সরকার।
বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়। খবরে বলা হয়, হিমালয় পর্বতমালায় দুই দেশের সীমান্তে সংঘর্ষের জেরে পাঁচ বছর স্থগিত থাকার পর এ বছরের ৩ অক্টোবর নতুন করে ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহ পরই এ ধরনের অস্বাভাবিক অনুরোধ করার তদবির এলো।
এছাড়া এয়ার ইন্ডিয়া নতুন করে তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে চাচ্ছে। চলতি বছরের জুনে গুজরাটে লন্ডনগামী এক বিমান ধসে পড়ে ২৬০ জন নিহত হন। এর ফলে নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটির ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে।
তবে এর সঙ্গে আরেকটি চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়েছে ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাত্রায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের জ্বালানি খরচ ২৯ শতাংশ বেড়ে গেছে। এছাড়া দীর্ঘ পথ ঘুরে যাত্রার কারণে ফ্লাইটের স্বাভাবিক সময়ও বেড়ে গেছে। গত অক্টোবরে ভারতীয় কর্মকর্তাদের তৈরি করা অপ্রকাশিত নথিপত্র যাচাই করে রয়টার্স এ তথ্য পায়।
ভারত সরকার এয়ার ইন্ডিয়ার এ তদবির পর্যালোচনা করছে। নথিপত্রে বলা হয়, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছাতে জিনজিয়াংয়ের আকাশসীমায় চলাচলের অনুমতির পাশাপাশি প্রয়োজনে খোতান, উরুমচি ও কাশগরের বিমানবন্দর ব্যবহার করতে চাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া।
এতে বলা হয়, ‘এয়ার ইন্ডিয়ার দীর্ঘ পথের বিমান চলাচল প্রচণ্ডভাবে পরিচালনাগত ও আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে। খোতানের পথ দিয়ে চলাচল এক্ষেত্রে কৌশলগত একটি ব্যবস্থা হতে পারে।’
টাটা কোম্পানি ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের অংশীদারত্বের এ বিমান পরিবহন সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়া বিমান চলাচলের বার্ষিক লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংঘর্ষের আগে প্রতিবছর ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার লাভ পেত সংস্থাটি। বর্তমানে পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় সরকার থেকে সাময়িক ভর্তুকি চায় এয়ার ইন্ডিয়া।
বিষয়টি নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলে জানানো হয়, এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই। এর জন্য ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের’ সঙ্গে যোগাযোগ করতে রয়টার্সকে জানানো হয়।
অপরদিকে এয়ার ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান, ভারত ও চীনের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও কোনো প্রত্যুত্তর পায়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই সংঘাতের জেরে আকাশসীমা বন্ধের ঘটনা রয়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর আমেরিকার বিমানের জন্য রাশিয়ার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় মস্কো। এর জেরে এয়ার ইন্ডিয়া ভারত-আমেরিকার মধ্যে বিমান চলাচলে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত আগস্ট থেকে দিল্লি-ওয়াশিংটনে সরাসরি বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের অন্য রুটে বিমান চলাচলের বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিমানযাত্রার সময় অন্তত তিন ঘণ্টা বেড়ে গেছে।