আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আলকায়দার হামলার পর বাগরাম ঘাঁটিটি আমেরিকার প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২১ সালে তালেবান আমেরিকা সমর্থিত কাবুল সরকারকে উৎখাত করে এবং তাদের ঘাঁটিগুলো দখলে নেয়। কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহারের পাঁচ বছর পর এখন এই ঘাঁটি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে ট্রাম্প।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাগরাম ঘাঁটিটি তালেবানকে বিনামূল্যে দিয়েছিল ওয়াশিংটন যা এখন ফিরে চাইছে তারা।
২০ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, যদি আফগানিস্তান আমেরিকার তৈরি বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। তবে দেশটি কী পরিণতি হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
তালেবান সরকার ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এবারই প্রথম নন, এর আগেও এই ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প।
তাহলে বাগরাম বিমানঘাঁটি কী, কেন একে নিজেদের দখলে নিতে এত মরিয়া ট্রাম্প, এর কৌশলগত তাৎপর্যই বা কী এবং আমেরিকা কি এটি ফিরে পেতে পারে?
এটি মূলত কাবুল থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত চীনের পারমাণবিক অস্ত্র কারখানার কাছাকাছি। এই ঘাঁটি আমেরিকার বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি ছিল। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রানওয়ে রয়েছে।
কেন ট্রাম্প এটি ফিরে পেতে এত মরিয়া? ট্রাম্পের দাবি, ২০২১ সালে তাড়াহুড়ো করে সেনা সরিয়ে নেওয়ায় বহু মূল্যবান অস্ত্র এখানে ফেলে এসেছিল, পরে যা তালেবান ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে হস্তান্তর করেছিল।
কিন্তু ক্রাইসিস গ্রুপের সিনিয়র বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেছেন, বাগরামের আসল আকর্ষণ অস্ত্র বা চেইন রেস্তোরাঁ নয়, বরং ভূরাজনৈতিক। সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মিত বলে এই ঘাঁটির সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মূল্য ছিল। আমেরিকা আফগান ছাড়লেও এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় বাগরামের গুরুত্বও বেড়েছে। কারণ চীনকে প্রধান হুমকি মনে করছে তারা।
তালেবানরা বাগরাম ঘাঁটি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালেও ট্রাম্প এখনো এ বিষয়ে আশা ছাড়েননি। বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকা হয়তো বাগরাম পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে দরকষাকষির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। যদি তা-ই হয়, তবে তা তালেবানদের জন্য বড় ধরনের সুসংবাদ হতে পারে। তবে, এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে ট্রাম্পের মর্জির ওপর। তিনি তালেবানের সঙ্গে ব্যবসায় যাবেন, না অন্যকিছু? তবে এর বিপরীতে তালেবানরা কী দিবেÑ বেসরকারি বিনিয়োগ, খনিজসম্পদ, নাকি বাগরাম? এটি নির্ভর করছে তালেবান কর্তৃপক্ষের ওপর।