ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক মুসলিম যুবককে ওড়িশার একটি গ্রামে মারধর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী রাহুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরপাড়া থানার বাসিন্দা।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওড়িশার গঞ্জাম জেলার একটি গ্রামে কিছু হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তি রাহুল ইসলামের পরিচয়পত্র যাচাই করে তা ভুয়া বলে দাবি করেন এবং তাকে ‘বাংলাদেশি’ ও ‘রোহিঙ্গা’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মারধর করে তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘ভারতমাতা কি জয়’ বলতে বাধ্য করা হয়।
‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান দুটিকে কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশেষভাবে ব্যবহার করে থাকে এবং মুসলমানদের আনুগত্য যাচাইয়ের উপায় হিসেবেও এ স্লোগান ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি সংগঠন ওড়িশা পুলিশ, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে ই-মেইল করেছে।
ওড়িশা সরকার এর আগে জানিয়েছিল, রাজ্যে বৈধ নথি ছাড়া বসবাসকারী ৩,৭৪০ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি ওড়িশায় বিজেপি ক্ষমতায় আসে। অভিযোগ, এরপর পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয় যাচাইয়ের নামে আটক অভিযান বাড়ানো হয়েছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, গত ১০ দিনে অন্তত ৩০০-এর বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ও ফেরিওয়ালাকে আটক রাখা হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত আটক রাখা হয়েছে।
ওড়িশা থেকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ শনাক্তে জেলা পর্যায়ে পুলিশ পরিচয় যাচাই অভিযান চালাচ্ছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অনেককে ছেড়ে দেওয়া হলেও, কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক অভিযোগ করেছেন—তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওড়িশা ত্যাগের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাটির বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র এক্স-এ পোস্ট করে ওড়িশা পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
রাহুল ইসলামকে মারধরের প্রসঙ্গে তার সহবাসী মাইনুল সরকার জানান, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন তাকে ঘিরে ধরে চড়-থাপ্পড়, লাথি ও লাঠি দিয়ে মারধর করেছে। ‘জয় শ্রীরাম’ বলার পরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। অভিযোগ জানাতে পরের দিন থানায় গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
এ ঘটনায় রাহুল ইসলাম আহত হন এবং তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এরপর ভয় ও অসুরক্ষার কারণে তারা সবাই মুর্শিদাবাদে ফিরে গেছেন।
পরিচয় যাচাইয়ের নামে আটকের আরো ঘটনা ঘটেছে ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া, জগৎসিংপুর ও ভদ্রক জেলাতেও। পুলিশ দাবি করেছে, সন্দেহভাজনদের পরিচয় যাচাই চলছে, কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের অভিযোগ—ভারতের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও অনেককে ‘রোহিঙ্গা’ ও ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। সংগঠনটি সংখ্যালঘু ও মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ পাঠিয়েছে।
এ ছাড়া ওড়িশার কিছু এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘর ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ ও বাড়ির মালিকদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। মহুয়া মৈত্রও এক ঘটনায় চারজন মুর্শিদাবাদী শ্রমিককে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা