নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আর উত্তরপ্রদেশের বারানসির সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি মূলত রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য। প্রায় এক যুগ ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর আসন দখলে রেখেছেন তিনি। ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ মোদি সরকার তার তৃতীয় মেয়াদের অর্ধেক সময় পার করবেন। ৭৫ বছর বয়সি এই প্রধানমন্ত্রী এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি শক্তিশালী ও ব্যবসাবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। দেশের জন্য কাজ করা বিজেপি সরকারের পক্ষে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা সম্ভব বলে মনে হলেও আসলে তা অসম্ভব। কারণ, তার ভারতীয় জনতা পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে সরকারের বিরোধিতাকারীর সংখ্যা। এখন প্রশ্ন হলোÑমোদি সরকারের বিকল্প কে হতে পারেন, তা-ই খুঁজছেন দেশটির জনগণ।
ভারতজুড়ে নরেন্দ্র মোদি এখনো বেশ জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী। গত নভেম্বরে আমেরিকান ডেটা ফার্ম মর্নিং কনসালটেন্টের এক জরিপে দেখা গেছে ২৪ শীর্ষ দেশের নেতাদের জনপ্রিয়তার সূচকে মোদির সমর্থন ৭১ শতাংশ। সে হিসেবে তিনি ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধীর মেয়াদের চেয়েও কম। ইন্ডিয়া প্রাইম মিনিস্টার মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির তথ্যমতে, জওহরলাল নেহরু ক্ষমতায় ছিলেন ১৬ বছর ৯ মাস ১২ দিন, ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন ১৫ বছর ১১ মাস ১৬ দিন। আর নরেন্দ্র মোদি ১১ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন।
সাবিত্রীবাই ফুল পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক সুহাস পালশিকর বলেছেন, মোদির বারবার ক্ষমতায় আসার পেছনের কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক উত্থান এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভোটদানের আচরণের এক শক্তিশালী সংমিশ্রণ।
মোদি সরকার বকেয়া কর, দেউলিয়া অবস্থা এবং শ্রম আইন সংস্কার বাস্তবায়ন করে দেশটির রাজস্ব আর চলতি হিসাবের ঘাটতি কমিয়েছে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তার আবেদনকে শক্তিশালী করেছে।
এবার আসা যাক মোদি-পরবর্তী ভারতে। যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় না থাকেন, তবে তিনটি প্রধান পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ মুহূর্তে বিজেপির মধ্য থেকেই একজন উত্তরসূরি উঠে আসতে পারেন, যিনি সম্ভব মোদির ডান হাত আর তিনিই হতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনবিশ, যিনি মুম্বাইয়ের জনসাধারণের অবকাঠামোর সংস্কার তত্ত্বাবধান করছেন। আপাতত এরা ছাড়া অন্য আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই এই পদে।
বিকল্পভাবে মোদির বর্তমান মিত্র জোটের পক্ষে নেতৃত্ব দিতে পারে। এ পক্ষে এন চন্দ্রবাবু নাইডু বা তার ছেলে নারা লোকেশ। যার নেতৃত্বে চলছে তেলেগু দেশম পার্টি। আর এ দলটি নেতৃত্ব দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের। এই জুটি বিশাল বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যালফাবেটের ১৫ বিলিয়ন ডলারের ডেটা সেন্টার চালুর উদ্যোগ। তবে শেষ পর্যন্ত এমনও হতে পারে যে, বিজেপির বিরোধী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হতে পারে। এমনকি তার ক্যারিশম্যাটিক বোন প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বেও সরকার গঠিত হতে পারে।
তবুও পরবর্তী সময়ে যিনিই আসবেন, তিনি মোদির মতো একই স্তরের জনসমর্থন বা জনপ্রিয়তা নাও পেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, একজন অজনপ্রিয় নেতা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নগদ অর্থ বিতরণ বা অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজ করে জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করতে পারেন। যা ভারতের আয়-ব্যয়ের মানের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং তা দেশটিতে দুর্নীতি বৃদ্ধি করবে।