গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বাধা
নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বলেছে, দখলদার শক্তি হিসেবে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে সুযোগ করে দিতে বাধ্য ইসরাইল। বুধবার আইসিজে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের বিষয়ে জারি করা আদেশে এ মন্তব্য করে।
আদেশে আরো বলা হয়, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের অধীন ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় সহায়তা করতে গিয়ে কোনো প্রকার নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করেনি।
এর আগে গত ডিসেম্বরে গাজায় ত্রাণ সরবরাহে ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করে আইন জারি করে ইসরাইল। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ আইসিজের কাছে আইনি মতামত চেয়ে আবেদন করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক এ আদালতের আদেশ মানার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও জাতিসংঘ ও অন্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাজে সহায়তা করতে এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।
তবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইউএনআরডব্লিউএর অনেক কর্মী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে জড়িত। গাজায় আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে পরিচালিত স্কুলগুলোতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হয়।
তবে ইউএনআরডব্লিউএর পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানানো হয়েছে, ইসরাইলের এ দাবির কোনো প্রমাণ নেই। গতকাল আইসিজের আদেশে বলা হয়, ইউএনআরডব্লিউএর কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ইসরাইল প্রমাণ করতে পারেনি।
এর মাধ্যমে দুই বছরে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যে আইসিজের তৃতীয় আদেশ জারি হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে আইসিজের আদেশে বলা হয়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দখলদারিত্ব সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। এর আগে একই বছরের জানুয়ারিতে আইসিজে ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যা বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আদেশ জারি করে।
গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে এ মামলায় অন্য দেশগুলো যুক্ত হয়।
এদিকে আইসিজের আদেশকে জাতিসংঘে ইসরাইলি দূত ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে মন্তব্য করে।
১৬ বছরের ইসরাইলি অবরোধ ভাঙতে হামাসসহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরাইলের মূল ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অভিযান চালায়। স্বাধীনতাকামীরা ইসরাইলি সেনাসহ ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। দুই বছরের আগ্রাসনে গাজায় ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুসারে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গাজা থেকে মৃত জিম্মিদের লাশ ফেরতের প্রক্রিয়া চলছে।