তিন ধাপে ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এ হিসাবে আগামী ২৫ জানুয়ারি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর ও ১১ জানুয়ারি দুই ধাপে মোট ৩৩০টি প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে ২০২টিতে ভোটগ্রহণ হবে। শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল নিউলাইট অব মিয়ানমার-এ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, তৃতীয় ধাপে ৬৩টি টাউনশিপে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
দেশটির জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং আগেই স্বীকার করেন, সারা দেশে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। অভ্যুত্থানের পর দেশটি প্রথমবারের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে । তবে ভোট গণনা ও নির্বাচনের ফল ঘোষণার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
জান্তা বাহিনীর জেনারেলরা আশা করছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা দখল বৈধতা পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার সুযোগ হবে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি স্থিতিশীল প্রশাসন গঠনের লক্ষ্যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সামরিক সরকারের এ উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বর্তমানে মিয়ানমারের সাবেক নেতা কারাগার থাকার পাশাপাশি প্রধান রাজনৈতিক দল ভেঙে দেওয়া এবং দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে সামরিক শাসকদের অধীনে নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ২৫ বছর বয়সি পাই ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, এটি জনগণের জন্য নয়, এটি তাদের নিজেদের জন্য। তারা (ক্ষমতাসীন জান্তা) যে ফাঁদে পড়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে।
তবে নির্বাচন নিয়ে চলমান সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে সামরিক বাহিনী। জান্তা সরকারের দাবি, নির্বাচন জোর করে পরিচালিত হচ্ছে না এবং এতে জনসমর্থন রয়েছে। জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, নির্বাচনটি মিয়ানমারের জনগণের জন্য পরিচালিত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নয়।
এদিকে পশ্চিমা অনেক দেশের সরকার এবং জাতিসংঘ এ ভোটকে প্রহসন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে জান্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চীন এ নির্বাচনকে সমর্থন করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন এ ভোটকে দেশের স্থিতিশীলতার দিকে ফিরে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মিয়ানমারে গত বছর থেকে সংঘাত কেবল তীব্রতর হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সংঘাতের ওপর নজরদারি করা সংস্থা অ্যাকলেডের মতে, মিয়ানমারে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সামরিক বিমান ও ড্রোন হামলা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নিয়মিত হামলায় স্কুল ও হাসপাতালের মতো নাগরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি মাসে রাখাইন রাজ্যের একটি হাসপাতালে সামরিক হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হন।