পাকিস্তান বৃহস্পতিবার কাবুলে এক হাজারের বেশি আফগান উলামার যৌথ ধর্মীয় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইসলামাবাদ বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর হবে শুধুমাত্র তালেবান নেতৃত্বের লিখিত নিশ্চয়তার মাধ্যমে। পাকিস্তান বহুবার এই লিখিত নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছে, যা এখনও পায়নি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফরের মুখপাত্র তাহির অন্দরাবি তার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, কাবুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পাঁচ দফার যৌথ ঘোষণা “ইতিবাচককভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে।” ঘোষণায় বলা হয়েছে, যে কোনো পক্ষ যদি “আফগানিস্তানের সীমানার বাইরে সামরিক অভিযান চালায়, তা বিদ্রোহমূলক কাজ হিসেবে গণ্য হবে এবং আমিরের আদেশ লঙ্ঘনের শাস্তি দেওয়া হবে।”
এই বিবৃতিকে অভ্যন্তরীণভাবে ক্রস-বর্ডার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ধর্মীয় সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও পাকিস্তানের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, এটি মূলত নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং অন্যান্য উগ্র গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্দরাবি বলেন, “পাকিস্তান দেখবে, মূল্যায়ন করবে এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, অতীতে তালেবান সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ হয়নি। এজন্য মধ্যস্থতাকারী আলোচনার সময়ও ইসলামাবাদ লিখিত নিশ্চয়তার দাবি করেছে।
পাকিস্তানের এই সংযমী প্রতিক্রিয়া কাবুলের প্রতি গভীর হতাশার প্রকাশ। আফগান ভূখণ্ড থেকে সংঘটিত কয়েকটি প্রাণঘাতী হামলার প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদ ক্ষুব্ধ। কর্মকর্তারা মনে করেন, কেবল তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার আনুষ্ঠানিক নির্দেশনাই এমন সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ক্ষমতা দিতে পারে।
পররাষ্ট্র দফর কাবুলের মানবিক সাহায্য সম্পর্কিত বিতর্কের কথাও উল্লেখ করেছে। পাকিস্তান সম্প্রতি আফগানিস্তানে সাহায্য পৌঁছে দিতে সীমান্ত খোলার ঘোষণা দিয়েছে। তবে তালেবান প্রশাসন এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছে।
অন্দরাবি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে সাহায্য কনভয় অনুমোদিত। আফগান তালেবান প্রশাসন তা গ্রহণ করবে কি না, তা তাদের সিদ্ধান্ত।” তিনি আরো বলেন, “সহায়তা প্রত্যাখ্যান করা কোনো দেশের জন্য অভূতপূর্ব ঘটনা হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান আফগান জনগণের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ ও যত্নের অংশ হিসেবে সাহায্য দিতে প্রস্তুত।
সংক্ষেপে, পাকিস্তানের নীতি স্পষ্ট—আফগান মাটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। এজন্য ইসলামাবাদ লিখিত নিশ্চয়তার জন্য পুনরায় জোর দিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, উলামা কাউন্সিলের যৌথ ঘোষণাটি একটি সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নির্দেশ করে। এটি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ধর্মীয় চাপের প্রতিফলন, যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। তবে পূর্বের প্রতিশ্রুতিগুলো কার্যত বাস্তবায়িত হয়নি।
যখন মার্কিন কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা পাকিস্তানে মানবাধিকারের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তখন অন্দরাবি জানান, ইসলামাবাদ কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছে এবং পাকিস্তানের অবস্থান কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
এসআর