অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় যুদ্ধবিরতির এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর দুই বছরের বর্বর আগ্রাসনের পর গত ১০ অক্টোবর এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু যুদ্ধবিরতির মধ্যেই চুক্তি ভেঙে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। এরই মধ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তনে তীব্র শীত ও বৃষ্টির জেরে প্লাবন সৃষ্টি হওয়ায় চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন বিধ্বস্ত উপত্যকার বাসিন্দারা।
রোববার গাজা থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি জানান, দুদিনের বৃষ্টি বিদ্যমান দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বৃষ্টিতে পুরো উপত্যকা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গাজার শরণার্থীরা তাদের তাঁবুর চারপাশে পরিখা খুঁড়ে প্লাবনের পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়া অনেকেই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ইসরাইলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন, যা যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ ভারী বৃষ্টির জেরে দুর্ভোগে পড়া শরণার্থীদের আশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে সংস্থাটি ‘গাজায় শীত এসেছে’ লেখা একটি ছবি যুক্ত করে বলে, ‘গাজায় শীতের বৃষ্টি পরিস্থিতিকে আরো দুর্দশার মধ্যে ফেলবে। উদ্বাস্তু পরিবারগুলো কোনো রকমে তাঁবু তৈরি করে তাতে আশ্রয় নিচ্ছে। আশ্রয়ের জন্য সরঞ্জাম জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন। ইউএনআরডব্লিউএর কাছে মানুষকে শীত অতিক্রম করতে এ ধরনের সহায়তা রয়েছে। আমাদেরকে তা নিয়ে যেতে দিন।’
ইসরাইল গাজার জনসাধারণের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিতে গত বছর থেকে ইউএনআরডব্লিউওর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ইসরাইলের দাবি, সংস্থাটির কর্মীরা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্য।
এর আগে শুক্রবার থেকেই গাজায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। তীব্র বৃষ্টিপাতে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলেই প্লাবনের সৃষ্টি হয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর জানায়, বৃষ্টিতে শরণার্থীদের আশ্রয় নেওয়া তাঁবুর ৯৩ শতাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।
গাজা শহরের বাসিন্দা এক ফিলিস্তিনি নারী আলজাজিরাকে জানান, তীব্র বৃষ্টিতে তার পরিবার চরম সংকটে পড়ে গেছে। ইসরাইলি আগ্রাসনে স্বামীকে হারানোর পর একাকী সন্তানদের লালন করছেন নাম না জানানো এ নারী।
তিনি বলেন, ‘আমি যথাযথ একটি তাঁবু ও প্রয়োজনীয় তোশক-কম্বল চাই। আমি চাই আমার সন্তানদের যেন উপযুক্ত পোশাকের ব্যবস্থা হয়।’
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও তীব্র বৃষ্টি ও প্লাবনের মধ্যে দুর্ভোগের মুখে পড়া গাজার বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। রোববার দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে ইসরাইলি বোমা হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গাজা শহর ও রাফায়ও ইসরাইলি বিমান হামলা চালায়।
এদিকে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোববারের বিবৃতিতে বলা হয়, আগের ৭২ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় দুজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। এছাড়া ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার ১৫ ফিলিস্তিনি বন্দির লাশ ফেরত দিয়েছে ইসরাইল।
এ নিয়ে যুদ্ধবিরতির মধ্যে নতুন করে ২৬৬ জন নিহত, ৬৩৫ জন আহত, ৫৪৮ জনের লাশ উদ্ধার ও ৩৩০ জনের লাশ ইসরাইল ফেরত দিয়েছে।
সবমিলিয়ে দুই বছরের বেশি সময়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৪৮৩ ও আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৭০৬।