আল-জাজিরার এক্সপ্লেইনার
বিশ্বের মোট ব্যক্তিগত সম্পদের তিন-চতুর্থাংশই ১০ শতাংশ বিত্তশালী মানুষের মালিকানায় রয়েছে। শীর্ষ ৫০ শতাংশ উপার্জনকারী ৯০ শতাংশেরও বেশি নিজেদের ঘরে তোলে, যেখানে বিশ্বের দরিদ্রতম অর্ধেক মানুষ পায় মোট আয়ের ১০ শতাংশেরও কম। দ্য ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট-২০২৬-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। ২০২৬ সংস্করণটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে, যখন বিশ্বব্যাপী বহু মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ছে, সম্পদ এবং ক্ষমতা ক্রমশ শীর্ষস্থানে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশে সুষম আয় বণ্টন রয়েছে। আয় বণ্টন তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৫ তম।
সম্পদ ও আয় বৈষম্যের পার্থক্য:
সম্পদ ও আয়ের স্তর সবসময় একসঙ্গে চলে না। সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ উপার্জনকারী নাও হতে পারে। সম্পদ বলতে ঋণ পরিশোধের পর একজন ব্যক্তির সম্পদের মোট মূল্যকে বোঝায়।
২০২৫ সালে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বিত্তশালী বিশ্বব্যাপী সম্পদের ৭৫ শতাংশের মালিক ছিলেন, মধ্যমআয়ের ৪০ শতাংশ ২৩ শতাংশের মালিক এবং নীম্মআয়ের অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণে ছিল মাত্র ২ শতাংশ।
এমন একটি বিশ্ব তৈরি হয়েছে যেখানে একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘুর হাতে ব্যাপকহারে আর্থিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যেখানে কোটি কোটি মানুষ এখনো মৌলিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছে।
২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী আয়ের ৫৩ শতাংশই উপার্জন করেছেন সবচেয়ে বিত্তশালী ১০ শতাংশ মানুষ। আর মধ্যম ৪০ শতাংশ উপার্জন করেছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ এবং এর নিচের ৫০ শতাংশের উপার্জন বিশ্বব্যাপী আয়ের মাত্র ৮ শতাংশ।
সম্পদ ও উপার্জন আঞ্চলিকভাবে কীভাবে বিভক্ত:
একজন ব্যক্তির জন্মস্থান তার উপার্জন ও সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে একটি। উত্তর আমেরিকা এবং ওশেনিয়ার মানুষেরা মোট গড় সম্পদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এসব এলাকার মানুষের গড় সম্পদ, বিশ্বের মোট গড় সম্পদের ৩৩৮ শতাংশ, যা এটিকে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ধনী অঞ্চলে পরিণত করেছে। মোট গড় উপার্জন ২৯০ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
এরপর ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়া বিশ্বব্যাপী মোট গড় সম্পদের দিক দিয়ে উপরের দিকে রয়েছে, যেখানে সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল অংশ বিশ্ব গড়ের অনেক নিচে রয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী বৈষম্য একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে, কিন্তু সম্পদ এবং আয়ের ব্যবধানের মাত্রা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু দেশে সুষম বন্টন বেশি, আবার কিছু দেশে সম্পর্দ কয়েকজনের হাতে কুক্ষিগত থাকে।
কোন কোন দেশে আয় বৈষম্য সবচেয়ে বেশি:
আয় বৈষম্যের দিকে থেকে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এখানকার শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষ মোট আয়ের ৬৬ শতাংশ আয় করে, যেখানে নিম্ন স্তরের অর্ধেক মানুষের উপার্জন মাত্র ৬ শতাংশ।
ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিলি এবং কলম্বিয়ার মতো ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতেও একই প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ প্রায় ৬০ শতাংশ উপার্জন করে।
ইউরোপীয় দেশগুলো অনেক ভারসাম্যপূর্ণ। সুইডেন ও নরওয়েতে নিম্ন স্তরের ৫০ শতাংশ মোট আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ উপার্জন করে, যেখানে শীর্ষ ১০ শতাংশ ৩০ শতাংশেরও কম উপার্জন করে।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান এবং যুক্তরাজ্যসহ অনেক উন্নত অর্থনীতির দেশ মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।
এশিয়ায় আয় বণ্টন মিশ্র। বাংলাদেশ ও চীনের মতো দেশগুলোতে আয় বণ্টন অনেক সুষম। তবে ভারত, থাইল্যান্ড ও তুরস্কের মতো দেশগুলো বৈষম্যের শীর্ষে রয়েছে, সেখানে ধনী ১০ শতাংশ মোট আয়ের অর্ধেকেরও বেশি উপার্জন করে।
কোন কোন দেশে সম্পদের বৈষম্য সবচেয়ে বেশি:
সম্পদের বৈষম্যের ক্ষেত্রেও দক্ষিণ আফ্রিকা তালিকার শীর্ষে। শীর্ষ ১০ শতাংশ ব্যক্তি ব্যক্তিগত সম্পদের ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে নীচের ৫০ শতাংশের শেয়ার নেতিবাচক থাকে - যার অর্থ তাদের ঋণ সম্পদের চেয়ে বেশি।
রাশিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং কলম্বিয়া একই ধরণের কাঠামো দেখায়, সবচেয়ে ধনীরা ৭০ শতাংশ বা তার বেশি দখল করে আছে, যেখানে সবচেয়ে দরিদ্ররা মাত্র ২-৩ শতাংশ পাচ্ছে।
ইতালি, ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ভারসাম্যপূর্ণ।
এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের মতো ধনী দেশগুলোতেও সম্পদের ক্ষেত্রে সমতা নেই। শীর্ষ ১০ শতাংশ মোট সম্পদের অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে নীচের অর্ধেকের কাছে মাত্র ১-৫ শতাংশ সম্পদ রয়েছে।
ভারত এবং থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিতেও তীব্র বৈষম্য রয়েছে। সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ প্রায় ৬৫-৬৮ শতাংশ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে।
আরএ