মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত তেলবাহী জাহাজগুলোর ওপর পূর্ণাঙ্গ অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার দেওয়া এই ঘোষণার মাধ্যমে কারাকাসের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ আরও জোরালো হলো।
ট্রাম্প একই সঙ্গে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল নিয়ে নতুন দাবি উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘চুরি করা’ তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত কঠোর অবস্থান বজায় থাকবে।
ল্যাটিন আমেরিকায় মাদক পাচার দমনের যুক্তি দেখিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভেনেজুয়েলার দাবি, এই অভিযানের প্রকৃত লক্ষ্য বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা। ওয়াশিংটনসহ বেশ কয়েকটি দেশ মাদুরোকে অবৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচনা করে।
ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে মার্কিন যুদ্ধবিমানের মহড়া এবং মাদক পাচারের সন্দেহে বিভিন্ন নৌযানে হামলায় ইতোমধ্যে ৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহ পর গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলা থেকে ছেড়ে আসা একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপর আরও কয়েকটি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, “আজ আমি ভেনেজুয়েলায় আসা-যাওয়া করা সব নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেল ট্যাংকারের ওপর সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধের নির্দেশ দিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, ক্যারিবীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা মার্কিন নৌবহর, যার মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরীও রয়েছে, আরও শক্তিশালী করা হবে। ট্রাম্পের অভিযোগ, “অবৈধ মাদুরো সরকার চুরি করা তেলের অর্থ মাদক সন্ত্রাস, মানবপাচার, হত্যা ও অপহরণে ব্যয় করছে।”
যদিও ট্রাম্প নির্দিষ্ট কোনো তেলক্ষেত্র বা ভূমির কথা উল্লেখ করেননি, তবে ১৯৭০-এর দশকে ভেনেজুয়েলা তাদের তেল শিল্প জাতীয়করণ করে। পরবর্তীতে হুগো শাভেজের শাসনামলে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ-এর কাছে মালিকানা হস্তান্তরে বাধ্য করা হয়।
মাদুরো বরাবরই দাবি করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযানের আড়ালে আসল উদ্দেশ্য হলো তাকে উৎখাত করা এবং ভেনেজুয়েলার বিপুল তেল সম্পদ দখল করা।
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই ভেনেজুয়েলার তেল খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। তবে রপ্তানিকারক জাহাজ জব্দের ফলে দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা মাদুরোর জন্য বড় রাজনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে।
ভেনেজুয়েলার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিনোকো রিসার্চ-এর ইলিয়াস ফেরার এএফপিকে বলেন, “তেল রপ্তানি বন্ধ হলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ ও আমদানিতে ধস নামবে। এতে অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে।”
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলা দীর্ঘদিন ধরে কালোবাজারে, বিশেষ করে চীনের কাছে কম দামে তেল বিক্রি করে আসছিল। ওপেকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির তেলের মজুদ প্রায় ৩০ হাজার ৩০০ কোটি ব্যারেল, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
সূত্র: এএফপি
এসআর