ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন যে তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। অনেকের কাছে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত হিসাবে মনে হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে ভোট আয়োজনের জটিলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি বলেন, পার্লামেন্টের অনুমোদন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের নিরাপত্তা সহায়তা পেলে নির্বাচন করা সম্ভব।
একটি হোয়াটসঅ্যাপ প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত; তাছাড়া আমি এখন প্রকাশ্যেই বলছি — যুক্তরাষ্ট্র যেন আমাকে সহায়তা করে।”
জেলেনস্কির মতে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে এবং পার্লামেন্ট যুদ্ধকালীন আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিধান প্রস্তুত করলে আগামী ৬০-৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি যে তারা ইউক্রেনে নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে কি না।
এর আগে ট্রাম্প পলিটিকো–কে বলেন যে ইউক্রেনের এখন নির্বাচনের সময় এসেছে। তিনি মন্তব্য করেন, “তারা অনেক দিন ধরে নির্বাচন করেনি… একটা সময় আসে যখন এটা আর গণতন্ত্র থাকে না।”
ইউক্রেনের জনগণ ২০১৯ সালের মার্চ-এপ্রিলে দুই দফা নির্বাচনে জেলেনস্কিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয়। দ্বিতীয় দফায় তিনি ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন যে তিনি শান্তি প্রক্রিয়া থেকে সরে যাচ্ছেন না, তবে সব পক্ষকেই “সমঝোতায় আসতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কয়েকজন সদস্যসহ ট্রাম্প মাঝে মাঝে ইউক্রেনের গণতন্ত্র বিষয়ে ক্রেমলিনের কথাবার্তা প্রচার করেছেন বলে সমালোচনা রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের সখ্যতা থাকলেও জেলেনস্কির সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক উষ্ণ নয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউস সফরের সময় ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রকাশ্য ভর্ৎসনার মুখোমুখি হন জেলেনস্কি, যখন তাকে যথেষ্ট কৃতজ্ঞ না হওয়ার অভিযোগ করা হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেনে ব্যাপক আক্রমণ চালান, যেখানে রাশিয়া ভিন্নমত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দমন করলেও ইউক্রেন বারবার গণতান্ত্রিক অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সমর্থন জোগাতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি ভ্যাটিকানে পোপ লিও চতুর্দশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন—যারা নিজেরাও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে ভূমিকা খুঁজছেন।
সোমবার তিনি আবারও স্পষ্ট করে বলেন, ইউক্রেন কোনো ভূমি রাশিয়াকে দেবে না। “আমাদের আইনি, সাংবিধানিক, আন্তর্জাতিক আইন—কোনো ক্ষেত্রেই অধিকার নেই; নৈতিকভাবেও না,” বলেন তিনি।
ট্রাম্প মূলত ২৮ দফা একটি শান্তি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন, যেখানে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছাড়তে বলা হয়েছিল—যা রাশিয়ার পক্ষে বেশি সুবিধাজনক বলে মনে করা হয়। জেলেনস্কি জানান যে আলোচনার মাধ্যমে এখন সেই দফা কমে ২০–এ নেমেছে। তিনি বলেন, তিনি ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার ইচ্ছায় আস্থা রাখলেও রাশিয়ার ওপর কোনো আস্থা নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
এসআর