পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ গতিতে বাড়ছে ‘বাংলাদেশ বিদ্বেষ’-এর ঝড়। বিশেষ করে সীমান্তে উত্তেজনার আবহে বিজেপি নেতারা যে ভাষা ব্যবহার করছেন, তা দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর বলে অভিযোগ উঠছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ বিদ্বেষ’-এর নতুন মাত্রা যোগ করছেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের হোটেল মালিক সংগঠন। ‘বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষেধ’ এমন বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে- শিলিগুড়ি, মালদহ ও কোচবিহারের হোটেলে হোটেলে।
তাদের দাবি, বাংলাদেশি অতিথিরা থাকতে পারবেন না পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলার হোটেলে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে নাকি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তরবঙ্গের তিন জেলার হোটেল কর্তৃপক্ষ। এই পোস্টার লাগানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে বিষয়টি ‘ঠিক’ চোখে দেখেননি। তারা বলছেন, বাংলাদেশে যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে নিন্দনীয়। অপরাধীদের কড়া সাজা হোক, কিন্তু তারপরও এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এর সঙ্গে ভারতের কোনও যোগসূত্র থাকতে পারে না। অথচ আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘুদের মারধর এমনকি হত্যাও করা হচ্ছে। অতীতেও বিভিন্ন দাঙ্গায় এদেশের মুসলমানদের নির্বিচারে নিধন করা হয়েছে। সেসব ঘটনায় যদি হোটেল কর্তৃপক্ষগুলো সামান্যতম প্রতিবাদে শামিল হতো, তাও বিষয়টা মানানসই হতো।
মালদহের হোটেলগুলোর দরজা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বন্ধ হতে চলেছে, এমন খবর বৃহস্পতিবার সামনে আসে। এতদিন মেডিক্যাল ভিসা বা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যেসব বাংলাদেশি পশ্চিমবঙ্গে আসতেন, তাদের অনেকে মালদহের বিভিন্ন হোটেলে উঠতেন। তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ‘মালদহ হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী জানান, আপাতত জেলার কোনও হোটেলে বাংলাদেশি অতিথিদের থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না। তার বক্তব্য, যেহেতু বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ও ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে, তাই আমরাও হোটেলে ঘর দেওয়া বন্ধ করেছি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে অনেকে এই যুক্তি মানতে নারাজ। একাংশের দাবি, চরম বাংলাদেশ বিদ্বেষ থেকে হোটেলে ঘর দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোটেল মালিকরা।
একই অবস্থান নিয়েছেন কোচবিহারের হোটেল মালিকরাও। ‘কোচবিহার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জানিয়েছে, ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হোটেল পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ভূষণ সিংহ বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারত বিরোধী মন্তব্য ও হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংগঠনের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ শিলিগুড়িতেও হোটেলগুলোর দেওয়ালে ‘বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষেধ’ নোটিশ সাঁটানো হচ্ছে।
উল্লেখ, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসেই ‘শিলিগুড়ি হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের আওতাধীন হোটেলগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জায়গা দেওয়া হবে না। যদিও চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু ছাড় ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেই ছাড়ও প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংগঠনের সহ-সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ জানান, শিলিগুড়িতে সংগঠনের আওতাধীন ১৮০টি হোটেলেই এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, এটি হোটেল মালিকদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।