ইসরাইলের অতিউগ্রপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ২.৭ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ দিয়েছেন। দেশটির গণমাধ্যম এ উদ্যোগকে “কার্যত সংযোজন” বা ডি-ফ্যাক্টো অ্যানেক্সেশন হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইয়েদিয়থ আহরোনোথ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বসতি নির্মাণ, সড়ক উন্মুক্তকরণ, নিরাপত্তা জোরদার এবং ভূমির নথি হালনাগাদ করার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বরাদ্দগুলোর একটি।
পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান অংশ হলো ইসরাইলি সেনাবাহিনীর তিনটি ঘাঁটিকে পশ্চিম তীরের উত্তরাংশে সরিয়ে নেওয়া, যা পত্রিকাটির মতে “বড় পদক্ষেপ” হিসেবে বিবেচিত।
পত্রিকাটি জানায়, “বিলিয়ন শেকেল বরাদ্দের লক্ষ্য হলো বসতিগুলোকে নতুন করে গঠন করা।” এতে সামরিক ঘাঁটি স্থানান্তর, নতুন কয়েক ডজন বসতির জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, প্রবেশ সড়ক তৈরি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ অন্তর্ভুক্ত।
নতুন বসতি গড়তে ‘অ্যাবসরপশন ক্লাস্টার’
পরিকল্পনায় ২০টি মোবাইল হোম নিয়ে প্রতিটি ‘অ্যাবসরপশন ক্লাস্টার’ গঠন করা হবে, যেখানে অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা সরাসরি গিয়ে নতুন বসতির মূল কাঠামো স্থাপন করতে পারবে।
নতুন বসতির জন্য ৩০০ মিলিয়ন শেকেল বরাদ্দ করা হয়েছে—এর মধ্যে ১৬০ মিলিয়ন শেকেল স্থাপন অনুদান এবং ১৪০ মিলিয়ন শেকেল সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য।
বিদ্যমান বসতিগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে ৪৩৪ মিলিয়ন শেকেল বরাদ্দ থাকবে, এবং আঞ্চলিক ও স্থানীয় বসতি কাউন্সিলগুলোর জন্য আরও ৩০০ মিলিয়ন শেকেল বরাদ্দ করা হয়েছে।
ডি-ফ্যাক্টো অ্যানেক্সেশনের পথে
পরিকল্পনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো ২২৫ মিলিয়ন শেকেল ব্যয়ে একটি ভূমি–নিবন্ধন ইউনিট গঠন, যা পশ্চিম তীরের জমিগুলোকে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক ভূমি নিবন্ধনে অন্তর্ভুক্ত করবে।
এর আগে জমি কেনাবেচার নথি ইসরাইলি সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নথিভুক্ত হতো, কিন্তু নতুন পরিকল্পনায় একটি পৃথক পশ্চিম তীর নিবন্ধন ব্যবস্থা তৈরি করা হবে।
এই ইউনিটে ৪১ জন কর্মী থাকবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৬০,০০০ দুনাম জমির নথি বৈধ করার লক্ষ্য রয়েছে।
নিরাপত্তা ও পরিবহন খাতে অতিরিক্ত অর্থ
পরিকল্পনায় ১৪০ মিলিয়ন শেকেল বরাদ্দ করা হয়েছে সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য নতুন প্রবেশ সড়ক নির্মাণে, এবং পশ্চিম তীরজুড়ে সাঁজোয়া স্কুল বাস আধুনিকীকরণে তিন বছরে ১৫০ মিলিয়ন শেকেল ব্যয় করা হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল ক্যাটজ বসতি–নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত তহবিল দেবেন, যার মধ্যে “স্মার্ট ফেন্স, সরঞ্জাম কেন্দ্র, ক্যামেরা ও অন্যান্য সিস্টেম” অন্তর্ভুক্ত।
ইয়েদিয়থ আহরোনোথ বলেছে, এই পরিকল্পনা “পশ্চিম তীরে ইসরাইলের নীতি সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করবে এবং ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর জন্য তা প্রত্যাহার করা কঠিন করে তুলবে।”
স্মোত্রিচের উগ্র অবস্থান
সোমবার সামাজিকমাধ্যমে স্মোত্রিচ লেখেন, “জুডিয়া ও সামারিয়া (পশ্চিম তীর) ইসরাইলের নিরাপত্তার বেল্ট।” তিনি দাবি করেন, তিনি এমন একটি ‘বিপ্লব’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন যা “ভূখণ্ড ভাগ করে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গঠন” করার ধারণাকে বাতিল করে দিচ্ছে।
স্মোত্রিচ বহুবার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঠেকানোর অঙ্গীকার করেছেন এবং এর আগে তিনি পশ্চিম তীরের ৮২% অংশ ইসরাইলে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরাইলি মানবাধিকার সংগঠন পিস নাও–এর হিসেবে প্রায় ৫ লাখ অবৈধ বসতিস্থাপনকারী পশ্চিম তীরের বসতিতে বসবাস করে এবং আরও ২.৫ লাখ পূর্ব জেরুজালেমে।
গত বছরের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক আদালত ঐতিহাসিক রায়ে ঘোষণা করে যে ইসরাইলের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল বেআইনি এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সব বসতি উচ্ছেদ করতে হবে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
এসআর