হোম > বিশ্ব

কেন অস্ত্রের পেছনে ছুটছে ইউরোপ

দ্য ইকোনোমিস্টের বিশ্লেষণ

আমার দেশ অনলাইন

রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক আগ্রাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত নীতির কারণে ইউরোপের নিরাপত্তা সংকট দ্রুত বাড়ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর পুরো মহাদেশ উপলব্ধি করছে যে দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা-ভরসা যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা আর নিরাপদ নয়। ফলে ইউরোপজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সামরিক শক্তিবৃদ্ধি ও অভূতপূর্ব অস্ত্র কেনার প্রতিযোগিতা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বছর চালু করেছে ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর ‘সিকিউরিটি অ্যাকশন ফর ইউরোপ’ (SAFE) প্রতিরক্ষা তহবিল, যা সদস্য দেশগুলোকে কম সুদে সামরিক বিনিয়োগে সহায়তা দেয়। সময়সীমা শেষ হলে দেখা যায়, ২৭ দেশের মধ্যে ১৯টিই ঋণের জন্য আবেদন করেছে এবং পুরো তহবিল পূর্ণ হয়ে গেছে। পোল্যান্ড একাই ৪৩.৭ বিলিয়ন ইউরোর আবেদন করেছে, যা আতঙ্কের মাত্রা স্পষ্ট করে।

SAFE ছাড়াও ইউরোপ প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে চালু করেছে ‘ন্যাশনাল এসকেপ ক্লজ’ (NEC), যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আগামী চার বছরে জিডিপির অতিরিক্ত ১.৫ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করতে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে জার্মানিসহ ১৬টি দেশ এতে যুক্ত হয়েছে। এটি সক্রিয় হলে ইউরোপে আরও ৬৫০ বিলিয়ন ইউরো প্রতিরক্ষা ব্যয় যোগ হবে। পাশাপাশি ন্যাটো সদস্যরা ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ৩.৫ শতাংশে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন এখন ইউরোপের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। পেন্টাগনের ‘গ্লোবাল পোসচার রিভিউ’ ইউরোপে সেনা উপস্থিতি কমানোর সুপারিশ করতে পারে। ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের খরচ ইউরোপকে বহন করতে বলায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ট্রাম্পের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাও ইউরোপের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।

লন্ডনভিত্তিক থিংক-ট্যাঙ্ক IISS সতর্ক করেছে, রাশিয়া যুদ্ধ–অর্থনীতি গড়ে তোলায় ২০২৭ সালের মধ্যেই ইউরোপের জন্য প্রত্যক্ষ সামরিক হুমকি তৈরি হতে পারে। সংস্থার মতে, ক্রয়ক্ষমতার হিসেবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় খুব শিগগিরই ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যদের মোট ব্যয় ছুঁয়ে ফেলতে পারে। ইউক্রেনের প্রতিরোধ ইউরোপকে যে প্রস্তুতির সময় দিয়েছে, যুদ্ধ শেষ হলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে সংস্থাটি মনে করছে।

যুদ্ধ-সংকটে ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে নির্ভরশীল—আকাশ গোয়েন্দা, দূরপাল্লার হামলা, কৌশলগত পরিবহন, ক্লাউড সক্ষমতা—এসবই যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহে পরিচালিত হয়। IISS-এর হিসাব অনুযায়ী, এসব সক্ষমতা ইউরোপকে একা দাঁড় করাতে খরচ হবে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার। সাবেক ন্যাটো কর্মকর্তা কামিল গ্রাঁর মতে, এখন তিনটি কাজ জরুরি: ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী সহায়তা দেওয়া, সমন্বিত ইউরোপীয় আকাশ প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা এবং মার্কিন সামরিক সক্ষমতার বিকল্প উন্নয়ন।

কিন্তু সবচেয়ে বড় বাধা ইউরোপের ধীরগতির সামরিক ক্রয়প্রক্রিয়া ও দুর্বল প্রতিরক্ষা শিল্পভিত্তি। ২০২২ সালের পর প্রতিরক্ষা চুক্তির বেশিরভাগ স্থানীয় শিল্পে গেলেও একটি বড় অংশ মার্কিন F-35 কেনায় ব্যয় হয়েছে। তবুও অস্ত্র উৎপাদন ও সরবরাহে সময় লাগছে দুই থেকে তিন বছর। এমনকি সাত দেশের যৌথ ELSA ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পও ১৮ মাস পর এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি কোন মডেল তৈরি হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপকে এখন শিল্প পর্যায়ে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে হবে এবং প্রযুক্তিগত ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। না হলে রাশিয়ার সম্ভাব্য হুমকি, যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চয়তা, এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি একত্রে ইউরোপকে আরও গভীর নিরাপত্তা সংকটে ঠেলে দেবে।

ট্রাম্পের নীতি ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর কৌশল

অসময়ে কেন এশিয়াজুড়ে বন্যা

কারাগার থেকে বেরিয়ে ইমরান খান সম্পর্কে যা জানালেন তার বোন

যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে হত্যা ২০ বছরে সর্বনিম্ন

যে কারণে কর্মী ছাঁটাই–বাজেট কমানোর ঘোষণা দিলো জাতিসংঘ

‘ইসরাইলি সম্প্রসারণবাদ সবচেয়ে বড় হুমকি’

ভারতের পাশ থেকে কেন দূরে সরে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো

ক্ষমার নিশ্চয়তায় দেশ ছাড়তে রাজি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট

শ্রীলঙ্কায় বন্যা–ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৪১০, নিখোঁজ ৩৩৬

নেতানিয়াহুর ক্ষমা প্রার্থনা, তিন জটিলতায় ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট