রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাণীবহ ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের করদের বাগান বাড়িতে শতশত পাখি দেখতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। দূরদূরান্ত থেকে দল বেঁধে আসা পাখিরা বাসা বেঁধেছে বিশাল বাগানের মগডালগুলোতে। জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বিল ও কৃষিজমিতে ঘেরা এ অঞ্চল সবুজে আচ্ছন্ন। করবাড়িতে তিনটি পরিবারের একসঙ্গে বসবাস। এদের বিত্তের বৈভব না থাকলেও বৃক্ষপ্রেম চোখে পড়ার মতো। বাড়ির মালিক উত্তম কর জানালেন, তিন শরিকের বাড়ির চারপাশে রয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ বিঘার মতো জমি। এর মধ্যে পুকুর ও বাগান আছে। আছে মেহগনি ও শিশু গাছ। ফলের গাছও আছে কিছু। তবে পাখিদের বাসা মেহগনি ও শিশুগাছের উঁচু ডালে।
প্রথমদিকে পাখির সংখ্যা কম ছিল। শীত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এদের মধ্যে লম্বাগলা সাদা রঙের শামুকখোল পাখি, সারস, মেছো বক, বেলেহাঁস ও বাঁদুর রয়েছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা সাদা পাখিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় বাগান। পাখির ডাক ও শব্দে এক ধরনের নৈসর্গিক আবহ তৈরি হয়। মনে হয় এটি পাখির রাজ্য। ডিমের খোসা আর পাখির বিষ্ঠার কারণে বাগানে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে, জানালেন ওই বাড়ি মেয়ে মৌসুমী কর। প্রথমদিকে কিছু শিকারি পাখি শিকার করেছে বলে জানালেন বাড়ির লোকেরা। বাধা দিলে শুনত না। এখন এলাকাবাসী জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করায় ওই শিকারিরা আর আসে না।
এরই মধ্যে বন বিভাগ, পশু সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় তারা সাড়া দিয়েছে পাখি রক্ষায়। এ জনপদটি পরিচিতি পেয়েছে করবাড়ির পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীরা ভিড় করে। বিশেষ করে বিকালে নারী-পুরুষ দল বেঁধে দেখতে আসে। পাখিদের ওড়াউড়ির ছবি তুলতে গেলে ঝাঁক ধরে পাখিরা একপাশ থেকে আরেক পাশে চলে যায়। ফলে পাখিদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়। দূরত্বের কারণে ও মগডালে পাখি থাকায় শুরু হয়েছে ড্রোন ব্যবহার করে পাখির ছবি তোলা। ড্রোনের শব্দে এরা এলাকা ত্যাগ করতে পারে—এমন আশঙ্কা পাখি বিশেষজ্ঞদের। কিছু পাখি স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধেছে। ডিম ফোটাচ্ছে। পাখির ডিমের আকার হাঁসের ডিমের মতো।
বাড়ির মালিক উত্তম কর জানালেন, কিছু সমস্যার কথা। পাখির বিষ্ঠার কারণে তার পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে। একই কারণে গাছের পাতা ফ্যাকাসে ও শীর্ণ হয়ে ঝরে পড়ছে। বিষয়টি বন বিভাগকে তিনি বলেছেন। তবে পাখি আশ্রয়ের ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।
দেশের বিখ্যাত পাখিবিদ আল্লামা শিবলী সাদিক আমার দেশকে জানালেন, এরা অতিথি, তবে দেশের বৃহৎ কোনো জলাশয় থেকে আসে। বেশিসংখ্যক পাখিই পরিযায়ী। বিশেষ করে ডিম ও বাচ্চা ফোটানোর জন্য বিল এলাকার কাছাকাছি বাগানে এরা বাসা বাঁধে। বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে এলাকা পরিবর্তন করে। মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এরা ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। বিল বা হাওর এলাকা বেছে নেয় বাচ্চা পাখিদের শামুক খাওয়ানোর জন্য। তবে মা পাখিরা সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি খেয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, ড্রোন ব্যবহার করে ছবি তুললে পাখিদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি হবে। এভাবে তাদের বিরক্ত করলে আগামী বছর তারা এ গ্রামে নাও থাকতে পারে। আর পাখি সংরক্ষণ আইনে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ও দণ্ডণীয় অপরাধ। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে তারা ব্যবস্থা নেবে।


রোববার লন্ডনে নেয়া হতে পারে খালেদা জিয়াকে
সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ আ. লীগ নেতার