সাঘাটায় ১১ ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই তবুও মিলেছে বিদ্যুৎ সংযোগ

মিজানুর রহমান রাঙ্গা, সাঘাটা (গাইবান্ধা)
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৩

গাইবান্ধার সাঘাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ১১ টি ইটভাটা। গ্রামের পরিবেশ দূষিত করে ভাটাগুলোতে চলছে ইট পোড়ানোর ধুম। অভিযোগ উঠেছে, গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) স্থানীয় বোনারপাড়া জোনাল অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে চলছে ভাটার কার্যক্রম। গ্রামের ঘনবসতি ও ফসলি জমির মাঝে ঘড়ে তোলা ইটভাটা গুলো মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটার চিমনি থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। চিকিৎসকদের মতে, এসব ধোঁয়া ও ধূলিকণা বায়ুদূষণ বাড়িয়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখ জ্বালাপোড়াসহ নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে।

বিজ্ঞাপন

সাঘাটা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এসব ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও কয়লা ব্যবহারের ফলে আশপাশের বনজ গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের জমি ও মাটির উর্বরতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাটার ধোঁয়ায় নির্গত কার্বন ডাই—অক্সাইড ও সালফার ডাই—অক্সাইডসহ ক্ষতিকর গ্যাসগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও দায়ী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন ভাটাগুলোতে অসাধু উপায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এসব ভাটার নামে মিটার নম্বর দিয়ে নিয়মিত বিল কাগজ সরবরাহ করছে বোনারপাড়া জোনাল অফিস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক জানান, সংযোগ নিতে গেলে কিছু খরচ করতেই হয়, না দিলে কাজ হয় না।

উপজেলার কয়েকজন ভাটা মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করেই ভাটা চালাতে হচ্ছে। স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষক অমিত রায়হান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় এসব অবৈধ ইটভাটা দ্রুত বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এদিকে কচুয়া ইউনিয়নের বড়াইকান্দি ও ভন্নতের মোর এলাকায় ৩টি ইটভাটা পাশাপাশি থাকায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত করছে। ওই এলাকার ফসলের জমির আবাদ লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। ইটভাটার কালো ধোয়ায় গ্রামের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ইটভাটাগুলোতে পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকলেও বিদ্যুতের সংযোগে দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনকে ম্যানেজ করেই এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকা বাসীর।

এ বিষয়ে বোনারপাড়া পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জালাল উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে সময় এসব ভাটায় সংযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন আমি এখানে ছিলাম না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাইবান্ধা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। অচিরেই আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, অচিরেই অবৈধ ও পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। কেউ রেহাই পাবে না।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত