আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় এবং একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় কমাতে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন ভাতার ২০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঁচ ব্যাংকের প্রশাসকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানান গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর।
একীভূত হতে চলা পাঁচ ব্যাংক হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। ভয়াবহ তারল্য সংকটের কারণে এসব ব্যাংককর্মীদের বেতন ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তীব্র তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমানতকারী, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও নিজস্ব কর্মীদের পাওনা পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রশাসকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চান। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরি প্রয়োজনের ভিত্তিতে আমানতকারী, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিল এবং কর্মীদের বেতন ভাতা বাবদ ৩২৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। এই অর্থ নতুন গঠিত ব্যাংকের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে সমন্বয় করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, “আমানতকারীদের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গভর্নর বেতন ভাতার ২০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।”
বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর জমা আছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা—অর্থাৎ ৭৬ শতাংশ খেলাপি।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের হার ইউনিয়ন ব্যাংকে ৯৮ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২.৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮.২০ শতাংশ ঋণ খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। এসব ব্যাংকে মোট জনবল প্রায় ১৫ হাজার।
দেশজুড়ে এই পাঁচ ব্যাংকের রয়েছে ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ও ৯৭৫টি এটিএম বুথ।
গত সরকারের আমলে নানা অনিয়ম–দুর্নীতির কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তারা আমানতকারীদের চাহিদামতো টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমান সরকার ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নেয়। চলতি মাসের শুরুতে পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং এমডিরা পদত্যাগ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত প্রশাসকরাই এসব ব্যাংকের দায়িত্বে রয়েছেন এবং একীভূতকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
জানা গেছে, পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে পরিচালনার জন্য ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে শরিয়াহভিত্তিক নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক প্রাথমিক লাইসেন্স পেয়েছে। এ ব্যাংকের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগানের প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন ব্যাংকের হিসাব খোলা হলে অর্থ বিভাগ সেই হিসাবে অর্থ ছাড় করবে।

