বিসিসিতে ফিরছে স্বস্তি

রাজস্ব আয় বেড়েছে ৪ গুণ, বন্ধ হয়েছে ভৌতিক বিল

নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ১০: ৩১

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে ঋণের দায়ে ডুবতে বসা বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ছে প্রায় চারগুণ। বন্ধ হয়েছে লুটপাট, স্বজনপ্রীতি ও ভৌতিক বিল।

মেয়র আবুল খায়েরকে ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট বরখাস্ত করার পর বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কায়সারকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর এরপর থেকেই গতি ফিরেছে বিসিসিতে বলছেন নগরবাসী। দ্রুত সময়ের মধ্যে নগরবাসী পাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা।

বিজ্ঞাপন

বিসিসি সূত্র জানায়, ২০০২ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। ২০১৮ সালে বিনা ভোটের নির্বাচনে মেয়র হন শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ। মেয়র হয়েই বিসিসিকে নিজের সম্পত্তিতে পরিণত করেছিলেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নির্ধারিত পার্সেন্টেজের বিনিময়ে নিজের লোকজনের মাধ্যমে বিসিসির ঠিকাদারি কাজ করাতেন। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দলীয়করণ ও খেয়াল খুশিমতো কর ধার্য করতেন।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের নির্বাচনে সাদিকের আপন ছোট চাচা খোকন সেরনিয়াবাদ মেয়র হয়ে একই পথে হাঁটতে শুরু করেন। আয়ের তুলনায় ভৌতিক ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। যে কারণে ৩৮৫ কোটি টাকার দেনার ভারে মুখ থুবড়ে পড়ে। মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে সিটি করপোরেশনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বিসিসির সামনে ময়লার ট্রাক রেখে আন্দোলন করতে হয়েছে কর্মচারীদের।

বিসিসির দায়িত্ব গ্রহণ করে রায়হান কায়সার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বকেয়া সিপিএফ বাবদ তিন কোটি ৪৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭০৬ টাকা পরিশোধ করেছেন। বিসিসির অভ্যন্তরীণ আয় থেকেই এ বকেয়া টাকা দেওয়া হয়। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যেমন চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে তেমনি কাজেরও গতি বেড়েছে।

ঠিকাদার মাহাবুবুর রহমান পিন্টু বলেন, বিগত দিনে এখানে লুটপাট, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসক লুটপাট ও ভৌতিক বিল বন্ধ করেছেন। যে কারণে বিসিসির আয় চারগুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসক নিজে মাঠে গিয়ে কাজের তদারকি করছেন। এতে করে কাজের মান যেমন উন্নত হচ্ছে তেমনি বিসিসির কর্মকর্তারা অনিয়ম করতে সাহস পাচ্ছেন না। সঠিকভাবেই তারা কাজ বুঝে নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে বিসিসি সব দায়-দেনা পরিশোধ করে আগামী দিনে স্বয়ংসম্পূর্ণ সিটি করপোরেশনে পরিণত হবে।

প্রশাসক রায়হান কায়সার বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন অসংগতি চিহ্নিত করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যে কারণে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় চারগুণ। ৩৮৫ কোটি টাকার দেনার দায় নিয়ে হাল ধরেছেন। পাশাপাশি সবকিছু ঠিক রেখেই বিপুল অঙ্কের ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। আগে যেখানে বকেয়ার জন্য বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে এখন নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। নগরবাসীকে যথাযথ সেবা প্রদান ও নগরীর উন্নয়নে সরকারের দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত