মহিপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন, নেই প্রশাসনের নজরদারি

প্রতিনিধি, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬

পটুয়াখালীর মহিপুর-আলিপুর মৎস্য বন্দর এখন জাটকা ইলিশে সয়লাব। প্রতিদিন এখানে প্রায় অর্ধকোটি টাকার জাটকা কেনাবেচা হচ্ছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্যের ইলিশ (জাটকা) ধরা, পরিবহন, বিক্রি, মজুত ও বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ-২০২৫ এবং মৎস্য সুরক্ষা বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ—বন্দরে নিষেধাজ্ঞার বাস্তব প্রয়োগ কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্দরের প্রায় সব আড়তেই জাটকা ইলিশের স্তূপ জমে আছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দেদারসে বেচাকেনা। প্রশাসনের অভিযান মূলত মহাসড়ক ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ। নৌ-পুলিশ, কোস্ট-গার্ড ও উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে সড়কে ট্রাক আটকে জাটকা জব্দ করলেও বন্দর এলাকায় দৃশ্যমান কোনো অভিযান নেই।

একাধিক আড়ত শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‌ ‘প্রতিদিন বন্দরে বিপুল পরিমাণ জাটকা ওঠে–বিক্রি হয়। কোস্ট-গার্ড মাঝে মাঝে মহাসড়কে অভিযান চালায়, কিন্তু বন্দর এলাকার ভেতরে আসে না। ফলে ব্যবসা থেমে থাকে না।’

মহিপুর-আলিপুরের কয়েকজন জেলে জানান, সাগরে এখন বড় ইলিশ তুলনামূলক কম। জাল ফেললেই জাটকা ধরা পড়ে। তাই তারা বাধ্য হয়েই জাটকা ধরেন। এছাড়া সংসার, বাচ্চাদের খরচ—বিকল্প আয় না থাকায় অন্য কোনো উপায় থাকে না। সরকার যদি এই নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের জন্য টেকসই জীবিকা বা সহায়তার ব্যবস্থা করতেন, তাহলে জাটকা ধরার প্রয়োজন হতো না।

মো. কাওসার নামে স্থানীয় এক চালানি আড়ৎদার বলেন, ‘এ দায় শুধু জেলে বা ব্যবসায়ীদের নয়। বাজারে চাহিদা আছে বলেই জাটকা বিক্রি হয়। প্রশাসন চেষ্টা করছে ঠিকই, কিন্তু পুরো বন্দর এলাকা একসাথে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

তবে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন বলেন, ‘আমরা সড়কে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। খুব শিগগিরই বন্দর এলাকার ভেতরেও অভিযান জোরদার করা হবে।’

কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসীন সাদেক বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি জাটকা বিরোধী অভিযান চালিয়েছি। জব্দ করা মাছ এতিমখানা ও মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি—শুধু মহাসড়কে নয়, মূল বন্দর এলাকাতেও নিয়মিত ও সমন্বিত অভিযান চালানো না হলে নিষেধাজ্ঞার সুফল মিলবে না এবং ভবিষ্যতে ইলিশের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

গাজায় মৃত ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে, ধ্বংসস্তূপে এখনো লাশ

১৫ দিনে আফগানিস্তানে ফিরেছে দেড় লাখ শরণার্থী, নেপথ্যে কী

হিন্দুস্তান টাইমসকে হাসিনা: অভ্যুত্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্যের ভু'ল ছিল

গণহত্যা ঢাকতে চ্যাটজিপিটি-গির্জা, কোটি ডলারের খেলা

তরুণরা সজাগ থাকলে আর কোনো শাসক ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারবে না

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত