হামলার পর ঠিকাদারকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা বিএনপি নেতাকর্মীর

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্থানীয় এক ঠিকাদারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় সেখানে ভাঙচুর ও ঠিকাদারকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয় বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন। হামলাকারীদের রামদার কোপে ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।

গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরএনপিএল) কয়লা খালাসের জেটিঘাটে শ্রমিক সরবরাহ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঠিকাদার শাহীন মৃধার প্রতিষ্ঠানে এ হামলা হয়। শাহীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে শ্রমিকসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করার কাজে যুক্ত।

আহতদের মধ্যে আছেন স্থানীয় বাসিন্দা দোলন মৃধা, মিরাজ হোসেন এবং শাহীনের গাড়িচালক রানা। তারা পার্শ্ববর্তী উপজেলা আমতলীতে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, হামলায় নেতৃত্ব দেন কলাপাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কাজল তালুকদার। তার সঙ্গে ছিলেন ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ তালুকদার, বিএনপি নেতা বশির মৃধা, হানিফ মেম্বারসহ তাদের অনুসারীরা। এ ছাড়া হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিনকে দায়ী করছেন শাহীন ও তার পরিবারের সদস্যরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলে করে অস্ত্রসহ মরিচবুনিয়া এলাকায় যান কামরুজ্জামানসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা শাহীনের শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, তার বসতঘর ও শ্রমিকদের বসবাসের ছাউনি রয়েছে। হামলাকারীরা এগুলো ভাঙচুর করেন। এ সময় কয়েকজন শাহীনকে তার ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি ঘরের কোনার একটি টিন খুলে বের হয়ে আত্মরক্ষা করেন। তবে আগুনে ঘরে থাকা দুটি এসি, টিভি, ১০টি সিসি ক্যামেরা, দুটি ফ্রিজ, খাট, তিনটি সোফাসেটসহ অন্যান্য আসবাব ও ডাম্পট্রাক পুড়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগুনের খবর পেয়ে কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট রওনা হলে পথে ছয় লেন সড়ক এলাকায় গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। শেষে সেনাবাহিনীর একটি দল ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

শাহীন অভিযোগ করে বলেন, ‘স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে এ হামলা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে আমার কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। একপর্যায়ে তাতে আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করেছে। এমনকি আমার ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। আমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে হামলাকারী চক্রটি আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি বের হতে না পারলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। হামলায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এমন জাহেলি কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায্যবিচার চাই।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও শাহীনের ভাই রুবেল মৃধা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা মোশাররফ মিয়া পরিকল্পিতভাবে তার লোকজন দিয়ে আমার ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। কাজল তালুকদার মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে হামলা চালিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন ফিরোজ তালুকদার, হানিফ মেম্বার, বশির মৃধাসহ স্থানীয় ছাত্রদল ও বিএনপি নেতারা। আমরা বিএনপি পরিবারের সন্তান কিন্তু তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা আওয়ামী লীগের সময়ও হয়নি।’

রুবেল আরো বলেন, ‘কয়লার ঘাট থেকে মোশাররফ মিয়াকে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দিতাম। মহসিনের (স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা) ভাগনে লিওনকে দিয়ে তিনি টাকা নিতেন। ঢাকায় গিয়েও দিয়ে আসতাম। জাহাজ এলেই তাকে টাকা দেওয়া লাগে। এখন তিনি মহসিনের নামে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) বানিয়ে আমাদের সরিয়ে দিতে চান। হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

জানতে চাইলে মহসিন বলেন, ‘আসলে শাহীন মৃধা আওয়ামী লীগের লোক। তার সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানের সুসম্পর্ক ছিল। সে নিজে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এলাকার মানুষজন এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ করে আসছে। তা ছাড়া আমি আরএনপিএল নামে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ পেয়েছি। এতে শাহীন মৃধা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এমনকি আমার শ্রমিকদের পণ্য সরবরাহে বাধা দিয়েছেন। এসব নিয়ে শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।’

হামলার বিষয়ে মহসিন বলেন, ‘আমি এলাকায় থাকি না, ঢাকায় বসবাস করি। এখন ওই এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা আমি জানি না। আমাকে নিয়ে কোনো কথা বলে থাকলে তা উদ্দেশ্যমূলক। আমি এর সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই।’

একই দাবি করে বিএনপি নেতা মোশাররফ বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি শাহীন মৃধার নিজের ওয়ার্ক অর্ডার নেই। আর এ বিষয়ে (হামলা) আমি কিছু জানি না। তবে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।’

এদিকে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এ বিষয়ে অবগত নই। আমি সেখানে যাইনি।’

কলাপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির পাশের স্থাপনায় চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসী হামলা, তাণ্ডব ও নাশকতা চালায়। সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।