ইলিশ সংকটে ৩৬ হাজার জেলের জীবিকা হুমকির মুখে

মো. আল-আমিন, শরীয়তপুর
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৪

পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ সংকটে ৩৬ হাজার জেলের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এসব জেলে পরিবারের সদস্যরা অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতাও তাদের ভাগ্যে জুটছে না ।

জানা গেছে, শরীয়তপুরের নদীপাড়ে একসময় ছিল সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা-মেঘনার বুকজুড়ে নৌকা ও জেলের চিৎকার। জাল ফেললেই ঝিকমিক করে উঠত রুপালি ইলিশ। গ্রামের মানুষ, জেলে, ব্যবসায়ী সবার মুখে হেসে ওঠত আশার আলো। কিন্তু আজ সেই দৃশ্য কেবলই স্মৃতি। পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের অনুপস্থিতি যেন নদীর হৃদয়কেও শূন্য করে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরা পেশার সঙ্গে জড়িত। সরকারি তথ্যমতে জেলায় ছয়টি উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৩৫ হাজার ২৭৪ জন। জেলার পদ্মা ও মেঘনা নদীতে বিগত দিনে ইলিশের ভরা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ইলিশ আহরণ করা সম্ভব হতো।

তিন বছর আগে জেলায় ইলিশের উৎপাদন ছিল চার হাজার ৫২৮ টন। আর তিন বছরের ব্যবধানে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার এক টনে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তন, দখল, দূষণ, নদীতে ডুবোচর জেগে উঠায় দিন দিন ব্যাহত হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন। ফলে এসব নদ-নদীতে এখন আর আগের মতো ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের কুচাইপট্টি, কোদালপুর, ভেদরগঞ্জের সখিপুর, নরসিংহপুর, কাঁচিকাটা, নড়িয়ার সুরেশ্বর, জাজিরার পালেরচর বাজার ইলিশ বিক্রির জন্য বিখ্যাত। তবে এসব বাজারে এখন আর আগের মতো ইলিশ মিলছে না। অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ইলিশ কিনতে এলেও ফিরে যান শূন্য হাতে। আর যেসব ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে তার দামও বেশ চড়া। ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন বর্তমানে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয় দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া আধা কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়ে থাকে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। কিছু কিছু ছোট ইলিশ আবার হালি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে কোথাও কোথাও। যার মূল্য ৩৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এসব চড়া মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ এখন বঞ্চিত ইলিশের স্বাদ গ্রহণ থেকে। ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার নাগালের মধ্যে আনার দাবি তাদের।

পদ্মা-মেঘনার পাড়ে পরিমল দাস ও তার দশজন সহকর্মী প্রতিদিন সকালে নেমে পড়েন নদীতে। প্রত্যেকেই সঙ্গে নিয়েছেন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দাদন। আশা থাকে, মৌসুমের দিনে ইলিশ ধরা পড়লে সহজেই ঘরে ফিরবে খুশি মনে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। জেলে পরিমল দাস বলেন, ১২ ঘণ্টা নদীতে জাল ফেলে রাখি, তারপরও হাতে আসে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। যা পাই, তা দিয়ে নৌকার খরচও ওঠে না, সংসার চালানো তো দূরের কথা।

পরিমল দাসের মতো হাজারো জেলের দিন কাটে হতাশার মধ্যে। অনেকের সংসারে ঋণের বোঝা, শিশুর শিক্ষা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান—সবই এখন ঝুঁকির মুখে।

আবুল কাশেম মিয়া নামের আরেক জেলে বলেন, ‘আড়তের দেনা, এবার নদীতে কোনো মাছই পাইতাছি না। মাহাজনের দেনা, দোকানের দেনা, তেলের দোকানে দেনা। দেনায় দেনায় জর্জরিত হয়ে গেছি। এখন আমাদের বাঁচার পথ নাই, যদি সরকার সাহায্য না করে’।

ঘাটে মাছ কিনতে আসা আরিফ বলেন, আগে এক হাজার টাকার মধ্যে বড় ইলিশ মাছ কিনতে পারতাম। এখন সেই ইলিশ মাছের দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ চাইলেই ইলিশ কিনে খেতে পারে না। প্রশাসন যদি অভিযানে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় সঠিক ভূমিকা নিতে পারে তাহলে আশা করছি আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।

জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ আড়তদাররাও। পর্যাপ্ত ইলিশ না থাকায় দাম বাড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে। তাই ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের। কাঁচিকাটা আড়তের আড়তদার বাদশা সরদার বলেন, ‘আগে এই মৌসুমে প্রচুর ইলিশ মাছ আড়তে আসত। এখন জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ে না, আড়তেও মাছ আসে না। মাছের প্রচুর দাম। অভিযান সঠিকভাবে না দেওয়ায় দিন দিন মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা চাই ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হোক’।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, দখল, দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করব। তাহলে নদীতে ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া জেলেদের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব’।

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের নেয়া হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের অস্থায়ী কারাগারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত