গুলিবিদ্ধ হয়েও জুলাইযোদ্ধা তালিকায় নেই রাজ্জাক

বাবর আলী, মহেশপুর (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ১৬
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ১২
আব্দুর রাজ্জাক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর সারা দেশে জুলাই যুদ্ধে নিহত ও আহতের তালিকা তৈরি করে নতুন সরকার। মহেশপুরে যাচাই-বাছাই শেষে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে ৩৯ জনের নাম গেজেটে চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখ ভূমিকা রেখে গুলিবিদ্ধ হয়েও জুলাইযোদ্ধা তালিকায় ঠাঁই হয়নি আব্দুর রাজ্জাকের। তিনি পৌর শহরের গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। এদিকে গেটেজের ৩৯ জনের মধ্যে অনেকেই ভুয়া বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়ারা জায়গা পায় জুলাইযোদ্ধা তালিকায়। যে তালিকা নিয়ে সচেতন মহলে রয়েছে নানান গুঞ্জন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট সকালে ঝিনাইদহের মহেশপুরে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। মিছিল রুখতে গুলি ছুড়ে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাকের হাতে ও কোমরের পেছন দিকে দুটি শটগানের গুলি লাগে। তিনিসহ গুলিবিদ্ধরা মহেশপুর হাসপাতালে গিয়ে গুলি বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। সেদিন দুপুরে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে ফ্যাসিস্টমুক্ত হয় স্বাধীন বাংলা।

এরপর জুলাইযোদ্ধা আহতের নামের তালিকা তৈরি শুরু হলে মহেশপুর পৌরসভা থেকে ফরম নিয়ে পূরণ করে সব কাগজপত্রসহ মহেশপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে জমা দেন আব্দুর রাজ্জাক। যাচাই-বাছাই শেষে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে ৩৯ জনের নাম গেজেটে চূড়ান্ত করা হলেও ওই তালিকায় জায়গা হয়নি তার।

মহেশপুর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় শাকিল বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আব্দুর রাজ্জাক হাসপাতালে আসেন। হাতে ও কোমরের পেছন দিকে লাগা দুটি গুলি বের করে দেওয়া হয়। জুলাইযোদ্ধা তালিকায় থাকা আহত অমিত হাসান জানান, আব্দুর রাজ্জাক আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। আন্দোলনের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। মহেশপুর পৌরসভার কর্মচারী মজনু জানান, হাসপাতালের রেজিস্ট্রারের ৪৮নং ক্রমিকে আব্দুর রাজ্জাকের নাম থাকায় আমার কাছে ফরম দেওয়া হয়েছিল। ফরমটি পূরণ করে জমা দেওয়ার জন্য আমি আব্দুর রাজ্জাকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম।

আব্দুর রাজ্জাক আমার দেশকে বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আমরা কয়েকজন মহেশপুর হাসপাতালে গিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ কেস বলে আমাদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর চিকিৎসকরা আমাদের চিকিৎসাসেবা দেন। হাসপাতালের রেজিস্টারে ৪৮নং ক্রমিকে আহত হিসেবে আমার নাম রয়েছে। মহেশপুর পৌরসভা থেকে জুলাইযোদ্ধার ফরম সংগ্রহ করে সব কাগজপত্রসহ আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে জমা দিই।

এসময় তিনি আমার কাছ থেকে প্রেসক্রিপশনের মূল কপি চেয়ে নেন। কিন্তু আহতদের তালিকা থেকে আমার নামটি বাদ দেওয়া হলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে আমি প্রেসক্রিপশনের মূল কপিটি চাইলে তিনি আর ফেরত দেননি। তিনি দাবি করেন, চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকা ৩৯ জনের অনেকেই ভুয়া। প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে অনেকেই এই সুবিধা নিয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু আমার দেশকে বলেন, ডিসি অফিস থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। তার কাছ থেকে প্রেসক্রিপশনের মূল কপি নেওয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত