শাহজালালের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড

রূপপুর প্রকল্পের সরঞ্জামের ক্ষতি নিয়ে ধোঁয়াশায় কর্তারা

উপজেলা প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৩৪
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৫২

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ার দাবি করা হচ্ছে। বার বার এমন তথ্য জানানো হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না প্রকল্পের বাংলাদেশি ও রাশিয়ান কর্মকর্তারা এবং ঠিকাদার। এমতাবস্থায় ঘটনাটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা ও রহস্য।

শনিবার দুপুরে কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। আকাশপথে বিভিন্ন দেশের আমদানি করা পণ্য রাখার এই গুদামের আগুন প্রায় ২৭ ঘণ্টার চেষ্টায় রোববার নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে যায় কোটি কোটি টাকার পণ্য ও সরঞ্জাম।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে রাশিয়া থেকে আনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছিল বলে দাবি করেছে মমতা ট্রেডিং কোম্পানি নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির কর্মকর্তা সরকার বিপ্লব হোসাইন বলেন, রাশিয়া থেকে সাতটি শিপমেন্টে প্রায় ১৮ টন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এসেছে ছয়দিন আগে। পরমাণু শক্তি কমিশনের এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না পাওয়ায় পণ্যগুলো খালাসে দেরি হয়। রোববার তা খালাস করার কথা ছিল।

রাশিয়ানরা কিছুই জানে না

বিষয়টি জানতে রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক কবির হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় না প্রকাশ না করে প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের চার কর্মকর্তা বলেন, রূপপুর প্রকল্পের অধিকাংশ সরঞ্জাম আসে পানিপথে, কিছু আসে বিমানে। এগুলোর আমদানি ও স্থাপনের দায়িত্ব রাশিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় পণ্য পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এর দায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নয়।

এক কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা রাশিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, এমন কোনো শিপমেন্ট সম্পর্কে তারা অবগত নন। তাছাড়া মমতা ট্রেডিং নামের কোনো প্রতিষ্ঠানকেও তারা কোনো কাজ দেয়নি।’

সাব-কন্ট্রাক্টরদের গোলকধাঁধা

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রাশিয়ার মূল ঠিকাদার ‘রসাটম’ তাদের কাজের সুবিধার্থে স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানকে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। সেই সাব-কন্ট্রাক্টররা আবার অন্য প্রতিষ্ঠানকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়। এতে পণ্য-সরঞ্জাম কোথা থেকে আসছে, কীভাবে আসছে—সব তথ্য সব সময় মূল ঠিকাদার বা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের জানা থাকে না।

সূত্রটির ভাষায়, ‘যদি সত্যিই ১৮ টন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে আসে, তবে রাশিয়ানদের না জানার প্রশ্নই ওঠে না। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে রহস্যজনক এবং বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন।’

রূপপুর প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পে দুটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে।

দুই দফা সময়সীমা বাড়ানোর পর চলতি বছর প্রথম ইউনিট এবং আগামী বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। তবে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি বলছে, প্রথম ইউনিট চালু হতে পারে আগামী বছর, দ্বিতীয়টি তার পরের বছর।

এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে আসলেই রূপপুর প্রকল্পের কোনো সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না—সে প্রশ্নের উত্তর এখনো অন্ধকারেই রয়ে গেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত