ভারতের পাহাড়ি ঢলে পদ্মা বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই

মঈন উদ্দিন, রাজশাহী
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৩৬

ভারতের পাহাড়ি ঢলে প্রমত্তা পদ্মা এখন বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার। যা বিপদসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটারের মাত্র ০ দশমিক ৬৬ মিটারের নিচে। এ কারণে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এড়াতে টি-বাঁধ এলাকায় প্রবেশ ও পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাশাপাশি নদীর পাড় সংলগ্ন ব্যবসায়ী ও দোকানিদেরও স্থানত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে। ওইদিন পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৩৫ মিটার। পরবর্তীতে পানি কিছুটা কমলেও ৩১ জুলাই থেকে আবারও বৃদ্ধি শুরু হয় এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। গত ১০ আগস্ট সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.১৩ মিটার। যা একইদিনের সন্ধ্যায় বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.২২ মিটারে। ১১ আগস্ট সকালে তা হয় ১৭.৩২ মিটার এবং সন্ধ্যায় পৌঁছায় ১৭.৩৯ মিটারে।

পানি বৃদ্ধির ফলে রাজশাহী ও সংলগ্ন বিভিন্ন চরের ওপরের অংশ ডুবে গেছে।

চর খিদিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় চরগুলো তলিয়ে গেছে। আমরা গবাদিপশু ও মালামাল লোকালয়ে নিয়ে এসেছি কিন্তু খাওয়ানোর জন্য এখন গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।

আরেক বাসিন্দা রাকিব জানান, প্রতিদিন নৌকায় করে চরবাসীরা মালামাল সরাচ্ছেন। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছেন। গবাদিপশু সরাতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন, কারণ চর এলাকায় এখনও বহু পশু রয়ে গেছে।

পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সহিদুল ইসলাম বলেন, অনেকের বাড়ির কাছে পানি পৌঁছে গেছে। চর ছেড়ে লোকালয়ে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তবে গবাদিপশু নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা নদীতে পানির সঙ্গে ভেসে আসছে কুচুরিপানা। সেই কুচুরিপানগুলো উজান থেকে স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসছে। পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা ছোট চরগুলোতে পানি উঠেছে। যদিও বা এই চরগুলোতে মানুষের বসবাস নেই। তবে গবাদিপশুর বিচরণ রয়েছে।

পদ্মাপাড়ের বুলনপুর এলাকার সাদেক আলী মাস্টার বলেন, বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বাড়ে। তখন কুচুরিপানা ভেসে আসে। বছরের অন্য কোন সময় এভাবে কুচুরিপানা ভেসে আসে না। শুধুমাত্র বর্ষার শুরুতে নদীতে পানি বাড়লে উজান থাকা কুচুরিপানাগুলো ভেসে আসে। পদ্মার পানি ১৫ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার হলে নদী ভোরে যায়।

রাজশাহী নগরীর পদ্মারপাড়ের মাঝি আমিনুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকে তো নদীতে সাঁতার দিয়েছি ব্যাপক খরস্রোত ছিল শুস্ক মৌসুমে মরা খালে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কার সব কয়টি গেট খুলে দিয়ে ভারতের উঠানের পানি দিয়ে জানমালের প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষতি করে। সরকার আসে সরকার কিন্তু পানি ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না।

গোদাগাড়ী উপজেলার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের মেম্বার জোহরুর ইসলাম জানান, পদ্মা নদীতে প্রতিদিন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে পানি। নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীপাড়ের হাজার হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮.০৫ মিটার। সোমবার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.৩৯ মিটার, যা বিপদসীমার খুব কাছাকাছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত