মসজিদ দখল করতে গিয়ে ধাওয়া খেলেন ওলামা লীগ নেতা

রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ০১: ০৯

রংপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন আমি যুবলীগকে সাথে নিয়ে মসজিদ দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায় আওয়ামী ওলামা লীগের সক্রিয় সদস্য তারাগঞ্জ মেনানগর মসজিদের খতিব আবুল কাশেম। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পালিয়ে যায় খতিবসহ যুবলীগের সদস্যরা। এ ঘটনায় ওই এলাকার চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার ১৩ জুন দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ার কোটি মেনানগর বড় জুম্মা জামে মসজিদে।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ওই এলাকার মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগকারী ও মসজিদের মুসল্লি আজিজুল, মোতালেবসহ এলাকার লোকজন জানান, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হারিয়াড়কুঠি ইউনিয়নের কিশামত মেনানগর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ৫ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে মস‌জিদ ক‌মি‌টির লোকজ‌নের সাম‌নে পদত্যাগ করেন ও পরদিন ৬ জুন মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে নিজেও নিজ পদ থেকে অব‌্যহ‌তির ঘোষণাও দেন।

এরপর ১৩ জুন পদত্যাগের ঘোষণা সত্ত্বেও আওয়ামী ওলামা লীগের নেতা আবুল কাশেম নিষিদ্ধ সংগঠন যুবলীগের সদস্যসহ সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে পুনরায় মসজিদ নেওয়ার জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এসময় কমিটির সদস্যরাসহ এলাকার মুসল্লিরা ঘটনাটি তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যৌথ বা‌হিনীকে জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থানার অফিসার ইনচার্জ এবং যৌথ বাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং খতিব আবুল কাশেমসহ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে বিশৃঙ্খলা না করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন।

স্থানীয় মুসল্লিরা আরো জানান, আওমী ওলামালীগের সদস্য ফ্যাসিস্টদের দোসর আবুল কাশেম দীর্ঘদিন যাবৎ এ মস‌জি‌দে খতিব ও ঈদের মাঠের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় দানশীলদের দেওয়া কোরবানির গরু বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ, ওয়াকফকৃত জমি নিজের দখলে রাখা এবং মসজিদের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করার মতো কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড ও বিভ্রান্তিকর ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন মুসল্লিরা। তাদের দাবি, খতিব আবুল কাশেম নানা ‘মনগড়া’ ফতোয়ার মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছেন।

সবচেয়ে বিতর্কিত অভিযোগের একটি হলো— রংপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডিউক মসজিদে আগমন করলে খতিব মসজিদের মাইক ব্যবহার করে কোরআন তেলাওয়াতের পর ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন এমপির সম্মানে সালমা ও তার দল সংগীত পরিবেশন করা হবে। খতিবের এমন ফতোয়ার বিরুদ্ধে মুসল্লিরা প্রতিবাদ জানালে তিনি উল্টো ফতোয়া দিয়ে বলেন এ ধরনের সংগীত পরিবেশন ইসলাম সম্মত ও জায়েজ। তার এমন কার্যকলা‌পে বর্তমানে এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে খতিব আবুল কাশেমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে, একটি সূত্র জানিয়েছে খ‌তিব আবুল কাশেম দুষ্ট প্রকৃত একজন মানুষ। তিনি জমি জমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে এলাকায় গন্ডগোল হলে তার নিষ্পত্তি না করে লোকজনকে আরো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড করার পরামর্শ দিতেন। নাম না প্রকাশ করার সত্ত্বে একাধিক ব্যক্তি জানান, তিনি আওয়ামী ওলামা লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ইসলামবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল রানা আমার দেশকে জানান, খতিব আবুল কাশেমকে হুঁশিয়ারি করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। বিশৃঙ্খলা ঘটলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত