আওয়ামী লীগ নেতার ৭২ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া

রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৩৪

রংপুরের তারাগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটনের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে তি‌নি এ বকেয়া বিল প‌রি‌শোধ কর‌ছেন না। উল্টো তি‌নি ও তার প্রতিষ্ঠা‌নের কর্মরতরা এ বিলকে ভূতুড়ে বলে দাবি করেছেন। এ অবস্থায় বকেয়া বিল আদায় নিয়ে বিপাকে পড়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের তথ্যানুসারে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিটনের ৩টি প্রতিষ্ঠান এন.এন. কোল্ড স্টোরেজ, মেসার্স সাবেরা অটো রাইচ মিল ও মেসার্স সাবেরা ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারের বকেয়া বিলের পরিমাণ যথাক্রমে ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৮ টাকা, ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩০ টাকা এবং ১৪ লাখ ৬ হাজার ১২১ টাকা করে সর্বমোট ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৯ টাকা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চেয়ারম্যান লিটন ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর তারাগঞ্জ জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষক‌ে কোণঠাসা ক‌রে রাখেন। ফলে বকেয়া বিল আদায়ে সক্ষম ছিল না পল্লী বিদ‌্যুৎ স‌মি‌তি। জুলাই বিপ্লবের পর পল্লী বিদ্যুৎ বকেয়া এ বিল আদায়ে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এরপর থেকেই বিল পরিশোধে গড়িমসি করছেন আওয়ামী লীগের এ নেতা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর তারাগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মোসলেহ্ উদ্দিন বলেন, সা‌বেক এ উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যা‌নের ৩টি প্রতি‌ষ্ঠানের দেড় কো‌টি টাকা বিদ্যুৎ বিল ব‌কেয়া থাকায় লাল নো‌টিস দেওয়া হয়। বিল না দেওয়ায় এন. এন. কোল্ড স্টোরেজ ও সাবেরা অটো রাইচ মিলের সং‌যোগ বি‌চ্ছিন্ন ক‌রা হ‌লে গত ২৬ জুন এন.এন কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা বিদ্যুৎ অফিসে এসে আমাদের লাঞ্ছিত করে। শুধু তাই নয় ইকরচালী উপকেন্দ্রে হামলা, কোল্ড স্টো‌রেজে রাখা আলু মা‌লিক‌দের দি‌য়ে সড়ক অবরোধ করার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারাগঞ্জ থানায় গে‌লে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে স্টোরে রাখা কৃষকদের আলুর কথা বিবেচনা ক‌রে সংযোগ দেওয়ার ব‌্যবস্থা করতে বলেন।

এই কর্মকর্তা আরো জানান, পরে আলোচনা সাপেক্ষে দেড় কোটি টাকার বিপরীতে কমপ‌ক্ষে অর্ধেক অর্থাৎ ৭০ লাখ টাকা বিল প‌রি‌শোধ কর‌তে ব‌লা হলে তারা ৩৫ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে। এরপর ওই আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা লিটনের লোকজন ডিজিএমের বিরুদ্ধে ঘুস নেওয়ায় অভিযোগ দেওয়া শুরু করে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে মোসলেহ্ উদ্দিন আমার দেশকে জানান, জনস্বার্থে কাজ করার জন্য আমি এখানে এসেছি। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো ঘুসের প্রমাণ কেউ দিতে পারে আমি চাকরি ছেড়ে চলে যাব।

বকেয়া বিদ্যুৎ বিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা লিটন আমার দেশকে বলেন, এসব ভূতুড়ে বিল। অন্য প্রতিষ্ঠানের বিল আমার প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া হয়েছে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিজিএম মোসলেহ্ উদ্দিন। তিনি বলেন, কোনো ভূতুড়ে বিল তাদের দেওয়া হয়নি। তা‌দের ব‌্যবহৃত বিদ‌্যুৎ রি‌ডিং অনুযায়‌ী বিলিং শাখা থেকে বিল তৈরি করা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত