উচ্চমূল্যের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ রোববার থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে রোববার (আজ) থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি যেসব আমদানিকারক রপ্তানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন তারাই শুধু আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এদিকে রাজধানীর বাজারে সরবরাহ কমে গত শুক্রবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। গতকাল খুচরা বাজারে পুরোনো পেঁয়াজ কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমে ১৪০ থেকে ১৫০ এবং নতুন পেঁয়াজ ২০ টাকার মতো কমে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের দিনের তুলনায় দাম পড়ে গেছে। যে হারে নতুন পেঁয়াজ বাজারে ঢুকছে তাতে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নামতে পারে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন আমার দেশকে বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের দিনের তুলনায় পুরোনো পেঁয়াজ কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছে। কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমে ৭০ টাকায় নামতে পারে।
একই বাজারের ব্যবসায়ী মোহন বলেন, মেহেরপুর জেলা থেকে হাইব্রিড ও দেশি জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের দিনের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে পুরোনো পেঁয়াজের দামেও। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, এখন দিন দিন কমবে।
তিনি জানান, গতকাল পাইকারি বাজারে দেশি জাতের নতুন পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি এবং হাইব্রিড ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর নতুন পেঁয়াজের প্রভাবে পুরোনো পেঁয়াজের দামও কমে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে খুচরা বাজারেও এর প্রভাবে আগের দিনের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পুরোনো পেঁয়াজ গতকাল কারওয়ান বাজার ও নয়াবাজারে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা আগের দিন ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতির জন্য সিন্ডিকেট করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছিল। কিন্তু কৃষকের হাতের পুরোনো পেঁয়াজ ও মেহেরপুর অঞ্চলের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম পড়ে গেছে।
অন্যদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগেই ঘোষণা দিয়েছে পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা অতিক্রম করলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। এজন্য সিন্ডিকেট করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছিল। বাস্তবে কোনো ঘাটতি নেই। তবে যে হারে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, কৃষকের হাতেও পুরোনো পেঁয়াজ, দুয়েক দিনের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এদিকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দাম বেশি দেখে অনেক কৃষক জমিতে থাকা অপুষ্ট মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনেছেন। এসব পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় সরবরাহ বেড়েছে। এটিও পুরোনো পেঁয়াজের দাম কমার আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ড. জামাল উদ্দীন বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় অনেক কৃষক জমিতে থাকা অপুষ্ট মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনেছেন। এতে উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে ২৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ টন। এখনো এক লাখ ২০ হাজার টনের মতো পুরোনো পেঁয়াজ কৃষকের হাতে রয়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই আরো আড়াই লাখ টন নতুন পেঁয়াজ আসবে।

