দ্রবীভূত অবস্থায় পাচারকালে মাদক কিটামিন জব্দ, গ্রেপ্তার ২

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ০০

ইতালিতে পাচারকালে টাওয়ালের মধ্যে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত (দ্রবীভূত অবস্থায়) ৬.৪৪ কেজি ভয়ংকর মাদক কিটামিন জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চাঁদপুর ও ফরিদপুর থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রোববার ডিএনসির হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

ডিএনসি জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)’র গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন যাবত কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে মাদক পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে। এই গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চালান জব্দ করা হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে, ডিএনসি’র কাছে গোপন তথ্য ছিল যে একটি চক্র আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে দেশের বাইরে মাদক পাচার করছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ টিম টঙ্গীতে অবস্থিত ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে অবস্থান নেয় এবং ফেডেক্স এর সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকা থেকে ইতালীগামী একটি পার্শ্বেল জব্দ করে। গোয়েন্দা তথ্য, পার্সেলের সার্বিক অবস্থা ও অস্বাভাবিক ওজন দেখে সন্দেহ হলে পার্সেলটি পরীক্ষা করে একটি খাকি রংএর কার্টুনের ভিতর পৃথক সাতটি সাদা টাওয়েল পাওয়া যায়।

ঘটনাস্থলেই ডিএনসি’র রাসায়নিক পরীক্ষক দ্বারা টাওয়েলের এর রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করলে টাওয়েল এ দ্রবীভূত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি ভয়াবহ মাদক কিটামিন এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে ডিএনসি’র একটি বিশেষ রেইডিং টিম জব্দকৃত পার্সেলের প্রেরকের ঠিকানা, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, প্রেরক গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে আত্মগোপন করেছেন। এর ভিত্তিতে ঢাকা গোয়েন্দা ইউনিট একটি অভিযান চালিয়ে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর এলাকা থেকে প্রেরক, মো. মাসুদুর রহমান জিলানী (২৮) কে গ্রেপ্তার করে।

পরবর্তীতে আরও তথ্য পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় জব্দকৃত কিটামিন চালান ফরিদপুর জেলার মো. আরিফুর রহমান খোকা (৪৩) এর সঙ্গে যোগসাজশে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। খোকা এই আন্তর্জাতিক চক্রের অন্যতম হোতা।

এরপর তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত রেইডিং টিম ফরিদপুর জেলার সালথা থানাধীন আটঘর বাজার এলাকায় আর একটি অভিযান চালিয়ে মো. আরিফুর রহমান খোকা কে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে দুইটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং একটি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও কুরিয়ারের মাধ্যমে কিটামিন পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।

মানবদেহে কিটামিন–এর ক্ষতিকর প্রভাব

কিটামিন মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ, যা অতীতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে এটি ব্যাপকভাবে মাদক হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে পার্টি ড্রাগ হিসেবে। কিটামিন একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর মাদক, যা স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি ও মূত্রথলির গুরুতর ক্ষতি, মানসিক সমস্যা এবং আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। নিয়মিত সেবনে সহনশীলতা তৈরি হয়ে ডোজ বাড়ানোর প্রবণতা দেখা দেয়, যা জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে।

কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশন–এর ব্যবহার

টাওয়াল বা মোটা কাপড় ব্যবহার করে মাদক পাচার একটি গোপন কৌশল, যেখানে টাওয়ালের ভেতরে গঠন পরিবর্তন করে মাদক লুকানো হয়। কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশনে টাওয়ালকে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকানো হয়, ফলে মাদক ফাইবারে মিশে যায়।

কাপড় বা তোয়ালেটি মাদক শোষণ করলে সেটি দেখতে স্বাভাবিক কাপড়ের মতোই মনে হয়, ফলে এটি সহজে শনাক্ত করা যায় না। পাচারকারীরা পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেস ব্যবহার করে ওই কাপড় থেকে পুনরায় মাদক উত্তোলন করে। এই পদ্ধতি কোকেন, হেরোইন ও কেটামিন পাচারে বেশি ব্যবহৃত হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের নতুন নতুন কৌশল প্রতিরোধে কুরিয়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে সমন্বয় করে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গ্রপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরও একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রেপ্তার দুই আসামির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুসারে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। ডিএনসি’র এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যৎতে অব্যাহত থাকবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত