তাহমিদ আল জুনাইদ
সবুজে ঘেরা গাজীপুরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার এক দীপ্ত প্রহর। এটি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিস্তারের এক নীরব বিপ্লব।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে এবং কলেজভিত্তিক উচ্চশিক্ষাকে সুশৃঙ্খল, মানসম্মত ও কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় ১৯৯২ সালে জাতীয় সংসদের আইন পাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে এটি দেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ, সামরিক বাহিনীর একাডেমিসহ প্রফেশনাল কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির আওতায় আসে।
অবস্থান : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর জেলার বোর্ডবাজার সংলগ্ন এলাকায় ১২ দশমিক ৩৯ একর জায়গার উপর নির্মিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্ব পাশ দিয়ে মহানগরী থেকে চলে আসা মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সংযোগ ঘটেছে। এর দক্ষিণে রয়েছে ওআইসি প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) এবং উত্তরে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। অদূরে উত্তর-পূর্ব পাশে রয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই)। সহজ যাতায়াতব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব পরিমণ্ডল এবং আধুনিক অবকাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছে গবেষণা ও শিক্ষার এক নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র।
প্রথম চ্যান্সেলর : স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী ও তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর, যার ঐকান্তিক আগ্রহ, সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের কলেজগুলোর শিক্ষার অভিভাবকত্ব লাভ করে গণমানুষের এই বিশ্ববিদ্যালয়।
ভাইস চ্যান্সেলর : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এ পর্যন্ত মোট ১২ জন অধ্যাপক উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত হন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল বারী। তার হাত ধরে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকায় নিউ ইস্কাটনের এক ভাড়া বাড়িতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে দ্বাদশতম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. এএসএম আমানুল্লাহ। তিনি দক্ষ নেতৃত্ব, দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কারমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
ভাইস চ্যান্সেলরের বক্তব্য : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত এক বছরে আমি দেখেছি, ৪০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এবং দেশের সর্বত্র বিস্তৃত দুই হাজার তিনশর অধিক অধিভুক্ত কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিই জাতির উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এই দায়িত্ব আমার জন্য যেমন গৌরবের, তেমনি এক বিশাল চ্যালেঞ্জও। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের জন্য নয়, বরং দক্ষ, যোগ্য ও নৈতিক মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন করে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানমুখী দক্ষতায় গড়ে তোলা, কলেজগুলোয় মনিটরিং ও অডিট ব্যবস্থা জোরদার করা, কলেজ গভর্নিং বডিতে খ্যাতনামা শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করা এবং একই সঙ্গে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন—ইউনিসেফ, এনএসডিএ, এ-টু-আই প্রভৃতির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের মাধ্যমে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। এই পরিবর্তনের যাত্রা সহজ নয়। প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘণ্টা নিরলস শ্রম দিয়ে আমি চেষ্টা করছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক, স্বচ্ছ ও বিশ্বমানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে। আমি আশাবাদী, সবার সহযোগিতা, সমর্থন ও শুভকামনায় অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে, যেখানে শিক্ষা হবে বিশ্বমানের এবং এখানকার শিক্ষার্থীরা হবে আমাদের জাতির গৌরব। আপনাদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
নিজস্ব আঙিনা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আঙিনায় রয়েছে ছায়াঘেরা সবুজের বৃক্ষরাজি, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক শিল্পকলার স্থাপনা এবং বাহারি ফুলের সুষমা। দেখলেই মনে হয় প্রকৃতির স্নেহমাখা কোলে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি বিষয়ে অনার্স (সম্মান) কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। সেগুলো হলো—আইন, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স। প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে ৪৮ জন করে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচ মিলিয়ে মোট ৩৮৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) কোর্সে অধ্যয়নরত রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্টাডিজ। এ প্রোগ্রামটি বর্তমানে রেগুলার মাস্টার্স প্রোগ্রামে রূপান্তরিত। দুই সেমিস্টারে পরিচালিত কোর্সগুলো হলো—আর্টস, সোশ্যাল সায়েন্স, ন্যাচারাল সায়েন্স, বিজনেস স্টাডিজ এবং লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স। এছাড়া ২০০৬ সাল থেকে নিজস্ব আঙিনায় পরিচালিত হচ্ছে এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মূল অবলম্বন হিসেবে রয়েছে তিনটি ফ্যাকাল্টি। প্রতিটি ফ্যাকাল্টি একজন ডিনের অধীনে ন্যস্ত। ফ্যাকাল্টিগুলো হলো—স্নাতকপূর্ব শিক্ষাবিষয়ক স্কুল, স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্র, যা দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় এবং দেশব্যাপী অধিভুক্ত কলেজগুলোয় কার্যকর করে থাকে। এছাড়া স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে পাঁচটি একাডেমিক কমিটি। কমিটিগুলো হলো—আর্টস গ্রুপ, বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপ, সোশ্যাল সায়েন্স গ্রুপ, ন্যাচারাল সায়েন্স গ্রুপ ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স গ্রুপ। ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষকরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি কমিটিগুলোর মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম তত্ত্বাবধানসহ শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকায় প্রতিশ্রুতিশীল একজন শিক্ষক হলেন মো. সাইফুল ইসলাম (সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)।
‘Education is the most powerful weapon which you can use to change the world.’ —Nelson Mandela
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বিস্তারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আজ একটি অগ্রণী নাম। উচ্চশিক্ষা প্রসারে এটি বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত এই প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে শিক্ষা লাভ করছে। তরুণদের শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগ কেবল ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতি ও সমাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবে। বাংলাদেশ যদি সময়োপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণদের মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারে, তবে দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই গতিশীল ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই বিশাল কাঠামো ও কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একজন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যেমন গৌরবের, তেমনি এক বিরাট দায়িত্বও বটে।
ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে তিনি বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চতর পেশাগত দক্ষতা অর্জনে ‘Institute of Cost and Management Accountants of Bangladesh (ICMAB)’ থেকে ১৪০০ মার্কস সম্পন্ন করেন। একজন ফিন্যান্স শিক্ষক হিসেবে বাস্তব ও একাডেমিক জ্ঞানের সমন্বয়কে তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।
‘An investment in knowledge pays the best interest.’ —Benjamin Franklin
গবেষণা ও প্রকাশনা
জ্ঞানচর্চার দায়বদ্ধতা : একজন শিক্ষক শুধু জ্ঞান বিতরণ করেন না, তিনি জ্ঞান তৈরি করেন গবেষণার মাধ্যমে। গবেষণা একজন শিক্ষকের আত্মপ্রকাশ ও প্রভাব বিস্তারের অন্যতম প্রধান উপায়। তিনি দেশ ও বিদেশে আটটির অধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ‘Scopus and Web of Science’-সহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ‘Indexed Journals’-এ তার ১৮টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার গবেষণার মূল বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে FinTech adoption, sustainable finance mechanisms, ESG integration, technology-driven innovation, climate risk and policy uncertainty, InsurTech impacts, and bank resilience উল্লেখযোগ্য।
‘Research is creating new knowledge.’ —Neil Armstrong
এসব গবেষণার ফলাফল শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে এবং শিক্ষার্থীদেরও গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তুলছে।
শিক্ষাদানে পেশাগত দৃষ্টিকোণ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও মেহনতি শ্রেণি থেকে উঠে আসা। তারা পড়ালেখার পাশাপাশি জীবনের বাস্তব সংগ্রামে জড়িত। এজন্য তিনি সবসময় চেষ্টা করেন পাঠদানের পাশাপাশি তাদের নৈতিকতা, আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তুলতে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, এমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে নিয়মিত পাঠদান করছেন। পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণা তত্ত্বাবধান, একাডেমিক পর্যালোচনা, সিলেবাস উন্নয়ন এবং অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরীক্ষা ও একাডেমিক মানোন্নয়ন কার্যক্রমে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। ‘Teaching is the profession that teaches all the other professions.’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল পরিসরের শিক্ষার্থীরা নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। তাদের জন্য বাস্তবমুখী, দক্ষতাভিত্তিক ও নৈতিক শিক্ষাদানই তার মূল লক্ষ্য।
শিক্ষার্থীদের প্রতি বার্তা : প্রবাদে আছে—‘যে পড়ে, সে বাড়ে।’ এটি বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত একটি উক্তি, যার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত করা। শিক্ষার লক্ষ্য শুধু চাকরি নয়, বরং নিজের দক্ষতা ও চরিত্র গঠন এবং মূল্যবোধপূর্ণ জীবনের ভিত্তি।
Intelligence plus character – that is the goal of true education.’ —Martin Luther King Jr
তোমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলো। পরিশ্রম, সততা ও নেতৃত্বের গুণাবলি তোমাদের ভবিষ্যৎকে আলোকিত করবে ইনশাআল্লাহ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মেহনতি ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এই মহান উদ্যোগের অংশ হতে পেরে তিনি কৃতজ্ঞ। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষা, গবেষণা ও নৈতিকতাকে একসূত্রে গাঁথা উচিত বলে বিশ্বাস করেন। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ ও জাতিকে আলোকিত করার ব্রত নিয়ে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও মানবিক নেতৃত্ব গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এই অভিযাত্রায় নিজেকে একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে অবদান রাখতেই তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শিক্ষক ও কর্মচারী : নিজস্ব আঙিনায় ক্যাম্পাসটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন ৮৩ জন শিক্ষক, ৭৪৩ জন কর্মকর্তা এবং ৫৩২ জন কর্মচারী। এছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলে চাকরিচ্যুত ৮৬৪ কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আবার চাকরিতে যোগদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
সিনেট হল : সিনেটকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মস্তিষ্ক বলা হয়। এখান থেকেই নীতি ও সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়ে সারা দেশের ২ হাজার ২৬৮টি অধিভুক্ত কলেজে কার্যকর হয়। এর মোট সদস্যসংখ্যা ৯১। সিনেট হলটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত, যেখানে শতাধিক সদস্য একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে পারেন। প্রশস্ত, আরামদায়ক আসনবিন্যাস, উন্নত সাউন্ড সিস্টেম, প্রজেক্টর ও মাল্টিমিডিয়া সুবিধা এবং প্রতিটি দেয়ালে শোভা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ছবি ও শিক্ষার উন্নয়নমুখী দিকনির্দেশনা।
আইসিটি ভবন : আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এবং পুরোপুরি ডিজিটাল অবকাঠামো দিয়ে সজ্জিত আধুনিক আইসিটি ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক সেবার কেন্দ্রস্থল। এখানে রয়েছে উচ্চক্ষমতার সার্ভার, উন্নত মানের ল্যাব, প্রশিক্ষণ কক্ষ, সেমিনার হল ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখান থেকে সমন্বয় করা হয়।
অনলাইন সেবা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কলেজগুলোকে এখন আর শিক্ষা, পরীক্ষা ও অধিভুক্তি-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে আসতে হয় না। সব সেবা তারা অনলাইনের মাধ্যমে নিতে পারছেন। শিক্ষার্থীদের কলেজ পরিবর্তন, ভর্তি বাতিল, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংশোধন, দ্বি-নকল রেজিস্ট্রেশন কার্ড উত্তোলন, প্রবেশপত্র সংশোধন, দ্বি-নকল প্রবেশপত্র উত্তোলন ও নতুন কলেজের অধিভুক্তি এবং অধিভুক্ত কলেজের নবায়নসহ সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়।
লাইব্রেরি : নিজস্ব আঙিনায় রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এখানে রয়েছে চার হাজারের অধিক বই, গবেষণাপত্র ও দুর্লভ রেফারেন্স বুক, যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিকাশে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। প্রশস্ত ও শান্ত পাঠাগার কক্ষে বসে বইয়ের পাতায় ডুবে শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণাকর্মে মগ্ন থাকে। এটি শুধু একটি লাইব্রেরি বা তথ্যের ভান্ডার নয়, বরং চিন্তাচর্চা ও সৃজনশীলতার উন্মেষস্থল।
মসজিদ : ক্যাম্পাসের হৃদয়ভাগে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি স্থাপত্যশৈলী ও শান্ত পরিবেশে অতুলনীয়। প্রতিদিন শত শত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এখানে নামাজ আদায় করে হৃদয়ের প্রশান্তি খুঁজে পান। সুন্দর নকশা, পর্যাপ্ত জায়গাসহ এই মসজিদ যেন কর্মব্যস্ততার মাঝে আধ্যাত্মিক বিরতির এক স্নিগ্ধ আশ্রয়। এখানে আজানের সুমধুর ধ্বনি ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে দেয় পবিত্রতার আবেশ।
শহীদ মিনার : নিজস্ব আঙিনায় রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, যা আত্মত্যাগের অনন্য প্রতীক। নিজস্ব আঙিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ মিনার আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণআন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী। এখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিরা—স্মরণ করেন শহীদদের অপরিসীম অবদান। মিনারের প্রতিটি পাথরে যেন খোদাই আছে মুক্তির জন্য রক্তঝরানো ইতিহাস।
অধিভুক্ত কলেজ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপরিধি বাংলাদেশের সমগ্র ভূখণ্ডজুড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। মাত্র ৫৪০টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাত্রা শুরু করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় বর্তমানে মোট ২ হাজার ২৬৮টি কলেজ রয়েছে, যার মধ্যে ৫৯৯টি সরকারি ও ১ হাজার ৬৬৯টি বেসরকারি কলেজ রয়েছে।
শিক্ষা কার্যক্রম : বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় সম্পূর্ণ নতুন সিলেবাসের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) ও এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া তিন বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স (পাস) চালু রয়েছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী : দেশের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। সে হিসেবে অধিভুক্ত কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ, যার মধ্যে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট, ডক্টরাল ও অন্যান্য শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও সুচারুভাবে শিক্ষাদানের জন্য সারাদেশে এক লাখ শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন।
অনুষদভিত্তিক বিভাগসমূহ : ১. কলা অনুষদ—বাংলা, ইংরেজি, আরবি, সংস্কৃত, পালি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন এবং আইন। ২. সমাজবিজ্ঞান অনুষদ—অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, জনপ্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান। ৩. বিজ্ঞান অনুষদ—রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান। ৪. বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ—হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট। ৫. লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ—প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স, মনোবিজ্ঞান এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান।
প্রকাশনা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি দ্বিবার্ষিক জার্নাল প্রকাশিত হয়। এগুলো হলো—(১) The National University Journal of Humanities, Social Science and Business Studies এবং (২) The National University Journal of Science। প্রত্যেকটি জার্নালের জন্য রয়েছে পৃথক সম্পাদনা পরিষদ। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্রিকা নামে একটি ষাণ্মাসিক গবেষণা জার্নাল প্রকাশের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষক ও গবেষকরা সাধারণত এসব জার্নালে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকেন।
প্রথম সমাবর্তন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি। রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাবর্তনে ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৯৩২ ডিগ্রিধারী অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক পেয়েছেন আটজন। তারা হলেন—১. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন (বাংলা); চাঁদপুর সরকারি কলেজ, স্নাতকোত্তর – ২০১১, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ২. মুহাম্মদ এরশাদ উল্লাহ (ইসলামিক স্টাডিজ); কবি নজরুল সরকারি কলেজ, স্নাতক – ২০১০, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৩. শাম্মী আক্তার (অর্থনীতি); ইডেন কলেজ, স্নাতক – ২০১২, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৪. মাহফুজা ইসলাম (হিসাব বিজ্ঞান); ইডেন কলেজ, স্নাতকোত্তর – ২০১০, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৫. কলিমা ভূঁইয়া (প্রাণিবিজ্ঞান); খিলগাঁও মডেল কলেজ, স্নাতকোত্তর – ২০০৮, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৬. মোহাম্মদ শাফায়েত আলম (গণিত); গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ, স্নাতক – ২০১২, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৭. হোমায়রা ইসলাম (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং); ঢাকা সিটি কলেজ, স্নাতক – ২০১২, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৮. মতিউর রহমান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান); ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা, স্নাতকোত্তর – ২০১০, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অবদান : ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণআন্দোলন ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে জুলাই অভ্যুত্থান এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময় দেশের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং নিজেদের রক্ত দিয়ে গণতান্ত্রিক দাবিকে সমুন্নত করে তোলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। গাজীপুরসহ সারা দেশের প্রান্ত থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করেন। সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষার্থী এই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন শহীদ হলেন: শহীদ গোলাম মোস্তফা—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ঢাকায় বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। শহীদ রওশন আরা—ছাত্রী আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী, ঢাকার রাজপথে শহীদ হন। শহীদ সেলিম উদ্দিন—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গাজীপুরে মিছিলে অংশ নিয়ে শহীদ হন। শহীদ আসমত আলী—আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। শিক্ষার্থীদের সেই গৌরবগাথা স্মৃতি স্মরণে প্রতি বছর ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার বীজ বপন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা পালন করেছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের আত্মত্যাগ, নেতৃত্ব ও সংগঠনের দক্ষতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন কলেজগুলোয় ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, অধিভুক্ত কলেজগুলোকে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হাই কানেক্টিভিটির আওতাভুক্তকরণ, পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালুকরণ, অনলাইন কলেজ মনিটরিং ব্যবস্থা প্রবর্তন ও আইসিটি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে। গরিব ও মেহনতি মানুষের সন্তানেরাও এই শিক্ষার আলো পেলে সেটিই হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত সাফল্য। প্রবাদে আছে—‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।’ একটি জাতির টিকে থাকা, উন্নতিসাধন ও মর্যাদা অর্জনের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
সবুজে ঘেরা গাজীপুরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার এক দীপ্ত প্রহর। এটি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিস্তারের এক নীরব বিপ্লব।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে এবং কলেজভিত্তিক উচ্চশিক্ষাকে সুশৃঙ্খল, মানসম্মত ও কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় ১৯৯২ সালে জাতীয় সংসদের আইন পাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে এটি দেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ, সামরিক বাহিনীর একাডেমিসহ প্রফেশনাল কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির আওতায় আসে।
অবস্থান : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর জেলার বোর্ডবাজার সংলগ্ন এলাকায় ১২ দশমিক ৩৯ একর জায়গার উপর নির্মিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্ব পাশ দিয়ে মহানগরী থেকে চলে আসা মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সংযোগ ঘটেছে। এর দক্ষিণে রয়েছে ওআইসি প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) এবং উত্তরে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। অদূরে উত্তর-পূর্ব পাশে রয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই)। সহজ যাতায়াতব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব পরিমণ্ডল এবং আধুনিক অবকাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছে গবেষণা ও শিক্ষার এক নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র।
প্রথম চ্যান্সেলর : স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী ও তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর, যার ঐকান্তিক আগ্রহ, সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের কলেজগুলোর শিক্ষার অভিভাবকত্ব লাভ করে গণমানুষের এই বিশ্ববিদ্যালয়।
ভাইস চ্যান্সেলর : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এ পর্যন্ত মোট ১২ জন অধ্যাপক উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত হন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল বারী। তার হাত ধরে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকায় নিউ ইস্কাটনের এক ভাড়া বাড়িতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে দ্বাদশতম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. এএসএম আমানুল্লাহ। তিনি দক্ষ নেতৃত্ব, দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কারমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
ভাইস চ্যান্সেলরের বক্তব্য : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত এক বছরে আমি দেখেছি, ৪০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এবং দেশের সর্বত্র বিস্তৃত দুই হাজার তিনশর অধিক অধিভুক্ত কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিই জাতির উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এই দায়িত্ব আমার জন্য যেমন গৌরবের, তেমনি এক বিশাল চ্যালেঞ্জও। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের জন্য নয়, বরং দক্ষ, যোগ্য ও নৈতিক মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন করে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানমুখী দক্ষতায় গড়ে তোলা, কলেজগুলোয় মনিটরিং ও অডিট ব্যবস্থা জোরদার করা, কলেজ গভর্নিং বডিতে খ্যাতনামা শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করা এবং একই সঙ্গে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন—ইউনিসেফ, এনএসডিএ, এ-টু-আই প্রভৃতির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের মাধ্যমে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। এই পরিবর্তনের যাত্রা সহজ নয়। প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘণ্টা নিরলস শ্রম দিয়ে আমি চেষ্টা করছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক, স্বচ্ছ ও বিশ্বমানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে। আমি আশাবাদী, সবার সহযোগিতা, সমর্থন ও শুভকামনায় অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে, যেখানে শিক্ষা হবে বিশ্বমানের এবং এখানকার শিক্ষার্থীরা হবে আমাদের জাতির গৌরব। আপনাদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
নিজস্ব আঙিনা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আঙিনায় রয়েছে ছায়াঘেরা সবুজের বৃক্ষরাজি, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক শিল্পকলার স্থাপনা এবং বাহারি ফুলের সুষমা। দেখলেই মনে হয় প্রকৃতির স্নেহমাখা কোলে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি বিষয়ে অনার্স (সম্মান) কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। সেগুলো হলো—আইন, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স। প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে ৪৮ জন করে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচ মিলিয়ে মোট ৩৮৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) কোর্সে অধ্যয়নরত রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্টাডিজ। এ প্রোগ্রামটি বর্তমানে রেগুলার মাস্টার্স প্রোগ্রামে রূপান্তরিত। দুই সেমিস্টারে পরিচালিত কোর্সগুলো হলো—আর্টস, সোশ্যাল সায়েন্স, ন্যাচারাল সায়েন্স, বিজনেস স্টাডিজ এবং লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স। এছাড়া ২০০৬ সাল থেকে নিজস্ব আঙিনায় পরিচালিত হচ্ছে এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মূল অবলম্বন হিসেবে রয়েছে তিনটি ফ্যাকাল্টি। প্রতিটি ফ্যাকাল্টি একজন ডিনের অধীনে ন্যস্ত। ফ্যাকাল্টিগুলো হলো—স্নাতকপূর্ব শিক্ষাবিষয়ক স্কুল, স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্র, যা দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় এবং দেশব্যাপী অধিভুক্ত কলেজগুলোয় কার্যকর করে থাকে। এছাড়া স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে পাঁচটি একাডেমিক কমিটি। কমিটিগুলো হলো—আর্টস গ্রুপ, বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপ, সোশ্যাল সায়েন্স গ্রুপ, ন্যাচারাল সায়েন্স গ্রুপ ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স গ্রুপ। ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষকরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি কমিটিগুলোর মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম তত্ত্বাবধানসহ শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকায় প্রতিশ্রুতিশীল একজন শিক্ষক হলেন মো. সাইফুল ইসলাম (সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)।
‘Education is the most powerful weapon which you can use to change the world.’ —Nelson Mandela
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বিস্তারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আজ একটি অগ্রণী নাম। উচ্চশিক্ষা প্রসারে এটি বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত এই প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে শিক্ষা লাভ করছে। তরুণদের শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগ কেবল ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতি ও সমাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবে। বাংলাদেশ যদি সময়োপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণদের মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারে, তবে দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই গতিশীল ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই বিশাল কাঠামো ও কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একজন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যেমন গৌরবের, তেমনি এক বিরাট দায়িত্বও বটে।
ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে তিনি বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চতর পেশাগত দক্ষতা অর্জনে ‘Institute of Cost and Management Accountants of Bangladesh (ICMAB)’ থেকে ১৪০০ মার্কস সম্পন্ন করেন। একজন ফিন্যান্স শিক্ষক হিসেবে বাস্তব ও একাডেমিক জ্ঞানের সমন্বয়কে তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।
‘An investment in knowledge pays the best interest.’ —Benjamin Franklin
গবেষণা ও প্রকাশনা
জ্ঞানচর্চার দায়বদ্ধতা : একজন শিক্ষক শুধু জ্ঞান বিতরণ করেন না, তিনি জ্ঞান তৈরি করেন গবেষণার মাধ্যমে। গবেষণা একজন শিক্ষকের আত্মপ্রকাশ ও প্রভাব বিস্তারের অন্যতম প্রধান উপায়। তিনি দেশ ও বিদেশে আটটির অধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ‘Scopus and Web of Science’-সহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ‘Indexed Journals’-এ তার ১৮টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার গবেষণার মূল বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে FinTech adoption, sustainable finance mechanisms, ESG integration, technology-driven innovation, climate risk and policy uncertainty, InsurTech impacts, and bank resilience উল্লেখযোগ্য।
‘Research is creating new knowledge.’ —Neil Armstrong
এসব গবেষণার ফলাফল শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে এবং শিক্ষার্থীদেরও গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তুলছে।
শিক্ষাদানে পেশাগত দৃষ্টিকোণ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও মেহনতি শ্রেণি থেকে উঠে আসা। তারা পড়ালেখার পাশাপাশি জীবনের বাস্তব সংগ্রামে জড়িত। এজন্য তিনি সবসময় চেষ্টা করেন পাঠদানের পাশাপাশি তাদের নৈতিকতা, আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তুলতে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, এমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে নিয়মিত পাঠদান করছেন। পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণা তত্ত্বাবধান, একাডেমিক পর্যালোচনা, সিলেবাস উন্নয়ন এবং অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরীক্ষা ও একাডেমিক মানোন্নয়ন কার্যক্রমে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। ‘Teaching is the profession that teaches all the other professions.’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল পরিসরের শিক্ষার্থীরা নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। তাদের জন্য বাস্তবমুখী, দক্ষতাভিত্তিক ও নৈতিক শিক্ষাদানই তার মূল লক্ষ্য।
শিক্ষার্থীদের প্রতি বার্তা : প্রবাদে আছে—‘যে পড়ে, সে বাড়ে।’ এটি বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত একটি উক্তি, যার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত করা। শিক্ষার লক্ষ্য শুধু চাকরি নয়, বরং নিজের দক্ষতা ও চরিত্র গঠন এবং মূল্যবোধপূর্ণ জীবনের ভিত্তি।
Intelligence plus character – that is the goal of true education.’ —Martin Luther King Jr
তোমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলো। পরিশ্রম, সততা ও নেতৃত্বের গুণাবলি তোমাদের ভবিষ্যৎকে আলোকিত করবে ইনশাআল্লাহ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মেহনতি ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এই মহান উদ্যোগের অংশ হতে পেরে তিনি কৃতজ্ঞ। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষা, গবেষণা ও নৈতিকতাকে একসূত্রে গাঁথা উচিত বলে বিশ্বাস করেন। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ ও জাতিকে আলোকিত করার ব্রত নিয়ে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও মানবিক নেতৃত্ব গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এই অভিযাত্রায় নিজেকে একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে অবদান রাখতেই তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শিক্ষক ও কর্মচারী : নিজস্ব আঙিনায় ক্যাম্পাসটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন ৮৩ জন শিক্ষক, ৭৪৩ জন কর্মকর্তা এবং ৫৩২ জন কর্মচারী। এছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলে চাকরিচ্যুত ৮৬৪ কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আবার চাকরিতে যোগদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
সিনেট হল : সিনেটকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মস্তিষ্ক বলা হয়। এখান থেকেই নীতি ও সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়ে সারা দেশের ২ হাজার ২৬৮টি অধিভুক্ত কলেজে কার্যকর হয়। এর মোট সদস্যসংখ্যা ৯১। সিনেট হলটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত, যেখানে শতাধিক সদস্য একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে পারেন। প্রশস্ত, আরামদায়ক আসনবিন্যাস, উন্নত সাউন্ড সিস্টেম, প্রজেক্টর ও মাল্টিমিডিয়া সুবিধা এবং প্রতিটি দেয়ালে শোভা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ছবি ও শিক্ষার উন্নয়নমুখী দিকনির্দেশনা।
আইসিটি ভবন : আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এবং পুরোপুরি ডিজিটাল অবকাঠামো দিয়ে সজ্জিত আধুনিক আইসিটি ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক সেবার কেন্দ্রস্থল। এখানে রয়েছে উচ্চক্ষমতার সার্ভার, উন্নত মানের ল্যাব, প্রশিক্ষণ কক্ষ, সেমিনার হল ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখান থেকে সমন্বয় করা হয়।
অনলাইন সেবা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কলেজগুলোকে এখন আর শিক্ষা, পরীক্ষা ও অধিভুক্তি-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে আসতে হয় না। সব সেবা তারা অনলাইনের মাধ্যমে নিতে পারছেন। শিক্ষার্থীদের কলেজ পরিবর্তন, ভর্তি বাতিল, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংশোধন, দ্বি-নকল রেজিস্ট্রেশন কার্ড উত্তোলন, প্রবেশপত্র সংশোধন, দ্বি-নকল প্রবেশপত্র উত্তোলন ও নতুন কলেজের অধিভুক্তি এবং অধিভুক্ত কলেজের নবায়নসহ সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়।
লাইব্রেরি : নিজস্ব আঙিনায় রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এখানে রয়েছে চার হাজারের অধিক বই, গবেষণাপত্র ও দুর্লভ রেফারেন্স বুক, যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিকাশে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। প্রশস্ত ও শান্ত পাঠাগার কক্ষে বসে বইয়ের পাতায় ডুবে শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণাকর্মে মগ্ন থাকে। এটি শুধু একটি লাইব্রেরি বা তথ্যের ভান্ডার নয়, বরং চিন্তাচর্চা ও সৃজনশীলতার উন্মেষস্থল।
মসজিদ : ক্যাম্পাসের হৃদয়ভাগে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি স্থাপত্যশৈলী ও শান্ত পরিবেশে অতুলনীয়। প্রতিদিন শত শত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এখানে নামাজ আদায় করে হৃদয়ের প্রশান্তি খুঁজে পান। সুন্দর নকশা, পর্যাপ্ত জায়গাসহ এই মসজিদ যেন কর্মব্যস্ততার মাঝে আধ্যাত্মিক বিরতির এক স্নিগ্ধ আশ্রয়। এখানে আজানের সুমধুর ধ্বনি ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে দেয় পবিত্রতার আবেশ।
শহীদ মিনার : নিজস্ব আঙিনায় রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, যা আত্মত্যাগের অনন্য প্রতীক। নিজস্ব আঙিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ মিনার আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণআন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী। এখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিরা—স্মরণ করেন শহীদদের অপরিসীম অবদান। মিনারের প্রতিটি পাথরে যেন খোদাই আছে মুক্তির জন্য রক্তঝরানো ইতিহাস।
অধিভুক্ত কলেজ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপরিধি বাংলাদেশের সমগ্র ভূখণ্ডজুড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। মাত্র ৫৪০টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাত্রা শুরু করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় বর্তমানে মোট ২ হাজার ২৬৮টি কলেজ রয়েছে, যার মধ্যে ৫৯৯টি সরকারি ও ১ হাজার ৬৬৯টি বেসরকারি কলেজ রয়েছে।
শিক্ষা কার্যক্রম : বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় সম্পূর্ণ নতুন সিলেবাসের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) ও এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া তিন বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স (পাস) চালু রয়েছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী : দেশের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। সে হিসেবে অধিভুক্ত কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ, যার মধ্যে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট, ডক্টরাল ও অন্যান্য শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও সুচারুভাবে শিক্ষাদানের জন্য সারাদেশে এক লাখ শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন।
অনুষদভিত্তিক বিভাগসমূহ : ১. কলা অনুষদ—বাংলা, ইংরেজি, আরবি, সংস্কৃত, পালি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন এবং আইন। ২. সমাজবিজ্ঞান অনুষদ—অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, জনপ্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান। ৩. বিজ্ঞান অনুষদ—রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান। ৪. বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ—হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট। ৫. লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ—প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স, মনোবিজ্ঞান এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান।
প্রকাশনা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি দ্বিবার্ষিক জার্নাল প্রকাশিত হয়। এগুলো হলো—(১) The National University Journal of Humanities, Social Science and Business Studies এবং (২) The National University Journal of Science। প্রত্যেকটি জার্নালের জন্য রয়েছে পৃথক সম্পাদনা পরিষদ। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্রিকা নামে একটি ষাণ্মাসিক গবেষণা জার্নাল প্রকাশের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষক ও গবেষকরা সাধারণত এসব জার্নালে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকেন।
প্রথম সমাবর্তন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি। রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাবর্তনে ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৯৩২ ডিগ্রিধারী অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক পেয়েছেন আটজন। তারা হলেন—১. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন (বাংলা); চাঁদপুর সরকারি কলেজ, স্নাতকোত্তর – ২০১১, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ২. মুহাম্মদ এরশাদ উল্লাহ (ইসলামিক স্টাডিজ); কবি নজরুল সরকারি কলেজ, স্নাতক – ২০১০, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৩. শাম্মী আক্তার (অর্থনীতি); ইডেন কলেজ, স্নাতক – ২০১২, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৪. মাহফুজা ইসলাম (হিসাব বিজ্ঞান); ইডেন কলেজ, স্নাতকোত্তর – ২০১০, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৫. কলিমা ভূঁইয়া (প্রাণিবিজ্ঞান); খিলগাঁও মডেল কলেজ, স্নাতকোত্তর – ২০০৮, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৬. মোহাম্মদ শাফায়েত আলম (গণিত); গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ, স্নাতক – ২০১২, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৭. হোমায়রা ইসলাম (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং); ঢাকা সিটি কলেজ, স্নাতক – ২০১২, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ৮. মতিউর রহমান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান); ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা, স্নাতকোত্তর – ২০১০, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অবদান : ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণআন্দোলন ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে জুলাই অভ্যুত্থান এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময় দেশের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং নিজেদের রক্ত দিয়ে গণতান্ত্রিক দাবিকে সমুন্নত করে তোলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। গাজীপুরসহ সারা দেশের প্রান্ত থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করেন। সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষার্থী এই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন শহীদ হলেন: শহীদ গোলাম মোস্তফা—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ঢাকায় বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। শহীদ রওশন আরা—ছাত্রী আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী, ঢাকার রাজপথে শহীদ হন। শহীদ সেলিম উদ্দিন—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গাজীপুরে মিছিলে অংশ নিয়ে শহীদ হন। শহীদ আসমত আলী—আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। শিক্ষার্থীদের সেই গৌরবগাথা স্মৃতি স্মরণে প্রতি বছর ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার বীজ বপন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা পালন করেছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের আত্মত্যাগ, নেতৃত্ব ও সংগঠনের দক্ষতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন কলেজগুলোয় ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, অধিভুক্ত কলেজগুলোকে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হাই কানেক্টিভিটির আওতাভুক্তকরণ, পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালুকরণ, অনলাইন কলেজ মনিটরিং ব্যবস্থা প্রবর্তন ও আইসিটি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে। গরিব ও মেহনতি মানুষের সন্তানেরাও এই শিক্ষার আলো পেলে সেটিই হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত সাফল্য। প্রবাদে আছে—‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।’ একটি জাতির টিকে থাকা, উন্নতিসাধন ও মর্যাদা অর্জনের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের পর স্থগিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আগামী ২৭ অক্টোবর পালিত হবে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
৫ ঘণ্টা আগে১৮৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে ব্যথাহীন অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। দাঁতের চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম মর্টন রোগী গিলবার্ট অ্যাবটের মুখে ইথার গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী
৫ ঘণ্টা আগেকরোনা ভ্যাকসিনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে রয়েছে নানা ভুল ধারণা এবং অন্ধবিশ্বাস। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্ক্যাবিসসহ কিছু সংক্রামক চর্মরোগ মহামারির আকার ধারণ করেছে। বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। আবার
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগবালাই আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশে হেমন্তকালের শেষের দিকে শীতকাল খুব কাছাকাছি চলে আসে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় তাপমাত্রার ওঠানামা ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বরসহ অন্যান্য রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
৬ ঘণ্টা আগে