বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হোটেল ও খাবারের দোকানগুলোয় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। খাবার নিম্নমানের হলেও দাম দিন দিন বাড়ছে। বেশি টাকা দিয়েও মানহীন খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
ফলে প্রতিদিনই স্বাস্থ্য আর অতিরিক্ত খরচের মাঝে ভারসাম্য রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কোনো বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই এসব খাবার গ্রহণ করতে হচ্ছে। প্রশাসনের তদারকির অভাবেই দিন দিন এই দুরবস্থা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাকৃবিতে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তাদের দৈনন্দিন খাদ্যচাহিদার বড় একটি অংশ জোগান দেয় ক্যাম্পাসের হোটেল ও খাবারের দোকানগুলো। অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা জানান, সময়ের সঙ্গে হোটেলগুলোর খাবারের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই ফুড পয়জনিংসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন। অনেকটা যেন টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা! একসময় হোটেলগুলোয় ৩০-৪০ টাকায় পেট ভরে খাওয়া যেত, এখন সেটা আর নেই। দাম বাড়লেও মাছ-মাংসের আকার ছোট হয়ে গেছে। বাজারে মাছ-মাংসের দাম কমলেও হোটেলগুলোয় কমে না দাম।
সরেজমিনে হোটেলগুলো ঘুরে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর প্লাস্টিকের পুরোনো বোতলে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নোংরা ফ্রিজে একসঙ্গে মাছ, মাংস ও শাকসবজি সংরক্ষণ করা হয়েছে। পুরোনো পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করে শিঙাড়া, পুরি, মাছ ও বড়া ভাজা হচ্ছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কালো পাতিলে রান্না করা হচ্ছে মাছ-মাংস। প্লেটগুলোও ব্যবহার শেষে ভালোভাবে না ধুয়ে হালকা পানি দিয়ে ধুয়ে আবার ব্যবহার করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকানগুলোয় ডিমের হালি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের বাজারমূল্য সাড়ে ১১ টাকা। কিন্তু হোটেলগুলোয় একেকটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। ৫০-৫৫ গ্রাম মুরগির মাংসের টুকরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কয়েক মাস আগেও এক প্লেট খিচুড়ি ছিল ১৫ টাকা, এখন তা ২০ টাকা, কোনো কোনো হোটেলে ৩০ টাকা।
আগে পাঁচ টাকার রুটির যে আকার ছিল, এখন তা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪৫-৫০ গ্রাম রুই মাছের টুকরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বাজারে সহজলভ্য হলেও হোটেলগুলোয় পাঙাশ মাছের দাম চড়া, এক টুকরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর ছুটির দিনে এক টুকরা গরুর মাংস খেতে গেলেও দামে শতবার ভাবতে হচ্ছে। ৫০-৫৫ গ্রাম গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, খাবার খাওয়া হয় দেহে শক্তি জোগাতে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে; কিন্তু হোটেলগুলোয় যা বিক্রি হয়, তা যেন বিষ! না মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি, না ঢেকে রাখা হচ্ছে খাবার। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া আর ফুড পয়জনিং যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবুও হলগুলোয় খাবারের নিম্নমান এবং ক্লাস পরীক্ষার চাপে এই খাবার অবহেলা করার সুযোগ নেই।

দীর্ঘ সময় তা গ্রহণের ফলে বড় ধরনের শারীরিক জটিলতার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই পরিস্থিতি বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়াতে হবে। হোটেল মালিকরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং খাবারের দাম কমাতে রাজি না হন, তা হলে এসব দোকান সিলগালা করে দেওয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলজারুল আজিজ বলেন, হোটেলগুলোয় বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর রুচিবর্ধক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ছাড়া খাবার প্রস্তুতির অনিয়ম ও সঠিক তাপমাত্রা না মানার ফলে খাবারের পুষ্টিমান নষ্ট হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যা খাচ্ছে, তা পুষ্টিসমৃদ্ধ নয়।
তিনি আরো বলেন, মাছ, মাংস ও শাকসবজি একই ফ্রিজে সংরক্ষণ করার কারণে সংক্রামক জীবাণু খাবারে ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার গ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছেন না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এবং পেটের বিভিন্ন পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, শিক্ষার্থীরা এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ জানাননি। যদি তারা নির্দিষ্ট কোনো দোকান সম্পর্কে অভিযোগ দিতেন, তা হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নিতাম। খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও ক্যাম্পাসে মনিটরিং করতে আগ্রহী।

