চাকরিমুখী কার্যক্রমে যারা ক্যাম্পাসে সেরা

মাহবুব আলম রিয়াজ ও রাতুল সাহা
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ১৪: ১৮

চাকরির জন্য প্রয়োজন হয় সাজানো একটি সিভি। অপ্রাসঙ্গিক, ভুল কিংবা অতিরঞ্জিত তথ্য ব্যতিরেকে যদি ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সফট কিংবা হার্ড স্কিল, কাজের অভিজ্ঞতা, সহশিক্ষা কার্যক্রম প্রভৃতি তথ্য সুন্দর করে সিভিতে সাজানো থাকে, তাহলে নিজেকে এগিয়ে রাখা যাবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) অডিটোরিয়ামে সিভির নানা কলাকৌশল শেখানোর জন্য আয়োজিত হয় একটি কর্মশালা। সেখানে শিক্ষার্থীরা সিভি-সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় শেখেন।

বিজ্ঞাপন

কর্মশালায় অংশ নেওয়া ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। সিভি-সংক্রান্ত নানা ধরনের বিষয় শেখেন তিনি। লেখকের সঙ্গে তার কথা হচ্ছিল ‘সিভি কেন দরকার, একটি আকর্ষণীয় সিভি চাকরিজীবনের শুরুতে কীভাবে এগিয়ে রাখে’ সেসব বিষয়ে।

সাগর আহমেদ যে কর্মশালায় অংশ নেন, তা বুটেক্স ক্যারিয়ার ক্লাবের আয়োজিত ‘প্রফেশনাল সিভি রাইটিং’ শীর্ষক কর্মশালা। তিনি ওই আয়োজনের জন্য ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সদ্য তিনি ক্লাবের সদস্য হতে পেরে আনন্দিত এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অবদান রাখবেন বলে জানান।

তার মতো শত শত শিক্ষার্থী ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রোগ্রাম, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশ নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। ক্লাব থেকে উপকার পাচ্ছে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থী—সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ক্লাবের সদস্য তথা আয়োজক। এর ফলে যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধানে পারদর্শিতা, দল ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের গুণাবলি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে থাকছে।

পেশাদার জীবনের জন্য প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা চাকরিমুখী কার্যক্রম আয়োজন করতে ক্লাবটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। শিক্ষার্থীদের মাঝে দক্ষতার ঘাটতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা, পেশাদার আচরণের অভাব প্রভৃতি সমস্যা অনেকাংশে লাঘব করতে কাজ করে যাচ্ছে ক্লাবটি। এখন শিক্ষার্থীরা শিখছেন কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, বাড়াচ্ছেন পেশাদার নেটওয়ার্ক এবং নিজেকে গড়ে তুলছেন একজন দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে।

ক্যাম্পাসে ‘ক্লাব একটি পরিবার’ বলে কিছুটা ব্যঙ্গ করা হলেও ক্যারিয়ার ক্লাবের আচরণ পরিবারের মতোই। ক্লাবরুমে হাসি-কান্না ও সুখ-দুঃখের নানা আলোচনায় সদস্যদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এ যেন অন্য এক পরিবার, যেখানে ক্যারিয়ারমুখী দক্ষতা শেখা যায়। সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ, ক্যারিয়ার পরামর্শ, ইন্ডাস্ট্রি এনগেজমেন্ট সেশন, স্কলারশিপ গাইডলাইন—কত কী করছেন তারা। সম্প্রতি জব ফেয়ার আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা, দিনক্ষণও ঠিক করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, চাকরির বিজ্ঞাপন চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে পৌঁছে দেওয়াও ক্লাবের নিয়মিত কাজ।

চলতি বছরে রয়েছে নানা আয়োজন। ক্যারিয়ার ক্রনিকল সেমিনার, ‘এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ আনলিশড: দ্য বিগিনার্স পাথ’ শীর্ষক সেমিনার, প্রফেশনাল সিভি রাইটিং ওয়ার্কশপ, ইন্টারন্যাশনাল মিট বাংলাদেশ এক্সপোতে অংশগ্রহণ, ‘আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ফর ফিউচার লিডারস’ শীর্ষক সেমিনার, ‘হায়ার স্টাডি ইন ইউরোপ ফর টেক্সটাইল স্টুডেন্টস’ শিরোনামে অনলাইন ওয়েবিনার, ‘বস্ত্রশিল্প: একুশে শব্দভাবনা ২.০’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট মেশিনারি এক্সিবিশন পরিদর্শনসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ক্লাবটি।

ক্লাব নিয়ে মডারেটর অধ্যাপক ড. শেখ মো. মামুন কবীর বলেন, ক্লাবটির কার্যক্রমে করপোরেট প্রতিনিধিদের যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জগতের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত আগ্রহও বেড়েছে। সফলতার পথে সবচেয়ে বড় পুঁজি হলো প্রস্তুতি আর ক্লাবটি সেই প্রস্তুতির পথটি তৈরি করে দিচ্ছে। যদি সবার সম্মিলিত প্রয়াস থাকে, তাহলে এই ক্লাব শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের আস্থার নাম হয়ে উঠবে।

গত বছরের চেয়ে এ বছর ক্লাবের কার্যক্রম বেড়েছে। ক্লাব সদস্যরা নেতৃত্বের প্রতি খুশি এবং সবাই খুব আশাবাদী। ক্লাবটির সভাপতি মো. নাজমুছ সাকিব বলেন, ক্লাবে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের আঁচড় আর পরিকল্পনার রং মিশে তৈরি হয় ভবিষ্যতের চিত্র। আমাদের আয়োজিত প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা নতুন দক্ষতা অর্জন করে এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা খুলে দেয় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক এফএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভবিষ্যতে ক্লাবের লক্ষ্য থাকবে কীভাবে আরো শিক্ষার্থী ও ইন্ডাস্ট্রির মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি করা যায় এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরিতে বুটেক্স শিক্ষার্থীদের এক ধাপ এগিয়ে রাখা যায়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত