জাবিতে জুলাই হামলার তদন্তে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক

এসএম তাওহীদ, জাবি
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৪: ১৫
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৪: ১৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটিতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা অন্তর্ভুক্ত থাকায় নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত কমিটির অনেক সদস্যই অভিযুক্তদের রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক তদন্তের পর ৯ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদেরসহ নতুন করে আরো ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, এ তদন্ত কমিটিগুলোর অনেক সদস্যই তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় অভিযুক্তদের রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির সভাপতি থাকেন উপাচার্য এবং সদস্য হিসেবে থাকেন সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন, অভিযুক্তের বিভাগের চেয়ারম্যান, দুইজন সিন্ডিকেট সদস্য (যাদের মধ্যে একজন বাইরের হতে হয়), ও রেজিস্ট্রার। বিধি অনুযায়ী, কমিটিতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিভাগের প্রধানরা ও অনুষদের ডিন রয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আওয়ামীপন্থি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য। যারা অভিযুক্ত শিক্ষকদের বাঁচানো চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবালের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন একই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহেদুর রশিদ, যিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য। মেহেদী ইকবাল ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সঙ্গে হামলায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়েন। তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ড. শাহেদুর রশিদ তাকে রক্ষায় নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক কর্মচারীকে সাক্ষ্য না দিতে হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হোসনে আরা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিবুর রেফৌ শৈবালের বিরুদ্ধে গঠিত প্রত্যেকটা তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি হামলাকারী শিক্ষকদের বাঁচাতে উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন এবং সাবেক উপ-উপাচার্য মোস্তফা ফিরোজকে এনওসি দিতে চাপ প্রয়োগ করেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকরা সবাই আওয়ামীপন্থি মতাদর্শের অনুসারী। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগের চেয়ারম্যান একই মতাদর্শ লালন করেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা বিচারকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এমন নাটকীয় তদন্ত আমরা মেনে নেব না।

জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, ছাত্রলীগ ও হামলায় মদতদাতা শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে আমরা প্রথম থেকেই সোচ্চার। তবে প্রশাসনে থাকা আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তাদের কারণে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনকে অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে।

ছাত্রশিবির জাবি শাখার সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, জুলাইয়ে সংঘটিত বর্বর হামলার পেছনে যেসব শিক্ষক পরিকল্পনা ও মদত দিয়েছেন, তাদের বিচার প্রক্রিয়ায় যে ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যে তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত আওয়ামী মতাদর্শের অনুসারী শিক্ষকরা রয়েছে, সেই কমিটি কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারে না। দোষীদের বিচারের স্বার্থে এ ধরনের স্বার্থসংঘাতপূর্ণ সদস্যদের অব্যাহতি দিতে হবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রত্যেক অভিযুক্ত শিক্ষকের জন্য আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে উপাচার্য সভাপতি থাকেন এবং অন্যান্য সদস্যদের বিধি অনুযায়ী নির্বাচন করা হয়েছে। তাই বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়বেÑএমন আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।

বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান যুক্তরাষ্ট্রে সফরে রয়েছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত