বেরোবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে শিক্ষার্থীরা

ইমন আলী, বেরোবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৭
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৭

তিষ্ঠার ১৭ বছর পরও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেন। দাবির মুখে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সংযুক্ত এবং ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দেয় প্রশাসন। কিন্তু এখনো নির্বাচনের বিধি আইনে সংযুক্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান রাখা হয়নি। যে কারণে নির্বাচন করতে হলে প্রথমে ছাত্র সংসদ আইনের খসড়া একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাস করে তা অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। বিধানটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্ত হলে তারপরই ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নীতিমালা যুক্ত করতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নীতিমালা’। নীতিমালাটি চ্যান্সেলর কর্তৃক অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও অর্থ বরাদ্দ, ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুমোদন হলেই ঘোষিত তারিখে নির্বাচন হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ১৪ মে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি করা খসড়া গঠনতন্ত্রটি ইউজিসিতে পাঠায়। ইউজিসি আড়াই মাস পর গত ৩০ জুলাই খসড়া গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কমিশনের সদস্য তানজীমউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি কয়েক দফা বৈঠকের পর খসড়াটি সংশোধন করে। সংশোধিত খসড়াটি ১৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এটি আবার ইউজিসিতে পাঠানো হয়, যা এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় । এ চিঠি চালাচালির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিধান যুক্ত হওয়ার বিষয়টি আটকে রয়েছে। ফলে প্রশাসন ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আদৌ হবে কি নাÑতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমরা লক্ষ করছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। এটি খুবই ভালো একটি খবর। অন্যদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন দাবিতে যখন আন্দোলন হয়, তখন প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করার। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্টা জানান, তারা কাজ করছেন সময়মতো নির্বাচন আয়োজনে। কিন্তু এর কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তার দাবি, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের কাজটি শেষ হবে। এরপরই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত ঘোষণা আসবে। নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তন হবে। সেক্ষেত্রে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অক্টোবরে না হলে নতুন জটিলতা তৈরি হবে। এজন্য আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা অতিদ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সব জটিলতা দূর করার দাবি জানাচ্ছি।

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেন, বেরোবিতে একটি সুন্দর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে এটা আমাদের আশা। সেই আশা নিয়ে অনেক আন্দোলন, মিছিল ও মিটিং হয়েছে। এরপর নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলো। এরপর সংশয় তৈরি হলো যে, বেরোবির আইনে ছাত্র সংসদের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে কি না। এ নিয়ে চিঠি চালাচালি হলো। কিন্তু এখনো আইনে বিষয়টি যুক্ত হলো না। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এনামুল হক শাওন বলেন, এখন পর্যন্ত বেরোবির আইনে ছাত্র সংসদের বিষয়টি সংযুক্ত না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আমরা চাই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নির্বাচন নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষা করুক।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত