মুহাম্মাদ রিয়াদ উদ্দিন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়-বনানিবেষ্টিত ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রায় ৬০ বছরের কালপরিক্রমায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ছয়বার। এ নির্বাচন সর্বপ্রথম ১৯৭০ এবং সর্বশেষ ১৯৯০ সালে হয়েছে।
এরপর ৩৫ বছর চাকসু নির্বাচনের মতো সোনার হরিণ শিক্ষার্থীরা আর চোখে দেখেননি। কিন্তু চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পাল্টে দেয় এর চিত্রপট। অবশেষে ৩৫ বছর পর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে চাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রাথমিক ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ অক্টোবর। চাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্যানেল তাদের দল সাজাতে শুরু করেছে, আবার কেউ কেউ স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয় প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চাকসুর আমেজ। শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী
১. ইব্রাহীম হোসেন রনি
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চবি
ছাত্র সংসদের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ভাবনা ও পরিকল্পনাকে একীভূত করে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার একাডেমিক এবং সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করে, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা, প্রশাসনের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজসেবামূলক ও সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে। এছাড়া ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পছন্দমতো নির্বাচিত প্রতিনিধি গঠিত হয়। ফলে যেকোনো সমস্যা ও সহযোগিতায় তারা শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্যে এগিয়ে আসে, কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে স্বার্থ হাসিল করার সুযোগ থাকে না। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন হওয়া অবশ্যই আনন্দের। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা চাকসুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হবে এবং নিজেদের বিকশিত করার আরো অবারিত সুযোগ পাবে—শিক্ষার্থী হিসেবে এটাই প্রত্যাশা।
২. জগলুল আহমেদ
শিক্ষার্থী, পদার্থবিদ্যা বিভাগ
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড, তার ভূরাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত জরুরি, অথচ চবি বাংলাদেশে প্রান্তিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার পূর্ণ সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে পারছে না। চবির ছাত্রদের আবাসন সমস্যা প্রকট, টিএসসির মতো মৌলিক স্থাপনা এখানে নেই। চবির ছাত্ররা নিরাপত্তা সংকটে ভোগে—তাদের এলাকাবাসীর সঙ্গে নজিরবিহীন সংঘাতের মোকাবিলা করতে হয়েছিল এই সেদিন। ১ হাজার ৫০০ ছাত্র আহত হয়েছেন, অথচ এখনো জীবনসংকটে থাকা ছাত্রদের কথা না বলে মিডিয়া ব্যস্ত ‘সহজ-সরল’ গ্রামবাসীর ওপর সহিংসতার কথা উল্লেখ করতে।
অর্থাৎ, চবির ছাত্রদের জীবনের দাম আসলে খুব একটা বেশি নয়। চাকসুর লক্ষ্য হবে চবির এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেওয়া। আমাদের চবি ও ছাত্রদের তাদের প্রাপ্য অবস্থানে নিতে হবে। চাকসুর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে সেই লম্বা পথে প্রথম পদক্ষেপ।
৩. তাহসিনা রহমান
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদ
চাকসু নির্বাচন দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাচ্ছে। এটা শুধু আনুষ্ঠানিক নির্বাচন নয়, বরং আমাদের প্রজন্মের হাতে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার এক ঐতিহাসিক সুযোগ। আমি বিশ্বাস করি, চাকসু হবে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মঞ্চ, যেখানে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে আদর্শ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে। যারাই নির্বাচিত হবেন, তাদের ‘ভিশন’ হতে হবে এমন এক চাকসু নির্মাণ করা, যা শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করবে, একাডেমিক ও গবেষণার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। আমি চাই চাকসু হোক জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির প্রাথমিক পাঠশালা, যেখান থেকে আগামী দিনের রাষ্ট্রনেতা ও নীতিনির্ধারকেরা গড়ে উঠবেন। এই নির্বাচন হবে শুধু প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য নয়, বরং পরিবর্তনের এক নতুন যুগের সূচনা করবে।
৪. খাদিজা আফরিন মিতু
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক পরিবেশবান্ধব ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি হলেও এটি নারী শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় নয়। চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সৃজিত হতে পারে এক যুগান্তকারী নারী শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্ষদ থেকেও নারীদের ‘নিছক শব্দে’ বিশেষায়িত করার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় নারী শিক্ষার্থীদের যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়ে। শাটল ট্রেন ও বাস থাকলেও ভিড় ও নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক সময় তাদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হলসংখ্যা সীমিত এবং সিট সংকট প্রবল। রুমের ভিড় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবও সমস্যা তৈরি করে। রাতে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির নানা ধরনের অভিযোগ আছে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা মেডিকেল সেবা নেই। জরুরি পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন। সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমে মেয়েদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া লাইব্রেরি, ক্লাসরুম, কমনরুম, টয়লেট প্রভৃতির মতো পর্যাপ্ত নারীবান্ধব অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। একটি নিরেট ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের আওতাধীন চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে নারী শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের নতুন দিগন্ত।
৫. সাঈদ বিন হাবিব
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে গণতন্ত্রচর্চার জন্য ছাত্রসংসদ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছাত্রসংসদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারছেন না, যারা তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবেন সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে। এবার যখন চাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মনে বাড়ছে উত্তেজনা, প্রত্যাশা ও অধিকার আদায়ের প্রেরণা। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থাহীনতা প্রবল। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রভাব, ‘মাদারপার্টি’র নেতার নামে স্লোগান, প্রটোকল দেওয়া, দলীয় দখলদারি, মাদকের বিস্তার, গেস্ট রুম, গণরুম ‘কালচার’ এবং সহিংসতা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনগুলোর বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল। ’৯০-পরবর্তী বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোয় রাজনৈতিক দল এবং সরকার ছাত্রসংসদ নির্বাচন হতে দেয়নি, যা তাদের দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ।
আমি প্রত্যাশা করি, দীর্ঘ সময় পর চাকসু নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, যে নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতা নয়, তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন—যারা চাকসুতে নিজের কথা নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বলবেন, অধিকার আদায়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে কাজ করবেন।
৬. মাহফুজুর রহমান
শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ
চাকসু শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অধিকারবোধ জাগ্রত করার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যার ফলে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসে শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ছাত্রজনতার ‘গণঅভ্যুত্থানের’ পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল বৈধ প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়া, যে কারণে চাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি।
প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলা এবং ভৌগোলিক অবস্থার কারণে অন্য যেকোনো ক্যাম্পাসের চেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের পরিমাণ বেশি। সেদিক থেকে চাকসু আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর, যা শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহন, খাবারের মান, একাডেমিক অব্যবস্থাপনা, গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি চাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতাদর্শিক ভিন্নতা থাকার শর্তেও পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়-বনানিবেষ্টিত ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রায় ৬০ বছরের কালপরিক্রমায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ছয়বার। এ নির্বাচন সর্বপ্রথম ১৯৭০ এবং সর্বশেষ ১৯৯০ সালে হয়েছে।
এরপর ৩৫ বছর চাকসু নির্বাচনের মতো সোনার হরিণ শিক্ষার্থীরা আর চোখে দেখেননি। কিন্তু চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পাল্টে দেয় এর চিত্রপট। অবশেষে ৩৫ বছর পর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে চাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রাথমিক ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ অক্টোবর। চাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্যানেল তাদের দল সাজাতে শুরু করেছে, আবার কেউ কেউ স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয় প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চাকসুর আমেজ। শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী
১. ইব্রাহীম হোসেন রনি
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চবি
ছাত্র সংসদের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ভাবনা ও পরিকল্পনাকে একীভূত করে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার একাডেমিক এবং সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করে, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা, প্রশাসনের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজসেবামূলক ও সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে। এছাড়া ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পছন্দমতো নির্বাচিত প্রতিনিধি গঠিত হয়। ফলে যেকোনো সমস্যা ও সহযোগিতায় তারা শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্যে এগিয়ে আসে, কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে স্বার্থ হাসিল করার সুযোগ থাকে না। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন হওয়া অবশ্যই আনন্দের। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা চাকসুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হবে এবং নিজেদের বিকশিত করার আরো অবারিত সুযোগ পাবে—শিক্ষার্থী হিসেবে এটাই প্রত্যাশা।
২. জগলুল আহমেদ
শিক্ষার্থী, পদার্থবিদ্যা বিভাগ
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড, তার ভূরাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত জরুরি, অথচ চবি বাংলাদেশে প্রান্তিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার পূর্ণ সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে পারছে না। চবির ছাত্রদের আবাসন সমস্যা প্রকট, টিএসসির মতো মৌলিক স্থাপনা এখানে নেই। চবির ছাত্ররা নিরাপত্তা সংকটে ভোগে—তাদের এলাকাবাসীর সঙ্গে নজিরবিহীন সংঘাতের মোকাবিলা করতে হয়েছিল এই সেদিন। ১ হাজার ৫০০ ছাত্র আহত হয়েছেন, অথচ এখনো জীবনসংকটে থাকা ছাত্রদের কথা না বলে মিডিয়া ব্যস্ত ‘সহজ-সরল’ গ্রামবাসীর ওপর সহিংসতার কথা উল্লেখ করতে।
অর্থাৎ, চবির ছাত্রদের জীবনের দাম আসলে খুব একটা বেশি নয়। চাকসুর লক্ষ্য হবে চবির এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেওয়া। আমাদের চবি ও ছাত্রদের তাদের প্রাপ্য অবস্থানে নিতে হবে। চাকসুর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে সেই লম্বা পথে প্রথম পদক্ষেপ।
৩. তাহসিনা রহমান
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদ
চাকসু নির্বাচন দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাচ্ছে। এটা শুধু আনুষ্ঠানিক নির্বাচন নয়, বরং আমাদের প্রজন্মের হাতে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার এক ঐতিহাসিক সুযোগ। আমি বিশ্বাস করি, চাকসু হবে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মঞ্চ, যেখানে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে আদর্শ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে। যারাই নির্বাচিত হবেন, তাদের ‘ভিশন’ হতে হবে এমন এক চাকসু নির্মাণ করা, যা শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করবে, একাডেমিক ও গবেষণার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। আমি চাই চাকসু হোক জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির প্রাথমিক পাঠশালা, যেখান থেকে আগামী দিনের রাষ্ট্রনেতা ও নীতিনির্ধারকেরা গড়ে উঠবেন। এই নির্বাচন হবে শুধু প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য নয়, বরং পরিবর্তনের এক নতুন যুগের সূচনা করবে।
৪. খাদিজা আফরিন মিতু
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক পরিবেশবান্ধব ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি হলেও এটি নারী শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় নয়। চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সৃজিত হতে পারে এক যুগান্তকারী নারী শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্ষদ থেকেও নারীদের ‘নিছক শব্দে’ বিশেষায়িত করার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় নারী শিক্ষার্থীদের যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়ে। শাটল ট্রেন ও বাস থাকলেও ভিড় ও নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক সময় তাদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হলসংখ্যা সীমিত এবং সিট সংকট প্রবল। রুমের ভিড় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবও সমস্যা তৈরি করে। রাতে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির নানা ধরনের অভিযোগ আছে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা মেডিকেল সেবা নেই। জরুরি পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন। সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমে মেয়েদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া লাইব্রেরি, ক্লাসরুম, কমনরুম, টয়লেট প্রভৃতির মতো পর্যাপ্ত নারীবান্ধব অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। একটি নিরেট ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের আওতাধীন চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে নারী শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের নতুন দিগন্ত।
৫. সাঈদ বিন হাবিব
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে গণতন্ত্রচর্চার জন্য ছাত্রসংসদ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছাত্রসংসদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারছেন না, যারা তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবেন সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে। এবার যখন চাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মনে বাড়ছে উত্তেজনা, প্রত্যাশা ও অধিকার আদায়ের প্রেরণা। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থাহীনতা প্রবল। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রভাব, ‘মাদারপার্টি’র নেতার নামে স্লোগান, প্রটোকল দেওয়া, দলীয় দখলদারি, মাদকের বিস্তার, গেস্ট রুম, গণরুম ‘কালচার’ এবং সহিংসতা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনগুলোর বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল। ’৯০-পরবর্তী বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোয় রাজনৈতিক দল এবং সরকার ছাত্রসংসদ নির্বাচন হতে দেয়নি, যা তাদের দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ।
আমি প্রত্যাশা করি, দীর্ঘ সময় পর চাকসু নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, যে নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতা নয়, তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন—যারা চাকসুতে নিজের কথা নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বলবেন, অধিকার আদায়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে কাজ করবেন।
৬. মাহফুজুর রহমান
শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ
চাকসু শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অধিকারবোধ জাগ্রত করার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যার ফলে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসে শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ছাত্রজনতার ‘গণঅভ্যুত্থানের’ পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল বৈধ প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়া, যে কারণে চাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি।
প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলা এবং ভৌগোলিক অবস্থার কারণে অন্য যেকোনো ক্যাম্পাসের চেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের পরিমাণ বেশি। সেদিক থেকে চাকসু আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর, যা শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহন, খাবারের মান, একাডেমিক অব্যবস্থাপনা, গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি চাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতাদর্শিক ভিন্নতা থাকার শর্তেও পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের পর স্থগিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আগামী ২৭ অক্টোবর পালিত হবে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
৫ ঘণ্টা আগে১৮৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে ব্যথাহীন অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। দাঁতের চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম মর্টন রোগী গিলবার্ট অ্যাবটের মুখে ইথার গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী
৫ ঘণ্টা আগেকরোনা ভ্যাকসিনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে রয়েছে নানা ভুল ধারণা এবং অন্ধবিশ্বাস। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্ক্যাবিসসহ কিছু সংক্রামক চর্মরোগ মহামারির আকার ধারণ করেছে। বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। আবার
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগবালাই আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশে হেমন্তকালের শেষের দিকে শীতকাল খুব কাছাকাছি চলে আসে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় তাপমাত্রার ওঠানামা ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বরসহ অন্যান্য রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
৬ ঘণ্টা আগে