নীলটুনি

ফয়জুল আল আমীন
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩০

নীলটুনি, যার ইংরেজি নাম ‘Purple Sunbird’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘Nectarina asiatic’। কোথাও কোথাও নীলটুনিকে দুর্গা টুনিও বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলে ‘বাংলাদেশের হামিংবার্ড’। ঢাকা শহরসহ দেশের সব এলাকায়ই নীলটুনি দেখতে পাওয়া যায়। নীলটুনিই একমাত্র পাখি, যে গেরস্ত বাড়ির আঙিনার বরই, ডালিম, লাউয়ের ডগা বা মাচানের কঞ্চি ছাড়া অন্য কোথাও বাসা বাঁধে না। রাতের বেলা আশ্রয়ের জন্য ওদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হচ্ছে পেঁপে পাতা।

নীলটুনির প্রধান খাবার ফুলের মধু হলেও এরা মাকড়সা ও কীটপতঙ্গও খায়। বাসা বাঁধার ও বাচ্চা দেওয়ার সময় পুরুষ পাখি প্রচণ্ড রকম গান করে, আনন্দ করে। তবে বাসা বাঁধা ও ডিমে তা দেওয়ার কাজ স্ত্রী নীলটুনি একা করলেও বাচ্চাদের খাবার কিন্তু দুজনে মিলে খাওয়ায়। নীলটুনির বাসা ঝুলন্ত থলের মতো এবং সেই বাসায় ঢোকার মুখে হুড বা কার্নিশের মতো থাকে। ওদের বাচ্চা হয় মূলত বসন্ত ঋতুতে। ওরা যে এলাকায় বাস করে, সে এলাকায় অন্য নীলটুনিকে বাসা বানাতে দেয় না। তাই এক গ্রামে পাঁচ-সাত জোড়ার বেশি নীলটুনি দেখা যায় না।

বিজ্ঞাপন

দূর থেকে পুরুষ নীলটুনিকে দেখে মনে হয় ওরা ছোট লম্বা এক কালো পাখি। কিন্তু আসলে ওদের গায়ের রং কালো নয়, গাঢ় নীলচে বা ধাতব বেগুনি। আর ঠোঁট হয় সরু, লম্বা ও বাঁকানো। ওদের দেহের এ ধাতব বেগুনি রং কেবল কাছ থেকে এবং চোখের সমান্তরালে বা উঁচু থেকে দেখলে বোঝা যায়। অত্যন্ত সরু জিভ নলের মতো হওয়ায় ফুলের ভেতর থেকে অনায়াসে মধু টেনে নিতে পারে । মায়াবী চোখ। অত্যন্ত চঞ্চল। স্ত্রীর পিঠ হালকা হলুদ, তাতে থাকে বাদামির ছোঁয়া। সব মিলে জলপাই-পাটকেলে। লেজের অগ্রভাগ কালচে। পুরুষের ওড়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার হলেও স্ত্রীর বেলায় তা ৩০ কিলোমিটার। ওরা বাঁচে ৮ থেকে ১২ বছর।

নীলটুনিরা পাটের আঁশ, ঘাসফুল, কাশফুল, তুলো, সরু ঘাস, মাকড়সার জাল ইত্যাদি দিয়ে অত্যন্ত আরামদায়ক বাসা বানায়। সাধারণত প্রতিবার ওরা তিনটি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ধূসর। তার মাঝে সাদাটে ভাব থাকে। ডিমের গায়ে ধূসর অথবা বাদামি ছিট থাকে। ডিম টিকটিকির ডিমের চেয়েও তিনগুণ বড় হয়। ১৪-১৫ দিন তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চারা ১৬-১৭ দিনের মাথায় বাসা ছাড়ে। বাসা ছাড়ার পরও বাচ্চারা সপ্তাহ দুয়েক মা-বাবার কাছাকাছি থাকে।

নীলটুনিদের গানের শব্দ ৮০০ বর্গমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। দিনে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা ওরা গান গেয়ে কাটায়। ওদের মতো ফুর্তিবাজ, চঞ্চল ও গাইয়ে পাখি বাংলাদেশে খুবই কম আছে; যেন আনন্দ-ফুর্তি করার জন্যই ওদের জন্ম হয়েছে। গান শুরু করে আস্তে, তারপর বাড়তে বাড়তে তা ক্লাইমেক্সে পৌঁছে যায় । বাঁশের আগা বা যে কোনো গাছের শীর্ষদেশে বসে গান গাইতে ওরা পছন্দ করে। পথ চলতে যদি কখনও ‘তুইউ-ই... চিহিহি ... হুইচো... ইচিইট...’ শব্দ কানে আসে, তা হলে বুঝে নেবে তোমার আশপাশেই কোনো গাছে বসে নীলটুনি মনের আনন্দে গান গাইছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত