রঙিন প্রকৃতি বসন্ত

মোখতারুল ইসলাম মিলন
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ৪৫

শীতের কুয়াশা ভেদ করে যখন বসন্ত আসে, প্রকৃতি তখন নতুন প্রাণ ফিরে পায়। নিষ্প্রাণ বৃক্ষের ডালপালা সবুজে ঢেকে যায়, ফুলের বাগান রঙিন হয়ে ওঠে, আর বাতাসে ভাসে এক মিষ্টি সুবাস। বসন্ত শুধু একটি ঋতু নয়, এটি প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি।

বিজ্ঞাপন

বসন্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি তার পুরোনো রুক্ষতা ঝেড়ে ফেলে নতুন সাজে সেজে ওঠে। শিমুল, পলাশ ও কৃষ্ণচূড়ার মতো আগুনরাঙা ফুল প্রকৃতিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। ফাগুনের বাতাস যখন দোল খায়, তখন মনে হয় প্রকৃতি নিজেই সুর তুলে দুলছে।

বসন্তের সময় প্রকৃতিতে এক বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায়। চারপাশে গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, শুকনো ডালপালায় প্রাণ ফিরে আসে। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে গাছপালা। বাতাসে মিষ্টি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে বকুল, নাগকেশর, গন্ধরাজ ও চাঁপা ফুলের সুবাস মন মাতিয়ে তোলে। পাখির কূজন বেড়ে যায়, বিশেষ করে দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও বুলবুলি বসন্তের গান শোনায়। প্রজাপতির ওড়াউড়ি বেশি দেখা যায়, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু খুঁজে বেড়ায়। অনেক গাছে নতুন কচি পাতা আসে, যা প্রথমে লালচে রঙের হয়, পরে সবুজ হয়ে যায়। ফাল্গুন আর চৈত্র মাসজুড়ে বসন্ত উৎসব হয়, রঙের খেলা চলে আর সারা পরিবেশকে মোহিত করে রাখে।

এই ঋতুতে ফসলের ক্ষেতেও নতুন প্রাণ ফিরে আসে। আম, লিচু ও কাঁঠাল গাছ মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যায়। সরিষার ক্ষেত দিগন্তজোড়া সোনার চাদর বিছিয়ে দেয়। কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে, কারণ বসন্ত মানেই আশার প্রতীক।

বসন্ত শুধু প্রকৃতিকেই নয়, মানুষের মনকেও প্রভাবিত করে। এই ঋতুতে মনে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে, সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধি পায়। কবি-সাহিত্যিকেরা বসন্তকে নিয়ে অগণিত কবিতা ও গান রচনা করেছেন। বসন্ত উৎসব, দোলযাত্রা, পহেলা ফাল্গুন—এসবই মানুষের মনের আনন্দ উদ্‌যাপনের প্রতিচ্ছবি।

বসন্ত প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। এটি কেবল রূপের নয়, এটি নবজীবনের, নবসৃষ্টির ঋতু। এই ঋতু আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রতিটি কঠিন সময়ের পরই আসে নতুন সূর্যোদয়। প্রকৃতি তার চিরন্তন ছন্দে বসন্তকে বরণ করে নেয়, আর আমরা মুগ্ধ বিস্ময়ে তার সৌন্দর্য উপভোগ করি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত