আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির কারণ

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী

দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির কারণ

শুকনো কাশি বা দীর্ঘদিনের কাশি এমন এক বিরক্তিকর সমস্যা, যা অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ, কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে। এর ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা হ্রাস—সবই দেখা দেয়। দীর্ঘস্থায়ী কাশির পেছনে সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট ও চিকিৎসাযোগ্য কারণ থাকে। নিচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি কারণ তুলে ধরা হলো।

বিজ্ঞাপন

কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা

অ্যাজমার একটি বিশেষ ধরন হলো কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা। এতে সাধারণ অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ বা সাঁই-সাঁই শব্দ নাও থাকতে পারে, বরং অবিরাম শুকনো কাশিই এর প্রধান এবং অন্যতম উপসর্গ। এই ধরনের কাশি সাধারণত রাতে বেশি হয়। ধুলাবালু, ঠান্ডা বাতাস, ঘরবাড়ির অ্যালার্জেন, এমনকি ঋতু পরিবর্তনের সময় শীতের শুরুতেও উপসর্গ তীব্র হয়ে উঠতে পারে। উপসর্গ বারবার দেখা দিলে চিকিৎসক শ্বাসক্রিয়া পরীক্ষা (spirometry) করে কারণ নির্ণয় করতে পারেন। স্পাইরোমেট্রি ফুসফুসের ক্ষমতা ও বায়ুপ্রবাহ পরিমাপ করে, যা হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) মতো অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজন হলে রোগনিয়ন্ত্রণে উপযোগী ইনহেলার সাময়িক ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে এ রোগ শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

পোস্ট-ন্যাসাল ড্রিপ

নাক বা সাইনাসে অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি হলে তা ধীরে ধীরে গলার পেছন দিকে গড়িয়ে পড়ে। এই মিউকাস গলার সংবেদনশীল নার্ভগুলোকে উত্তেজিত করে; ফলাফল শুকনো ও বিরক্তিকর কাশি। এটি রাত ও ভোরে বেশি হয়। কারণ শোয়ার সময় মিউকাস গলায় জমা হয়, এছাড়া ঘুম থেকে ওঠার পর কাশি বেশি দেখা যায়। যাদের অ্যালার্জিজনিত হাঁচি-সর্দি, সাইনুসাইটিস, নাকের হাড় বাঁকা থাকার সমস্যা, নাক বন্ধ থাকা বা ধুলাবালুতে সংবেদনশীলতা আছে, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি হয়। দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির অন্যতম প্রচলিত উৎস এই পোস্ট-ন্যাসাল ড্রিপ।

জিইআরডি

পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে এলে টক ঢেকুর, বুকজ্বালা, গলায় জ্বালাপোড়া এবং সঙ্গে ধারাবাহিক কাশি দেখা দিতে পারে। মসলাদার খাবার, ভাজাপোড়া, চকলেট, কফি, টক খাবার—এসব জিইআরডি বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়াও ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি করে। জিইআরডি নিয়ন্ত্রণে আনলে অনেক ক্ষেত্রে কাশি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

ভাইরাল সংক্রমণের পর দীর্ঘস্থায়ী কাশি

অনেক সময় সর্দি-জ্বরের উপসর্গ সেরে গেলেও শ্বাসনালি কিছুদিন অতিসংবেদনশীল থাকে, যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে কাশি স্থায়ী হতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই ধীরে ধীরে উপসর্গ কমে আসে। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা এবং আদা, লেবু, মধু, লবঙ্গ বা দারুচিনিযুক্ত গরম চা উপসর্গ কমাতে সহায়তা করে।

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ACE inhibitor শ্রেণির ওষুধ অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শুকনো কাশির কারণ হতে পারে। নিয়মিত কাশির কারণ খুঁজে না পেলে ওষুধের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসক বিকল্প ওষুধ বেছে নেন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (ইএনটি), ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন