গর্ভধারণ একজন নারীর জীবনের একটি বিশেষ ও সংবেদনশীল সময়। এ সময় শরীর ও মনে নানা পরিবর্তন ঘটে, যা মা ও সন্তানের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে গর্ভাবস্থায় হৃদরোগ এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২–৪ শতাংশ গর্ভবতী নারী কোনো না কোনো ধরনের হৃদরোগে ভোগেন এবং মাতৃমৃত্যুর একটি বড় অংশ এ কারণেই ঘটে।
প্রধান কারণগুলো
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ : গর্ভাবস্থার প্রায় ৫-১০ শতাংশ নারী এতে আক্রান্ত হন। এর অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে প্রি-এক্লাম্পসিয়া দেখা দেয়, যা মা ও শিশুর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
* পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি : গর্ভাবস্থার শেষদিকে বা প্রসব-পরবর্তী সময়ে হঠাৎ হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আফ্রিকা ও হাইতিতে এর হার তুলনামূলক বেশি হলেও বাংলাদেশেও এর ঘটনা কম নয়।
* জন্মগত হৃদরোগ : প্রতি ১০,০০০ প্রসবে প্রায় ৯ জন নারীর মধ্যে এটি পাওয়া যায়, যা মাতৃমৃত্যুর প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী।
গর্ভধারণের সময় মায়ের দেহে স্বাভাবিক পরিবর্তন
* রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
* হৃৎস্পন্দন বাড়ে প্রতি মিনিটে গড়ে ৩০ বার।
* কার্ডিয়াক আউটপুট বেড়ে যায় প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।
হৃদরোগে আক্রান্ত নারীদের জন্য এগুলো মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
কোন লক্ষণগুলো বিপজ্জনক?
* হঠাৎ শ্বাসকষ্ট।
* অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন।
* অত্যধিক ফোলা (এডিমা)।
* স্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ।
এসব উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
করণীয়
* গর্ভধারণের আগে হৃদরোগ পরীক্ষা ও ঝুঁকি মূল্যায়ন।
* উচ্চঝুঁকির রোগীদের (WHO Class III ও IV) ক্ষেত্রে বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রসবের ব্যবস্থা করা।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন নয়—কারণ কিছু ওষুধ (যেমন : ACE ইনহিবিটর, ওয়ারফারিন) গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ।
* স্বাভাবিক প্রসবকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, তবে জটিল ক্ষেত্রে সিজারিয়ান প্রয়োজন হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় হৃদরোগ নিঃসন্দেহে একটি নীরব ঘাতক, তবে সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে। শুধু চিকিৎসক নয়, স্বামী ও পরিবারের দায়িত্বও সমান। গর্ভাবস্থার কষ্ট ভাগাভাগি করা মানেই মায়ের জীবনকে আরো নিরাপদ করা। তাই গর্ভকালীন সময়ে সঠিক যত্ন ও নিয়মিত চিকিৎসা মায়ের এবং শিশুর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি
সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

