ওজন কমানোর প্রচলিত মিথ

ডা. জয়
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ১৩: ০৮

ওজন কমানো নিয়ে আমরা প্রতিদিনই নানা ধরনের তথ্য শুনি—কখনো বন্ধুদের মুখে, কখনো ইউটিউবে, আবার কখনো সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল ভিডিওতে। তবে এর সবই কি সত্যি, নাকি অনেকটাই ভ্রান্ত ধারণা? এই লেখায় আমরা প্রচলিত কিছু প্রশ্ন তুলব এবং ব্যাখ্যা করব—মিথ না সত্য?

প্রশ্ন : না খেয়ে থাকলে কি দ্রুত ওজন কমে?

বিজ্ঞাপন

উত্তর : মিথ। কারণ না খেয়ে থাকলে আপনার শরীর শক্তি বাঁচাতে বিপাকক্রিয়া কমিয়ে দেয়। এতে ওজন কমার বদলে দুর্বলতা, পেশি ক্ষয় এবং পরবর্তী সময়ে হঠাৎ বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

প্রশ্ন : ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন-সংবলিত স্লিমিং চা, সাপ্লিমেন্ট বা ড্রিংক খেলেই কি ওজন কমে যায়?

উত্তর : মিথ । এগুলো অনেক সময় ক্ষতিকর এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। ওজন কমানোর কোনো শর্টকাট নেই—স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও লাইফস্টাইলই স্থায়ী সমাধান।

প্রশ্ন : লেবুপানি খেলে কি চর্বি গলে যায়?

উত্তর : মিথ । লেবুপানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে, তবে এটি চর্বি গলায় না। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, কিন্তু জাদুকরী নয়।

প্রশ্ন ৪ : শুধু ব্যায়াম করলেই ওজন কমে যাবে।

উত্তর : মিথ। ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ হলেও খাবারই ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি। গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ অবদান রাখে খাদ্যাভ্যাস এবং ২০ শতাংশ ব্যায়াম। শুধু শরীরচর্চা করে ভুল খাবার খেলে ফল মিলবে না। ক্যালরি ঘাটতি তৈরি না হলে শুধু ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানো খুব কঠিন।

প্রশ্ন : ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কি স্বাস্থ্যকর?

উত্তর : ‘সত্য — (শর্তসাপেক্ষে)।’ সঠিকভাবে করলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা হ্রাস এবং কোষের মেরামতে (Autophagy) সহায়তা করে। Autophagy কী? এটি হলো কোষের পুরোনো ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো সরিয়ে দিয়ে নতুন অংশ তৈরির প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা না খেলে শুরু হয়। এ সময়ে পানি, ব্ল্যাক কফি ও চিনি ছাড়া চা খাওয়া যায়। যাদের ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা বা অন্য শারীরিক জটিলতা রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শুরু করা উচিত।

প্রশ্ন : কার্বোহাইড্রেট খেলে মোটা হওয়া অবশ্যম্ভাবী।

উত্তর : মিথ । সব কার্বোহাইড্রেট খারাপ নয়। সাদা ভাত, প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন পাউরুটি, বিস্কুট, সফট ড্রিংকস প্রভৃতি খাবার কমিয়ে দিয়ে যদি শস্য, ফল ও সবজি খাওয়া হয়, তবে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।

প্রশ্ন : রাতে খেলে মানুষ মোটা হয়।

উত্তর : আংশিক সত্য। রাতের খাবার যদি ভারী হয়, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে খাওয়া হয়, তবে তা হজমে সমস্যা ও চর্বি জমার কারণ হতে পারে। এখানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো সারা দিনের মোট ক্যালরি ইনটেক। এর জন্য আপনার BMR ও TDEE সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা থাকতে হবে। তখন আপনি ক্যালরি হিসাব করে খেতে পারবেন এবং কখন খাচ্ছেন, তাতে খুব একটা পার্থক্য হবে না।

প্রশ্ন : দিনে একবার খেলে ওজন কমে যাবে।

উত্তর : মিথ ও ঝুঁকিপূর্ণ। দিনে একবার খেলে শরীর স্টারভেশন মোডে চলে যায়, যা বিপাকক্রিয়া কমিয়ে দেয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, পেশি ক্ষয় হয় এবং পরের বেলায় বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন : কিটো ডায়েট কি দ্রুত ওজন কমানোর জন্য নিরাপদ উপায়?

উত্তর : মিথ। কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট প্রায় বাদ দিয়ে চর্বি ও প্রোটিন খাওয়া হয়, ফলে শরীর কেটোসিসে গিয়ে ফ্যাট পোড়ায় এবং ওজন কমে। স্বল্প মেয়াদে এটি কার্যকর হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এতে কঠিন ও পুষ্টির ঘাটতি, কিডনি সমস্যাসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি শুরু করা উচিত নয়।

উপসংহার

ওজন কমানো মানে না খেয়ে থাকা নয়, বরং জেনে-শুনে খাওয়া। এখানে কোনো শর্ট কাট নেই—সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারাই মূল চাবিকাঠি। ভুল তথ্য থেকে সাবধান থাকুন, নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যকে ভালোবাসুন।

বিষয়:

ওজন
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত