কোরবানির পশু ডিজিটাল হাটে

আরিফ বিন নজরুল
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ১১: ৩২

একসময় কোরবানির ঈদ মানেই ছিল ঘর্মাক্ত দুপুরে পশুর হাটে ঘুরে বেড়ানো। হাঁকডাক, দরদাম আর শেষে ক্লান্তির সঙ্গে তৃপ্তি। সেই হাট এখন জায়গা করে নিচ্ছে অনলাইনের স্ক্রিনে। যেখানে গরু বা খাসি খুঁজতে ঘাম ঝরাতে হয় না। বরং কয়েকটি ক্লিকেই মিলছে কাঙ্ক্ষিত কোরবানির পশু। পরিবর্তনটা শুধু প্রযুক্তিগত নয়। এটি গ্রাহক অভ্যাস, সময় ব্যবস্থাপনায় এক নীরব বিপ্লব এনে দিয়েছে।

প্রযুক্তির এই নতুন যুগে কোরবানির পশু কেনার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস। দেশের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে Bikroy.com, যারা কোরবানির ঈদের আগে ‘বিরাট হাট’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রায় ৯,০০০ পশুর বিজ্ঞাপন নিয়ে হাজির হয়। আরেকটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফরম Bengal Meat, যারা তাদের নিজস্ব খামারে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে লালিত গরু ও ছাগল সরবরাহ করে থাকে। পশুর মানের নিশ্চয়তা। হোম ডেলিভারি এবং প্রসেসিং সেবা—সবই পাওয়া যায় একই সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া রয়েছে Pranisheba Shop, যারা প্রতিটি গরুকে আইডি নম্বর দিয়ে বুকিং সহজ করেছে এবং ঈদের দিন সরাসরি কসাই দিয়ে পশু জবাই, প্রসেসিং ও হোম ডেলিভারি পর্যন্ত সম্পন্ন করে দেয়। Goat Depot-এর মতো প্ল্যাটফরম বিশেষভাবে খাসি ও ছাগলের জন্য পরিচিত। যেখানে গৃহপালিত এবং বিভিন্ন জাতের ছাগল পাওয়া যায়। আর Online Fish Bazar ও Sadeeq Agro-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কোরবানির পশুর সঙ্গে ‘ফুল কোরবানি সার্ভিস’ও দিয়ে থাকে। যেখানে শুধু পশু কেনা নয়। বরং জবাই থেকে শুরু করে প্যাকেট করে মাংস ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সম্পূর্ণ সেবা থাকে।

সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত Palli Qurbani Haat-ও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যেখানে সুলভমূল্যে গরু ও খাসি কিনতে পারছেন শহরবাসী। পাশাপাশি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ—যেমন Cattle Bazar বা Listolet Inc-এর মাধ্যমে অনেকে সরাসরি খামারিদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। লাইভ ভিডিওতে গরু দেখে নিচ্ছেন এবং ঘরে বসেই অর্ডার করছেন।

তবে এই অনলাইন হাটের সঙ্গে যেমন স্বাচ্ছন্দ্য ও সময় সাশ্রয়জুড়ে আছে। তেমনি কিছু সতর্কতাও জরুরি। অনলাইনে গরু কেনার আগে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দাঁত দেখে বয়স বোঝা। চোখের উজ্জ্বলতা ও চামড়ার স্বাস্থ্য দেখে প্রাণীর অবস্থা যাচাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক সময় ছবিতে একরকম দেখা গেলেও বাস্তবে পশুটি অন্যরকম হতে পারে। তাই ভিডিও কলে সরাসরি দেখে নেওয়া ভালো। পাশাপাশি বিক্রেতার রিভিউ ও রেটিং দেখে বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করাও জরুরি। যারা হোম ডেলিভারি ও প্রসেসিং সেবা দেয়। তাদের আগের সেবার মান সম্পর্কে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি, ঈদের ধর্মীয় রীতি পালনের সঙ্গে প্রযুক্তির এক মোহনীয় মিশ্রণ ঘটেছে। এটি শুধু ডিজিটাল সুবিধার বিষয় নয়। বরং একটি নতুন সাংস্কৃতিক রূপান্তরও। যেখানে কোরবানির পশু এখন হাটের ধুলোয় নয়। বরং স্ক্রিনের আলোয় বিকশিত হচ্ছে। এক ক্লিকে আসছে ঈদের প্রস্তুতি। এক অর্ডারেই ঘরে পৌঁছাচ্ছে কোরবানির পশু।

এই ‘ডিজিটাল হাট’ শুধু সময়ের দাবি নয়। এটি ভবিষ্যতের একটি বাস্তবতা। আমাদের দরকার প্রযুক্তিকে বোঝা। এর সুযোগকে গ্রহণ করা এবং সচেতন থেকে ব্যবহার করা। তাহলেই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কোরবানি হবে আরো স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ, নিরাপদ ও পূর্ণতা পাওয়া এক আনুষ্ঠানিকতা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত