র‍্যানসমওয়্যার হুমকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ

নাদিম নওশাদ
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৪: ০০

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বিশেষ করে সাইবার আক্রমণে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এআইয়ের অপব্যবহার করে সাইবার অপরাধীরা আরো জটিল ও কার্যকর আক্রমণ চালাতে সক্ষম হবে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয়। বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় র‍্যানসমওয়্যার হামলা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাইবার অপরাধীরা তথ্য এনক্রিপ্ট করা ছাড়াও তথ্য চুরির মতো কাজও করছে। তাই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিও বেড়ে গেছে।

র‍্যানসমওয়্যার কী

বিজ্ঞাপন

র‍্যানসমওয়্যার হলো এক ধরনের ম্যালওয়্যার। এটি ব্যবহার করে হ্যাকাররা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত হ্যাকাররা ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য এনক্রিপ্ট করে। এ কাজে বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। ফলে অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা কঠিন হয়ে পড়ে। র‍্যানসমওয়্যার সাধারণত ই-মেইল, ক্ষতিকারক সফটওয়্যার, ফিশিং ওয়েবসাইট বা দুর্বল সাইবার নিরাপত্তার সুযোগ নিয়ে কম্পিউটারে প্রবেশ করে।

এআইয়ের মাধ্যমে সাইবার আক্রমণ

প্রযুক্তি খাতে এআইয়ের ব্যবহার নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। হ্যাকাররাও নতুন নতুন টুলস তৈরি করছে শক্তিশালী আক্রমণ পরিচালনা করার জন্য। এআই দ্বারা নির্মিত নতুন এসব টুলস স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিশিং ইমেইল তৈরি, ম্যালওয়্যার আপডেট এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা খুঁজে বের করতে পারে। এতে করে আক্রমণগুলো আরো নির্ভুল ও কার্যকর হয়ে উঠছে, যা প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

দেশে র‍্যানসমওয়্যার হুমকি কেন উদ্বেগজনক?

বাংলাদেশের ডিজিটাল খাতে ব্যাপক উন্নতি হলেও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি সংস্থা ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের মূল লক্ষ্য হতে পারে। দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভরশীল হয়ে উঠছে। ফলস্বরূপ র‍্যানসমওয়্যার হুমকি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। দেশের কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পর্যাপ্ত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। দুর্বল সাইবার নিরাপত্তার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান হ্যাকারদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক ক্ষতি ও সংবেদনশীল তথ্য চুরির ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের শিকার হলে তাদের পক্ষে তথ্য পুনরুদ্ধারের সুযোগ কম থাকে, যা তাদের অর্থ বিনিময়ে বাধ্য করে। এ ছাড়া বিদেশি হ্যাকাররা সরকারি অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাত টার্গেট করলে জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

র‍্যানসমওয়্যার প্রতিরোধে নিয়মিত ডেটা ব্যাকআপ রাখা ও সেটি নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। এর ফলে আক্রমণের পরেও তথ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। প্রশিক্ষিত কর্মীরা ফিশিং ই-মেইল, সন্দেহজনক লিংক ও ম্যালওয়্যার-সংক্রান্ত ঝুঁকি সম্পর্কে অধিক সচেতন থাকতে পারবে। এ ছাড়া নিয়মিত সফটওয়্যার ও সিস্টেম আপডেট করা, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার ও নেটওয়ার্ক সুরক্ষায় ফায়ারওয়াল স্থাপন র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত ডিজিটাল ফরেনসিক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রমণের আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে এবং আক্রান্ত হলে দ্রুত সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অত্যাধুনিক সাইবার আক্রমণের টুলস তৈরি হচ্ছে, যা আমাদের অনলাইন বিচরণকে আরো অনিরাপদ করে তুলেছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ছোট ও মাঝারি ব্যবসার জন্য বিশেষ সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান র‍্যানসমওয়্যার মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সাইবার নিরাপত্তায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ ও সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। তবেই বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো র‍্যানসমওয়্যার হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত