অনুভবে আল মাহমুদ

মীর মনির মাহমুদ
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৪৯

পৃথিবীর সব সন্তানের কাছে বাবা-মা যেমন অসাধারণ, প্রিয়, অতুলনীয়, আমার চোখেও আমার বাবা-মা অসাধারণ মানুষ। বলব, আমি একজন গর্বিত বাবা-মায়ের সন্তান।

বিজ্ঞাপন

আমার বাবা, আল মাহমুদ ছিলেন সহজ সরল উদার মানুষ। লালসা, অহংকার বাবাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। সারা জীবন মানুষের কল্যাণ কামনা করেছেন। অপরের কল্যাণ করার চেষ্টা করেছেন। জীবনে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। কিন্তু কাউকে কষ্ট দেননি। কখনো নেতিবাচক কথা বলে কাউকে আঘাত করেননি। আব্বা যেমন ছিলেন সারাদেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। আমার কাছেও ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। আব্বার আদর্শজীবন চলার পথে আমাকে সবসময় প্রেরণা জোগায়। আজ আব্বার কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।

আব্বা ছিলেন ভোজনবিলাসী মানুষ। নিজে খেতে পছন্দ করতেন, অন্যকে খাওয়াতেও। ছোটবেলা থেকে দেখেছি, বাড়িতে কোনো না কোনো অতিথি সবসময় থাকতেন। ছুটির দিনে আব্বা নিজের হাতে বাজার করতে পছন্দ করতেন। ছোটবেলায় আব্বার সঙ্গে প্রায়ই বাজারে যেতাম, সেসব মধুর স্মৃতি আজও মনে পড়ে।

আমার আব্বা অত্যন্ত ভালোবাসতেন আমার দাদিকে। দাদির হাতের মুরগির কোরমা আর মাছের কোপ্তা আব্বার খুব পছন্দ ছিল। আম্মার হাতের রান্নাও ছিল ভীষণ প্রিয়। আমার শিং মাছের দোপেয়াজি, টাকি মাছের ভর্তা, গরুর মাংস, ছতা পিঠা ছিল আব্বার বিশেষ পছন্দের। তবে আব্বা খাবার খেতেন পরিমিত পরিমাণে।

মায়ের প্রতি আব্বার ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। সংসারে যে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আম্মার সিদ্ধান্তকে বেশি প্রাধান্য দিতেন আব্বা। কর্মব্যস্ততার মাঝেও আমাদের লেখাপড়ার খোঁজখবর রাখতেন। কখনো বকাঝকা দিতেন না। এমন কি কোনো ব্যাপারে উচ্চবাচ্যও করেননি। ছেলের বউ ও মেয়ের জামাইদের অনেক স্নেহ করতেন।

আব্বার স্মৃতি আমাকে এখনো কাঁদায়। ঈদের দিন নতুন জামাকাপড় পড়ে আতর-সুগন্ধি মেখে আব্বার সঙ্গে ঈদগাহে যেতাম। আতর আব্বার খুব পছন্দের ছিল। নামাজ শেষে ঈদের কোলাকুলি করে বাসায় যেতাম। আম্মার হাতের পোলাও কোরমা সেমাই পায়েস ইত্যাদি ছিল ঈদের প্রধান আয়োজন। আজ আব্বা নেই, আম্মা নেই। সেই সুন্দর দিনগুলো আজও মনে পড়ে। আমার ‍দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসে।

ছোটবেলায় আব্বার সঙ্গে ভাইবোনরা শিল্পকলার প্রোগ্রামে, টিভি চ্যানেলের আয়োজনে, কখনো বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বেড়াতে যেতাম। ছুটির দিনে প্রায়ই আব্বাকে পত্রিকা পড়ে শোনাতাম। আব্বার লেখা কবিতা, গদ্য, কলাম পড়ে শোনাতাম। মাঝে মাঝে আব্বাকে লেখার কাজে সাহায্য করতাম। বানান ভুল হলে সংশোধন করে দিতেন। স্মৃতিতে সেসব সুখ গেঁথে আছে।

আব্বা ছিলেন খুবই শৌখিন পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি একজন মানুষ। লেখালেখির প্রতি যেমন দুর্বলতা ছিল, গান শুনতে, মুভি দেখতে পছন্দ করতেন। আমার মনে আছে, আব্বার প্রিয় একটি গজল ছিল জগজিৎ সিংয়ের গাওয়াÑ

‘এ দৌলত ভি লে লো

এ শহরত ভি লে লো

ভালে ছিন লো মুঝসে মেরি জাওয়ানি

মাগার মুঝ কো লউটা দো বাচপান কা সাওয়ান

ও কাগজ কি কাস্তি ও বারিশ কা পানি’

গজলটি শুনতেন আর গুনগুন করে গাইতেন। সেই গুনগুনানি আমি শুনেছি, মনে আছে। আরেকটি প্রিয় গান কাজী নজরুলের-

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে

এলো খুশির ঈদ।’

আব্বা ছিলেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি। রাতের বেলা যখন জিকির করতেন, সে জিকির আমি শুনতে পেতাম। যেকোনো লেখা, মুভি দেখে আব্বা এতটা আবেগপ্রবণ হয়ে যেতেন যে, কেঁদে দিতেন। আব্বার কান্না দেখে আমাদেরও কান্না পেত। আব্বার স্মৃতি, আব্বার কথা ভুলতে পারি না, ভোলা যায় না। বিশ্বাস করি, আমার আব্বা একজন বেহেশতি মানুষ। আল্লাহ, আমার আব্বাকে বেহেশতের সীমাহীন মর্যাদায় আসীন করুন। আমিন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

আল মাহমুদ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত