বিউটি হাসু
‘মা’ একটিমাত্র অক্ষর, একটি বর্ণ, একটি শব্দ; কিন্তু ‘মা’ মানে একটি পুরো পৃথিবী, সারা বিশ্ব। কেননা জন্মের আগে একটি শিশুর বসবাস, বেড়ে ওঠা—সে তো মায়ের জঠরেই।
‘মা’ এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যে পৃথিবীর সব সুখ সব আনন্দ লুকায়িত। মায়ের শীতল স্পর্শেই যত শান্তি, স্বর্গের সুধা। মায়ের জাদুস্পর্শে নিমিষেই সব কষ্ট ও যন্ত্রণা উধাও হয়ে যায়। তার মমতামাখা আঁচল সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়। তাই তো ‘মা’ শব্দটিতে এত আকুলতা! এত আবেগ! আত্মার এমন নিবিড় হৃদয়ের টান!
‘মায়ের মতো আপন কেহ নাইরে
মায়ের মতো আপন কেহ নাই…।’
গানের ভাষায় বলি আর মনের ভাষায় বলি—এটাই সত্যি, এটাই বাস্তবতা। মায়ের মতো দরদি-মরমি ত্রিভুবনে কেউ হয় না।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শব্দ ‘মা’। একটি নির্লোভ, নির্ভেজাল ও নিরাপদ আশ্রয়ের নাম ‘মা’। এই একটি শব্দেই রয়েছে অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসার মহাসমুদ্র।
অব্যক্ত যন্ত্রণা সহ্য করে মা নিজের রক্তবিন্দু দিয়ে তিল তিল করে সন্তানকে বড় করেন। সন্তানের সঙ্গে মায়ের নাড়ির সম্পর্ক। মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন বলেই তো সন্তানের কোনো বিপদ-আপদ হলে মা সবার আগে জানতে পারেন। তাই তো মায়ের সঙ্গে সন্তানের গভীরতম সম্পর্কের কাছে সব সম্পর্কই গৌণ, যে সম্পর্কের সঙ্গে আর কোনো তুলনা হয় না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মায়ের মতো এমন নিঃস্বার্থভাবে কেউ ভালোবাসেন না। নিজেকে নিঃস্ব করে মা শুধু সন্তানকে দিয়েই যান, কখনো প্রতিদানের আশা করেন না।
‘মা...’ এই ছোট্ট একটি শব্দের মধ্যেই যেন পৃথিবীর তাবৎ সুখ। এই একটি শব্দেই অন্তহীন শান্তি। মা মানেই স্বার্থহীন নিখাদ ভালোবাসা, অকৃত্রিম মমতার অথই সমুদ্র। মায়ের স্পর্শ আর আঁচলতলেই জান্নাতের শান্তি! মায়ের সরল মুখ দেখলেই মিলে নির্মল প্রশান্তি! তাই তো কবি লিখেছেন—
‘মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু যেন ভাই,
ইহার চেয়ে নামটি মধুর
ত্রিভুবনে নাই।’
‘মা’ শব্দটি মায়াভরা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ। ‘মা’ ডাকের মধ্যেই সুধামাখা রয়েছে। ‘মা’ ছোট্ট এই শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অকৃপণ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অসীম ও আশ্চর্য রকমের এক ক্ষমতা। ‘মা’ এই একটি শব্দের মধ্যে পৃথিবীর সকল সুখ-শান্তি, আনন্দ, ভালোবাসা ও সকল মায়া নিহিত আছে। ‘মা’, ‘মাগো’, ‘আম্মা’, ‘আম্মু’, ‘মামণি’, ‘আম্মাজান’, ‘মাম’, ‘মাজি’-শব্দগুলো আমরা কতভাবে উচ্চারণ করি চেতনে-অচেতনে, কত না আবেগ সেখানে! তবে গর্ভধারিণীকে আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, নামের বা ভাষার পার্থক্য সূচিত হয়। এতে ভালোবাসার বা সম্পর্কের কোনো হেরফের হয় না। তাই তো মায়ের মুখের ভাষা হয়ে ওঠে সন্তানের মুখের বুলি, যা মাতৃভাষা নামে পরিচিত। আর মায়ের আঁচলের ছায়ায় যে শান্তি আছে, পৃথিবীর কোথাও কোনো কিছুর বিনিময়ে তা পাওয়া সম্ভব নয়।
মায়ের মতো নিঃস্বার্থভাবে কেউ ভালোবাসে না। নিজেকে নিঃস্ব করে সর্বস্ব দিয়ে শুধু মা-ই সন্তানকে ভালোবাসতে পারে। নিজের আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম, আরাম-আয়েশ—সকল চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে শুধু মা-ই পারে সন্তানের জন্য যেকোনো কিছু ও সবকিছু করতে। তাই তো মায়ের তুলনা শুধু মা-ই। মায়ের স্থান সবার ওপরে। মায়ের ভালোবাসা ও স্নেহের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। নাড়িছেঁড়া ধন সন্তানের জন্য মা কী না করতে পারেন এবং করেন!
চীনের পৌরাণিক একটা গল্প আছে। গল্পটা হলো—‘এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নিতে চাও, বলো? আমি সব পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো…! প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে। মাকে হত্যা করল! তারপর তার হৃৎপিণ্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে…! প্রেমিক ছেলেটি পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল। ছেলেটির হাত থেকে মায়ের তাজা হৃৎপিণ্ডটা ফসকে পড়ে গেল! ছেলেটি মায়ের হৃৎপিণ্ড খুঁজে পেয়ে আবার হাতে তুলে নিল। তখনো ধকধক করছে মায়ের হৃৎপিণ্ড। হাতে নিতেই সেটি বলে উঠল, ব্যথা পেলি, খোকা?’
যদিও এটি নিছকই গল্প। তারপরও মায়ের মন এমনই হয়। বাস্তব জীবনেও সন্তানের প্রতি মায়ের তীব্র ভালোবাসার নিদর্শনও আমরা অনেক দেখেছি, দেখি...।
এবার আমাদের বাস্তব জীবনে ফিরে আসি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় এ ঘটনাটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঘটে। বাড়িতে আগুন লাগার পর মাকে উদ্ধার করেছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু ছোট ছেলেটি তখনো রয়েছে বাড়ির ভেতর। ছেলের জীবন রক্ষার্থে মায়ের কাছে নিজের জীবন ছিল তুচ্ছ। তাই তো নিরাপত্তাকর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাধা ডিঙিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে সেই মমতাময়ী মা আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। আগুনের ফুলকি ও ধোঁয়ার কারণে তারা আর বাইরে বের হতে পারেননি। ছেলের সঙ্গেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন সেই মা।
আমাদের দেশে এই ঘটনাটি ২০১৯ সালে ঘটেছে। লঞ্চে করে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে যাওয়ার পথে চলন্ত লঞ্চ থেকে পড়ে যায় তিন মাসের শিশুসন্তান। তাকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মা। এরপর দুজনই নিখোঁজ হন। পরে দুজনেরই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নাশকতামূলক ঘটনায় ট্রেনে আগুন লাগে। তখন ছেলেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন মা নাদিরা আক্তার পপি। আদরের সন্তানকে আগুন থেকে বাঁচাতে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আগুনের কাছে হার মানে মায়ের প্রতিরোধ। পুড়ে যান মা ও তার তিন বছরের আদরের সন্তান। আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন। তখনো মা শিশু ইয়াসিনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন।
মায়ের আত্মত্যাগের এ রকম অসংখ্য উদাহরণ আছে।
মা ১০ মাস পেটে, তিন বছর বুকে আর সারাজীবন হৃদয়ে আগলে রাখেন। নিজের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে কেবল মা-ই পারেন সন্তানের জীবন রক্ষা করতে। মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। ‘মা’ যেন সীমার মাঝে অসীম। মায়ের তুলনা মা নিজেই।
সন্তান বাইরে থাকলে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত মায়ের মন উদ্বিগ্ন থাকে; ভালোভাবে ঘরে ফিরলে তবেই স্বস্তি মিলে মায়ের, যেন প্রাণ ফিরে পান। সেই মায়ের দিনে কয়বার খোঁজ রাখি (আমরা) সন্তানরা। বছরেও কি জিজ্ঞেস করা হয়- ‘মা তুমি খেয়েছ? তোমার কী খেতে ভালো লাগে!’
পৃথিবীর হাজারো রকম বদল হয়; কিন্তু মায়ের ভালোবাসা চিরন্তন। মায়ের ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন হয় না। সন্তানের অসুখে মায়েরা একই রকমভাবে রাত জাগেন, একই রকমভাবে তার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন; শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত একই রকমভাবে ভালোবাসেন।
মা হলেন আমাদের জীবনের সার্বক্ষণিক কল্যাণকামী; সন্তানের হাসিমুখ দেখেই ভুলে যান সব ক্লান্তি। তার জন্য কতটুকু ফুরসত মিলছে আপনার, আমাদের? অফিস, ক্লাস কিংবা কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করে মাকে তার পছন্দের খাবার খেতে নিয়ে গেছেন কদিন? শেষ কবে মাকে নিয়ে একসঙ্গে বাইরে খেয়েছেন, বেড়াতে নিয়ে গেছেন?
অথচ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, এর-ওর সঙ্গে কত খাওয়া হয়। কয়টা ছুটির দিন মায়ের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন? অথচ সন্তানের সান্নিধ্য পেতে মায়েরা কি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, উন্মুখ হয়ে থাকেন। কজন সন্তান মায়ের ব্যাকুলতা বোঝার ক্ষমতা রাখেন, মাকে বুঝতে পারেন? মায়ের প্রতি আমাদের কর্তব্যের কোনো শেষ নেই। নিজের গায়ের চামড়া দিয়ে মায়ের জুতা বানিয়ে দিলেও সারাজীবনে কখনও মায়ের এক কণা দুধের ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। যদি গানের ভাষায় বলি—
‘মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না
এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো...।’
মায়ের ঋণ অপরিশোধ্য। একজন সন্তানের প্রথম কর্তব্য হলো মাকে খুশি করা। মায়ের মনে কোনো দুঃখ না দেওয়া। মায়ের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার না করা। মাকে সবসময় সম্মান করা। মাকে ভালোবাসা। মায়ের সব আদেশে মেনে চলা। পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের মর্যাদা উচ্চাসনে।
শুধু বিশেষ দিবসে মা-বাবার জন্য ফেসবুকের দেয়ালে দামি দামি কথা পোস্ট নয়; মা-বাবার জন্য ভালোবাসা প্রকাশ হোক বাস্তবে জীবনে কথায়, কাজে ও তাদের সঙ্গে নম্র আচার-আচরণে।
মাকে ভালোবাসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। ৩৬৫ দিনের প্রতিটি সেকেন্ডেই মাকে মনে করতে চাই, ভালোবাসতে চাই। জীবনের প্রতিটি দিনই সন্তানের জন্য মা দিবস, প্রতিটি ক্ষণই সন্তানের জন্য মা দিবস। বাবা-মায়ের সেবা-যত্ন ও খোঁজ-খবর শুধু এক দিনের জন্য নয়, বরং সারা জীবনভর সেবা করার আদেশ আল্লাহপাক আমাদের দিয়েছেন।
পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও অনিঃশেষ ভালোবাসা। কাছে-দূরে যে যেখানেই থাকেন, মায়েরা যেন খুব ভালো থাকেন।
‘মা’ একটিমাত্র অক্ষর, একটি বর্ণ, একটি শব্দ; কিন্তু ‘মা’ মানে একটি পুরো পৃথিবী, সারা বিশ্ব। কেননা জন্মের আগে একটি শিশুর বসবাস, বেড়ে ওঠা—সে তো মায়ের জঠরেই।
‘মা’ এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যে পৃথিবীর সব সুখ সব আনন্দ লুকায়িত। মায়ের শীতল স্পর্শেই যত শান্তি, স্বর্গের সুধা। মায়ের জাদুস্পর্শে নিমিষেই সব কষ্ট ও যন্ত্রণা উধাও হয়ে যায়। তার মমতামাখা আঁচল সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়। তাই তো ‘মা’ শব্দটিতে এত আকুলতা! এত আবেগ! আত্মার এমন নিবিড় হৃদয়ের টান!
‘মায়ের মতো আপন কেহ নাইরে
মায়ের মতো আপন কেহ নাই…।’
গানের ভাষায় বলি আর মনের ভাষায় বলি—এটাই সত্যি, এটাই বাস্তবতা। মায়ের মতো দরদি-মরমি ত্রিভুবনে কেউ হয় না।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শব্দ ‘মা’। একটি নির্লোভ, নির্ভেজাল ও নিরাপদ আশ্রয়ের নাম ‘মা’। এই একটি শব্দেই রয়েছে অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসার মহাসমুদ্র।
অব্যক্ত যন্ত্রণা সহ্য করে মা নিজের রক্তবিন্দু দিয়ে তিল তিল করে সন্তানকে বড় করেন। সন্তানের সঙ্গে মায়ের নাড়ির সম্পর্ক। মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন বলেই তো সন্তানের কোনো বিপদ-আপদ হলে মা সবার আগে জানতে পারেন। তাই তো মায়ের সঙ্গে সন্তানের গভীরতম সম্পর্কের কাছে সব সম্পর্কই গৌণ, যে সম্পর্কের সঙ্গে আর কোনো তুলনা হয় না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মায়ের মতো এমন নিঃস্বার্থভাবে কেউ ভালোবাসেন না। নিজেকে নিঃস্ব করে মা শুধু সন্তানকে দিয়েই যান, কখনো প্রতিদানের আশা করেন না।
‘মা...’ এই ছোট্ট একটি শব্দের মধ্যেই যেন পৃথিবীর তাবৎ সুখ। এই একটি শব্দেই অন্তহীন শান্তি। মা মানেই স্বার্থহীন নিখাদ ভালোবাসা, অকৃত্রিম মমতার অথই সমুদ্র। মায়ের স্পর্শ আর আঁচলতলেই জান্নাতের শান্তি! মায়ের সরল মুখ দেখলেই মিলে নির্মল প্রশান্তি! তাই তো কবি লিখেছেন—
‘মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু যেন ভাই,
ইহার চেয়ে নামটি মধুর
ত্রিভুবনে নাই।’
‘মা’ শব্দটি মায়াভরা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ। ‘মা’ ডাকের মধ্যেই সুধামাখা রয়েছে। ‘মা’ ছোট্ট এই শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অকৃপণ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অসীম ও আশ্চর্য রকমের এক ক্ষমতা। ‘মা’ এই একটি শব্দের মধ্যে পৃথিবীর সকল সুখ-শান্তি, আনন্দ, ভালোবাসা ও সকল মায়া নিহিত আছে। ‘মা’, ‘মাগো’, ‘আম্মা’, ‘আম্মু’, ‘মামণি’, ‘আম্মাজান’, ‘মাম’, ‘মাজি’-শব্দগুলো আমরা কতভাবে উচ্চারণ করি চেতনে-অচেতনে, কত না আবেগ সেখানে! তবে গর্ভধারিণীকে আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, নামের বা ভাষার পার্থক্য সূচিত হয়। এতে ভালোবাসার বা সম্পর্কের কোনো হেরফের হয় না। তাই তো মায়ের মুখের ভাষা হয়ে ওঠে সন্তানের মুখের বুলি, যা মাতৃভাষা নামে পরিচিত। আর মায়ের আঁচলের ছায়ায় যে শান্তি আছে, পৃথিবীর কোথাও কোনো কিছুর বিনিময়ে তা পাওয়া সম্ভব নয়।
মায়ের মতো নিঃস্বার্থভাবে কেউ ভালোবাসে না। নিজেকে নিঃস্ব করে সর্বস্ব দিয়ে শুধু মা-ই সন্তানকে ভালোবাসতে পারে। নিজের আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম, আরাম-আয়েশ—সকল চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে শুধু মা-ই পারে সন্তানের জন্য যেকোনো কিছু ও সবকিছু করতে। তাই তো মায়ের তুলনা শুধু মা-ই। মায়ের স্থান সবার ওপরে। মায়ের ভালোবাসা ও স্নেহের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। নাড়িছেঁড়া ধন সন্তানের জন্য মা কী না করতে পারেন এবং করেন!
চীনের পৌরাণিক একটা গল্প আছে। গল্পটা হলো—‘এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নিতে চাও, বলো? আমি সব পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো…! প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে। মাকে হত্যা করল! তারপর তার হৃৎপিণ্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে…! প্রেমিক ছেলেটি পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল। ছেলেটির হাত থেকে মায়ের তাজা হৃৎপিণ্ডটা ফসকে পড়ে গেল! ছেলেটি মায়ের হৃৎপিণ্ড খুঁজে পেয়ে আবার হাতে তুলে নিল। তখনো ধকধক করছে মায়ের হৃৎপিণ্ড। হাতে নিতেই সেটি বলে উঠল, ব্যথা পেলি, খোকা?’
যদিও এটি নিছকই গল্প। তারপরও মায়ের মন এমনই হয়। বাস্তব জীবনেও সন্তানের প্রতি মায়ের তীব্র ভালোবাসার নিদর্শনও আমরা অনেক দেখেছি, দেখি...।
এবার আমাদের বাস্তব জীবনে ফিরে আসি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় এ ঘটনাটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঘটে। বাড়িতে আগুন লাগার পর মাকে উদ্ধার করেছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু ছোট ছেলেটি তখনো রয়েছে বাড়ির ভেতর। ছেলের জীবন রক্ষার্থে মায়ের কাছে নিজের জীবন ছিল তুচ্ছ। তাই তো নিরাপত্তাকর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাধা ডিঙিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে সেই মমতাময়ী মা আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। আগুনের ফুলকি ও ধোঁয়ার কারণে তারা আর বাইরে বের হতে পারেননি। ছেলের সঙ্গেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন সেই মা।
আমাদের দেশে এই ঘটনাটি ২০১৯ সালে ঘটেছে। লঞ্চে করে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে যাওয়ার পথে চলন্ত লঞ্চ থেকে পড়ে যায় তিন মাসের শিশুসন্তান। তাকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মা। এরপর দুজনই নিখোঁজ হন। পরে দুজনেরই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নাশকতামূলক ঘটনায় ট্রেনে আগুন লাগে। তখন ছেলেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন মা নাদিরা আক্তার পপি। আদরের সন্তানকে আগুন থেকে বাঁচাতে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আগুনের কাছে হার মানে মায়ের প্রতিরোধ। পুড়ে যান মা ও তার তিন বছরের আদরের সন্তান। আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন। তখনো মা শিশু ইয়াসিনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন।
মায়ের আত্মত্যাগের এ রকম অসংখ্য উদাহরণ আছে।
মা ১০ মাস পেটে, তিন বছর বুকে আর সারাজীবন হৃদয়ে আগলে রাখেন। নিজের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে কেবল মা-ই পারেন সন্তানের জীবন রক্ষা করতে। মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। ‘মা’ যেন সীমার মাঝে অসীম। মায়ের তুলনা মা নিজেই।
সন্তান বাইরে থাকলে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত মায়ের মন উদ্বিগ্ন থাকে; ভালোভাবে ঘরে ফিরলে তবেই স্বস্তি মিলে মায়ের, যেন প্রাণ ফিরে পান। সেই মায়ের দিনে কয়বার খোঁজ রাখি (আমরা) সন্তানরা। বছরেও কি জিজ্ঞেস করা হয়- ‘মা তুমি খেয়েছ? তোমার কী খেতে ভালো লাগে!’
পৃথিবীর হাজারো রকম বদল হয়; কিন্তু মায়ের ভালোবাসা চিরন্তন। মায়ের ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন হয় না। সন্তানের অসুখে মায়েরা একই রকমভাবে রাত জাগেন, একই রকমভাবে তার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন; শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত একই রকমভাবে ভালোবাসেন।
মা হলেন আমাদের জীবনের সার্বক্ষণিক কল্যাণকামী; সন্তানের হাসিমুখ দেখেই ভুলে যান সব ক্লান্তি। তার জন্য কতটুকু ফুরসত মিলছে আপনার, আমাদের? অফিস, ক্লাস কিংবা কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করে মাকে তার পছন্দের খাবার খেতে নিয়ে গেছেন কদিন? শেষ কবে মাকে নিয়ে একসঙ্গে বাইরে খেয়েছেন, বেড়াতে নিয়ে গেছেন?
অথচ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, এর-ওর সঙ্গে কত খাওয়া হয়। কয়টা ছুটির দিন মায়ের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন? অথচ সন্তানের সান্নিধ্য পেতে মায়েরা কি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, উন্মুখ হয়ে থাকেন। কজন সন্তান মায়ের ব্যাকুলতা বোঝার ক্ষমতা রাখেন, মাকে বুঝতে পারেন? মায়ের প্রতি আমাদের কর্তব্যের কোনো শেষ নেই। নিজের গায়ের চামড়া দিয়ে মায়ের জুতা বানিয়ে দিলেও সারাজীবনে কখনও মায়ের এক কণা দুধের ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। যদি গানের ভাষায় বলি—
‘মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না
এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো...।’
মায়ের ঋণ অপরিশোধ্য। একজন সন্তানের প্রথম কর্তব্য হলো মাকে খুশি করা। মায়ের মনে কোনো দুঃখ না দেওয়া। মায়ের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার না করা। মাকে সবসময় সম্মান করা। মাকে ভালোবাসা। মায়ের সব আদেশে মেনে চলা। পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের মর্যাদা উচ্চাসনে।
শুধু বিশেষ দিবসে মা-বাবার জন্য ফেসবুকের দেয়ালে দামি দামি কথা পোস্ট নয়; মা-বাবার জন্য ভালোবাসা প্রকাশ হোক বাস্তবে জীবনে কথায়, কাজে ও তাদের সঙ্গে নম্র আচার-আচরণে।
মাকে ভালোবাসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। ৩৬৫ দিনের প্রতিটি সেকেন্ডেই মাকে মনে করতে চাই, ভালোবাসতে চাই। জীবনের প্রতিটি দিনই সন্তানের জন্য মা দিবস, প্রতিটি ক্ষণই সন্তানের জন্য মা দিবস। বাবা-মায়ের সেবা-যত্ন ও খোঁজ-খবর শুধু এক দিনের জন্য নয়, বরং সারা জীবনভর সেবা করার আদেশ আল্লাহপাক আমাদের দিয়েছেন।
পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও অনিঃশেষ ভালোবাসা। কাছে-দূরে যে যেখানেই থাকেন, মায়েরা যেন খুব ভালো থাকেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, শাকসু বানচালের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যদি আগামী সোমবার ভিসি এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা না করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের...
১ ঘণ্টা আগেসংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
২ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৩ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৪ ঘণ্টা আগে