সন্তানের সার্বিক বিকাশে সাধারণ জ্ঞানের গুরুত্ব

নাঈমা ইসলাম
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৩

বর্তমান সময়ের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে কেবল পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দিয়ে সন্তানকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। একজন শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান এবং মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক বিকাশ। এই বিকাশের প্রক্রিয়ায় সাধারণ জ্ঞান, এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম, বিভিন্ন শখ, খেলাধুলা ও শরীরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব কার্যক্রম শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে, চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটায় এবং জীবনের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

পাঠ্যবইয়ের বাইরেও কিছু শেখা মানে বাস্তব জীবনের শিক্ষা

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা শুধু ভালো নম্বর পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষা হলো ব্যক্তিত্বের বিকাশ, দায়িত্ববোধের চর্চা ও সমাজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। পাঠ্যবই একটি নির্দিষ্ট জ্ঞান দেয়, কিন্তু সাধারণ জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা শেখায়, কীভাবে সেই জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হয়। যেমন শিশুটি যদি সংবাদপত্র পড়ে, বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, তাহলে সে শুধু তথ্য জানে না, বরং নিজের মতামত তৈরি করতে শেখে। এভাবেই তার চিন্তা, বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ে।

এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম : সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বের বিকাশ

স্কুল বা কলেজে পড়াশোনার বাইরে গান, নাচ, আবৃত্তি, বিতর্ক, নাটক, কুইজ প্রতিযোগিতা, সেবামূলক কাজ, কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ—এসবই এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এসব কার্যক্রম শিশুর ভেতরের সৃজনশীল শক্তিকে জাগিয়ে তোলে। যেমন বিতর্ক শিশুকে শেখায় কীভাবে যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে হয়, নাটক শেখায় দলগত কাজ ও সময় ব্যবস্থাপনা, আর সংগীত বা চিত্রাঙ্কন মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে।

child

এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু নেতৃত্বের গুণ, দলবদ্ধভাবে কাজ করার মনোভাব ও সামাজিক দায়িত্ববোধ অর্জন করে, যা ভবিষ্যতে কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনে তাকে সফল করে তোলে।

শখের গুরুত্ব : প্রত্যেক শিশুর কিছু না কিছু আগ্রহ থাকে, যেমন বই পড়া, আঁকা, বাগান করা, গল্প লেখা, রান্না শেখা বা সংগীত চর্চা করা। এসব হবি শুধু সময় কাটানোর বিষয় নয়; বরং এটি মানসিক প্রশান্তির উৎস।

যখন শিশু নিজের পছন্দের কাজে সময় দেয়, তখন তার আত্মতৃপ্তি ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি পায়। এটি তাকে স্ট্রেস, একঘেয়েমি ও নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর শখ থাকে, তাদের মধ্যে হতাশা, উ[H1] দ্বেগ ও আচরণগত সমস্যার প্রবণতা অনেক কম।

একই সঙ্গে শখ শিশুদের লক্ষ্য স্থির করতে শেখায়। যেমন কেউ যদি গিটার বাজানো শেখে, সে জানে একদিন ভালো গিটারিস্ট হতে হলে প্রতিদিন নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। এই ধৈর্য ও অধ্যবসায় ভবিষ্যতে জীবনের সব ক্ষেত্রেই কাজে লাগে।

খেলাধুলা ও শরীরচর্চা : মনোযোগ ও মানসিক ভারসাম্যের চাবিকাঠি

শিশুর শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে খেলাধুলা অত্যন্ত কার্যকর। নিয়মিত খেলাধুলা করলে শরীরের রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে, ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

দলগত খেলা, যেমন ফুটবল, ক্রিকেট বা বাস্কেটবল—এসব শিশুদের শেখায় কীভাবে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হয়, নেতৃত্ব দিতে হয় এবং পরাজয়কে মেনে নিয়ে পরেরবার আরো ভালো করার মানসিকতা তৈরি করতে হয়।

অন্যদিকে যোগব্যায়াম, দৌড়, সাঁতার বা সাইক্লিং শিশুকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

chiul4

স্ক্রিন আসক্তি ও ড্রাগ থেকে দূরে রাখার কার্যকর উপায়

বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম বড় সমস্যা হলো স্ক্রিন আসক্তি—মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারে অতিরিক্ত সময় কাটানো। এ কারণে শিশুর মনোযোগ কমে যায়, সামাজিক যোগাযোগে অনীহা বাড়ে, ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় এবং মানসিক চাপ তৈরি হয়। যখন শিশু খেলাধুলা, নিজের শখ বা এক্সট্রা কারিকুলার কাজে যুক্ত হয়, তখন তার সময় সৃজনশীল ও উপকারী কাজে ব্যয় হয়। এতে সে ভার্চুয়াল জগতের আসক্তি থেকে মুক্ত থাকে।

একইভাবে অবসরের সময় সঠিকভাবে কাজে লাগলে ড্রাগ বা খারাপ বন্ধুবৃত্তে জড়ানোর ঝুঁকিও কমে যায়। খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজে যুক্ত শিশুরা সাধারণত আত্মনিয়ন্ত্রণী, আত্মবিশ্বাসী এবং দায়িত্ববান হয়, যা তাদের খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

শিশুর মানসিক বিকাশ ও সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধিতে বাবা-মা ও শিক্ষকদের ভূমিকা অনেক। সন্তানের সার্বিক বিকাশে অভিভাবকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকরাও একটি শিশুর বিকাশে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন।

বাবা-মা ও শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগেই সম্ভব একটি প্রজন্ম তৈরি করা, যারা শুধু পরীক্ষায় নয়, জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করবে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

নাঈমা ইসলাম

সাইকোলজিস্ট

বিআইএসসি অ্যান্ড টিসিসি

ছবি সৌজন্যে : বিআইএসসি, মহাখালী

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত