কর্মক্ষেত্র হোক স্বাচ্ছন্দ্যময়

মোহনা জাহ্নবী
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫, ১১: ১৯
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৪: ২৫
মডেল: ফাহমিদা ফেরদৌস

চাকরিজীবী মানুষের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটে যায় অফিসে। তাই অফিসের সামগ্রিক পরিবেশ তার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে। সেক্ষেত্রে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের প্রয়োজনে অফিসের পরিবেশ এমন হওয়া উচিত, যা কর্মীদের জন্য উৎসাহজনক, স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক ও কার্যকর। অফিসের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত এবং কর্মজীবী মানুষের জীবনে এর প্রভাব কেমন, সে সম্পর্কে লিখেছেন মোহনা জাহ্নবী

বিজ্ঞাপন
মডেল: আয়েশা অর্থি
মডেল: আয়েশা অর্থি

সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক

সহকর্মীদের মধ্যে ভালো ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত। তাহলে সবাই মিলেমিশে কাজ করতে পারবে, কাজের ফলাফলও ভালো হবে। যদি কর্মীরা তাদের সহকর্মীদের কাছ থেকে সহানুভূতি ও সমর্থন পায়, তাহলে তারা মানসিকভাবে আনন্দে থাকে এবং চাকরি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখে।

পারস্পরিক যোগাযোগ

কর্মক্ষেত্রে সবার ভেতর পারস্পরিক যোগাযোগ স্পষ্ট থাকা উচিত। এতে কর্মীরা তাদের মতামত ও সমস্যা সহজে প্রকাশ করতে পারবে এবং সমাধানের পথ সহজ হবে।

সুসংগঠিত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ

অফিসের পরিবেশ সুসংগঠিত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত, যাতে কর্মীরা স্বস্তি নিয়ে কাজ করতে পারে এবং কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। বর্তমান সময়ে এমন অনেক অফিস দেখা যায়, যেখানে আলো-বাতাস প্রবেশ করে না, চার দেয়ালের মাঝে দিনের পর দিন কর্মীদের কাজ করতে হয়। এমন পরিবেশ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। অবশ্যই অফিসের পরিবেশ এমন হওয়া উচিত, যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে। সুস্থ পরিবেশ (পর্যাপ্ত আলো, ভালো বায়ুপ্রবাহ, আরামদায়ক চেয়ার ও টেবিল) শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে কর্মী বেশি সতেজ ও কর্মক্ষম থাকে।

যথাযথ প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম

কর্মীদের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ও সরঞ্জাম পর্যাপ্ত থাকা উচিত। এতে তাদের কাজের গতি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।

কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য

কাজের জন্য জীবন নয়, বরং জীবনের জন্যই কাজ। তাই কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের ভেতর ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। কর্মীদের ওপর কখনোই অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। লাঞ্চ ব্রেক, ছুটি ও কাজের সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশিক্ষণ ও উন্নতির সুযোগ

পৃথিবী ক্রমেই আধুনিক হচ্ছে। আর এই আধুনিকায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজেকে প্রতিনিয়ত আরো বেশি দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন। এই দক্ষতা কর্মী ও কর্মক্ষেত্র উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক। তাই কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করার সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা

মানসিক চাপ কমাতে এবং শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকতে পারে। যেমন যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ। কর্মীদের জন্য মাসে একদিন ‘স্পেশাল সেল্ফ কেয়ার ডে’র ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে।

বিভিন্ন উৎসব পালন

সারা বছর ছোট-বড় অনেক উৎসবই হয়ে থাকে বাংলাদেশে। কিন্তু সব উৎসব কিংবা বিশেষ দিনে অফিস ছুটি থাকে না। যেহেতু কর্মক্ষেত্রেই মানুষের বেশিরভাগ সময় কাটে, তাই সেসব উৎসবের দিনগুলোয় ছোট পরিসরে হলেও অফিসে আয়োজন করা উচিত। এতে কর্মীরা খুশি হবে এবং আনন্দপূর্ণ পরিবেশ তাদের কর্মোদ্দীপনা আরো বাড়িয়ে দেবে।

OFFCE-ENVIRON

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের ওপর কর্মীর মানসিক ও শারীরিক প্রভাব

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কর্মীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। অফিসের ভালো পরিবেশ কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহযোগিতা করে। একইভাবে নেতিবাচক পরিবেশ কর্মীর মধ্যে উদ্বেগ, চাপ ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ শরীর ও মনে কী প্রভাব ফেলে—এ প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার লায়লাতুন নাহার বন্যা (এসএমসি) বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ উদ্বেগ তৈরি করে, যার ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন বুক ধড়ফড় করা, ক্ষুধামান্দ্য, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হওয়া, মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, বমি ভাব, অনিদ্রা, নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হওয়া এবং নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যৌন জীবনে সমস্যা হতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি অতিরিক্ত কাজের চাপের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি, স্ট্রোকসহ জটিলতর শারীরিক সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ কিছু মানসিক উপসর্গও তৈরি করে, যেমন ভুলে যাওয়া, অমনোযোগিতা, নেতিবাচক মনোভাব, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, পারিবারিক ও কর্মজীবনে সমন্বয়হীনতা, একই ভাবনার পুনরাবৃত্তি করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া প্রভৃতি। এ ব্যাপারে সচেতন না হলে আরো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে, যেমন মাদকাসক্তি, এমনকি আত্মহত্যার মতো মারাত্মক ঘটনাও ঘটতে পারে।’

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কর্মীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। একটি সুস্থ, সহায়ক ও সংগঠিত পরিবেশ কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। ভালো পরিবেশ কর্মীকে চাপমুক্ত রাখে এবং মনোযোগী ও উৎপাদনশীল করে তোলে। তারা আগ্রহপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে। তাই অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর হওয়া উচিত।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত