মণিপুরী শাড়ির প্রতি রিংকির ভালোবাসা

ওমর শাহেদ
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ১৪: ১৪

রেহমুমা হোসেন রিংকি গড়ে তুলেছেন মণিপুরী শাড়ির অনলাইন দোকান। নাম রিংকিস অ্যাটায়ার। তার এই ব্যবসার শুরু ২০১৯ সালে, করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময়। তিনি শিক্ষকতা করেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তখন স্কুল বন্ধ ছিল, মানুষজন ঘরবন্দি। রিংকি ভাবলেন সময়টাকে কাজে লাগানো দরকার। অনলাইনে কোনো একটি ব্যবসা শুরু করা যায় কি না। কী নিয়ে কাজ করবেন ভাবতে ভাবতে হেরিটেজ নিয়ে কাজের কথা মাথায় এলো। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলেন সিলেটের মণিপুরীদের ৩০০ বছরের পোশাক তৈরির ঐতিহ্য রয়েছে। ফলে রিংকি মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ঘুরতে গেলেন এবং শাড়ি কিনে নিয়ে ফিরে এলেন। তখন মণিপুরী শাড়ি নিয়ে এত প্রচার-প্রচারণা ছিল না। তিনি মণিপুরী শাড়িকে জনপ্রিয় করার টার্গেট নিয়ে নামলেন। এ জন্য তাকে অনেক সাধনা করতে হয়েছে। তাঁতিদের সঙ্গে তাকে কাজ করতে হয়েছে। তিনি এখনো করছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কাজের শুরুতে দুজন তাঁতি দুটি তাঁত নিয়ে কাজ করতেন। এখন শ্রীমঙ্গলে তারা ১০টি তাঁত বসিয়ে কাজ করছেন। এ জন্য আমাকে ও তাদের প্রচুর খাটতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জামদানি ও মণিপুরী শাড়ি একই সঙ্গে উচ্চারিত হোকÑএই ছিল রিংকির স্বপ্ন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীরা জামদানি পরে যান। মণিপুরী শাড়ির তেমন অবস্থা হোক এ জন্য তিনি অলনাইনে প্রচুর প্রচারণা চালিয়েছেন। লেখালেখি করেছেন। মণিপুরীদের তাঁতের ওয়েস্টার্ন আউটফিট-জুতা, ব্যাগ, লং জ্যাকেট, শর্ট জ্যাকেট তৈরি করিয়ে নিয়েছেন তাঁতিদের কাছ থেকে। মণিপুরী গামছা দিয়ে তিনি এখন বিভিন্ন ধরনের আউট ফিট তৈরি করছেন। তাদের গজ কাপড় থেকে তিনি নিজস্ব নকশায় শাড়ি তৈরি করেন।

তিনি মণিপুরী শাড়ির জিআই সনদের জন্য তাঁত বোর্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন। মণিপুরী শাড়ির জিআই সনদের জন্য তিনি তাঁত বোর্ডের সহকারী হিসেবে ডকুমেন্টেশন ও তথ্য সংগ্রহে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। মণিপুরী শাড়ি জিআই সনদ পেয়েছে।

রিংকির আরো একটি কাজ হলো তাঁতিদের লস হয়ে যাওয়া বাতিল শাড়ি বা কাপড় দিয়ে নানা ধরনের আউট ফিট তৈরি করা। অনলাইনে মণিপুরী শাড়ির প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে এমফিল করছেন রেহমুমা হোসেন রিংকি। তিনি লেখাপড়া করেছেন মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেন।

তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মণিপুরী শাড়ির প্রচারণা চালান। পরেন তাদের শাড়ি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরে যান। তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। সেখানে এখন তার ৫০ লাখ টাকা খাটছে। তার লক্ষ্য হলো, মণিপুরী শাড়িকে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। জামদানির ক্ষেত্রে যেমন মানুষের আবেগ কাজ করে, মণিপুরী শাড়ির ক্ষেত্রেও তেমন আবেগ যাতে কাজ করে, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন রিংকি। তাঁতিদের জীবনমান উন্নয়নও তার অন্যতম লক্ষ্য। কেননা তারা সবচেয়ে অবহেলিত। অবশ্য আস্তে আস্তে তারা উন্নত হয়ে যাচ্ছেন। কাজের মানও আগের তুলনায় ভালো হচ্ছে।

রিংকি বললেনÑকোনো কাজই সহজ নয়। প্রতিটি কাজই কঠিন। তবে কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে কোনো বাধাই বাধা নয়, সেভাবেই আমি কাজ করি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত