পরিবেশবান্ধব উপাদান নিয়ে কাজ করাই আনিকার লক্ষ্য

আলেয়া রহমান
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৪৪
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৫৭

২০১৭ সালের ডিসেম্বর। আনিকা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। হাতে তৈরি গহনা নিয়ে শুরু করেন তার উদ্যোক্তা জীবন। গহনার প্রাপ্তিস্থান ফেসবুক পেজের নাম দেন ‘অহং’। পড়াশোনার যেন ক্ষতি না হয়, তাই একটু একটু করে কাজ করছিলেন। করোনা মহামারি কিছু মানুষের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল, আনিকার জীবনেও তা-ই। লকডাউনের সময় বিভিন্ন উপাদান নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করতে করতে কাঠ দিয়ে পাঁচটি ব্যাগ বানান তিনি এবং অভূতপূর্ব সাড়া পান। পুরোদমে যাত্রা শুরু হয় সেখান থেকেই।

আনিকা বলেন, “অহং শব্দটা আসে ‘অহংকার’ থেকে। দেশীয় পণ্য নিয়ে সবাই গর্ব ও অহংকার করুক, ভালোবেসে ব্যবহার করুক— এই ভাবনা থেকেই অহংয়ের নামকরণ।”

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার ভাবনা এবং একই সঙ্গে দেশীয় পণ্যের প্রতি ভালোবাসা তাকে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করেছে। আশৈশব ঢাকায় বেড়ে ওঠা নিশাত ফেরদৌস আনিকা জানান, মা তার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। তার মা নিজেও বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজে পারদর্শী। কোনো একটি পণ্য বানানোর পর তিনি সেটার গঠনমূলক সমালোচনা করেন সব সময়। মায়ের এই সমালোচনাগুলো আনিকার কাজ আরো নিখুঁত করতে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া তার বাবা আর ভাইয়াও তাকে নানা কাজে বরাবরই সহযোগিতা করেছেন।

Anika-2

নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আনিকা বলেন, ‘র ম্যাটেরিয়ালের খোঁজে বিভিন্ন প্রান্তে ছোটাছুটি করতে হয়। অনেক জায়গাতেই একা যাওয়াটা নিরাপদ মনে হয় না। এখন অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের পদচারণা বেড়েছে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি সেই আগের মতোই আছে। এটাই প্রধান প্রতিবন্ধকতা মনে হয় আমার কাছে।’

উদ্যোক্তা জীবনের ভালো লাগার একটি মুহূর্তের কথা জানাতে গিয়ে আনিকা বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা ট্রেন্ড ছিল, বিয়েতে ব্যবহৃত গহনা-ব্যাগসহ নানা অনুষঙ্গ ভারত বা পাকিস্তান থেকে আসে। বর্তমানে জামদানি শাড়ির প্রচলন দেখা যাচ্ছে ব্যাপকহারে। সেই সঙ্গে ব্যাগ ও গহনার জন্যও অনেকে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করছেন। প্রথমবার যখন আমার বানানো কাঠের ব্যাগ বিয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখি, সেই মুহূর্তটা একই সঙ্গে গর্বের ও আনন্দের। এরপর তো আমাদের একটা ব্রাইডাল সিরিজও প্রকাশ করেছিলাম।’

বর্তমানে অহংয়ে কাঠের ব্যাগের পাশাপাশি কাঠের তৈরি জুয়েলারি বক্স, রেজিনের তৈরি গহনা, ল্যাপটপ টেবিল ইত্যাদি রয়েছে। একদম সাম্প্রতিক সংযোজন ওয়াল ডেকোর আইটেম। অতি সাধারণ একটি দেয়াল অথবা ঘরের একটি কর্নারকে নান্দনিক করে তোলার জন্য এই ছোট্ট প্রয়াস।

উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আনিকা বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তার সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে বলতেই হয় অনেকটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সমাজের সর্বস্তরে দেশীয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। দেশীয় পণ্য নিয়ে অনেক প্রদর্শনীও হচ্ছে। তবে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি কুটিরশিল্প রক্ষার্থে সরকারের আরো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

অহং নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে এই সৃজনশীল নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘সব শ্রেণির গ্রাহকের কাছে অহং পৌঁছে যাক এবং সবাই ভালোবেসে অহংকে ধারণ করুকÑ এটাই অহংয়ের পরিকল্পনা। সেই সঙ্গে কাজের পরিসর আরো বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন পণ্য আসতে থাকবে। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপাদানের ওপর নির্ভর করে কাজ করে যাওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে যারা আত্মপ্রকাশ করতে চান, তাদের উদ্দেশে আনিকা বলেন, ‘নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করে নতুন কিছু উদ্ভাবনের দিকে জোর দিতে হবে। উদ্যোগের পণ্যে নিজস্বতা থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত