রেজাউল হাসান
কবি হাসান হাফিজের সঙ্গে আমার সম্পর্কের একটা ধারাবাহিকতা আছে পঞ্চাশ বছরের। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলা বিভাগ। ও আমার জুনিয়র ছিল এবং ছিল অধুনালুপ্ত দৈনিক ‘বাংলা’র ইউনিভার্সিটি রিপোর্টার। বাংলা বিভাগ শুধু নয়, তখন অনেক ছাত্রই ছিল খণ্ডকালীন ইউনিভার্সিটি রিপোর্টার। দুপুরের পরে ক্লাস শেষে আড্ডা মেরে সবাই ছুটত যার যার পত্রিকা অফিসে। বলা বাহুল্য, রিকশার বদলে অধিকাংশই পদযুগল ব্যবহার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গিয়ে উঠত। রাস্তাঘাটে এমন ভয়াবহ যানজটের চিত্র তখন ছিল অনুপস্থিত।
স্বাধীনতা-উত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। মধুর ক্যান্টিন ছিল মূলত রাজনৈতিক ছাত্রনেতাদের দখলে। আর এদিকে ইউনিভার্সিটি-সংলগ্ন শরীফ মিয়ার ক্যান্টিন ছিল কবি, সাংবাদিক আর নাট্যকর্মীদের দখলে।
এ সময় বাংলা বিভাগে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটা দাপট ছিল। রুদ্রর সঙ্গে কবি কামাল চৌধুরী, জাফর ওয়াজেদ আর আলী রীয়াজের একটা গ্রুপিং ছিল। রুদ্রর অনেক গুণ। শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনে এসেই হাঁক ছাড়ত—‘এই হর্স পাওয়ার দাও।’ হর্স পাওয়ার মানে এক প্লেট ছোলা। দাম আট আনা। তারপর মুড ভালো থাকলে গানের সুরে পুঁথি পাঠ করত। কালো আলখাল্লা পরিহিত কবি গোলাম সাবদার সিদ্দিকী ছিল অ্যাডেড অ্যাট্রাকশন। হাসান হাফিজও যোগ দিত এই আড্ডায়।
ওরা তিন ভাই—বড় ভাই বাকী ভাই, তারপর রাজা আর হাসান হাফিজ। ভাইয়েরা যেন ওকে ছাড়া পথ চলতে পারে না। হাসান হাফিজরা একসময় বাসা ভাড়া নিল। ওদের সঙ্গে থাকতে শুরু করল উর্মী জাহাঙ্গীর (রহমান)। মেসবাড়িতে মহিলা বোর্ডার!
হাসান হাফিজ সম্পর্কে বেলাল ভাই আমার গুরু কবি বেলাল চৌধুরী বলতেন, ওর পায়ের নিচে সরষেদানা আছে, তাই ও কোথাও স্থির থাকতে পারে না। সব সময়ই মুভিং, অ্যাক্টিভ। কিছু না কিছু করছে। তা ওর কাজকর্মে বোঝা যায়। কবিতা তো আছেই, তা ছাড়া অন্যান্য গ্রন্থ মিলিয়ে তার সংখ্যাও কম নয়, দুশোর ওপরে। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও স্প্যানিশ ভাষায় ওর কবিতার অনুবাদ বেরিয়েছে।
হাসান প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি হিসেবে অনেক দিন দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ওর ওপর সভাপতির দায়িত্ব চাপল। সেইসঙ্গে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদনা। এই খবর শোনার পর ওকে ফোন করে বলেছিলাম, একই সঙ্গে গণভবন আর বঙ্গভবনের দায়িত্ব পেয়ে শত্রুর সংখ্যা মনে হয় বাড়িয়ে ফেললে! হাসান বলে, ‘আমি ভাই যোগ্যতায় বিশ্বাস করি। পঞ্চাশ বছর ধরে যেমন আপনার সঙ্গে সম্পর্ক, তেমনি লেখালেখি-সাংবাদিকতার সঙ্গেও। দৈনিক বাংলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তো খুব একটা বেকার থাকিনি। পত্রিকায় না থাকলেও বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। আমার গায়ে কোনো রাজনৈতিক লেবেল নেই। অনেকেই চেষ্টা করে ট্যাগ লাগাতে। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবে, আমি কোনো রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছি কিংবা নিয়েছি? আমি হাসান হাফিজ, কবি—এই পরিচয়েই পথ চলতে চলতে এখানে এসেছি।’
ওর সঙ্গে দেখা হলে ইউনিভার্সিটি-জীবনের সেই নস্টালজিয়ায় ফিরে যাই; বলি, কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! এই পঞ্চাশ বছরে পৃথিবী কত বদলে গেল! আমরা হারালাম আমাদের কত প্রিয় কবি-লেখককে। রুদ্রও নেই। কামাল চৌধুরী জেলে। জাফর ওয়াজেদ আত্মগোপনে। আলী রীয়াজ তো এখন ন্যাশনাল ফিগার। অথচ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ জানতাম!
কবি হাসান হাফিজের ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে পলাশ, কৃষ্ণচূড়া আর লাল গোলাপের রক্তিম শুভেচ্ছা।
কবি হাসান হাফিজের সঙ্গে আমার সম্পর্কের একটা ধারাবাহিকতা আছে পঞ্চাশ বছরের। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলা বিভাগ। ও আমার জুনিয়র ছিল এবং ছিল অধুনালুপ্ত দৈনিক ‘বাংলা’র ইউনিভার্সিটি রিপোর্টার। বাংলা বিভাগ শুধু নয়, তখন অনেক ছাত্রই ছিল খণ্ডকালীন ইউনিভার্সিটি রিপোর্টার। দুপুরের পরে ক্লাস শেষে আড্ডা মেরে সবাই ছুটত যার যার পত্রিকা অফিসে। বলা বাহুল্য, রিকশার বদলে অধিকাংশই পদযুগল ব্যবহার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গিয়ে উঠত। রাস্তাঘাটে এমন ভয়াবহ যানজটের চিত্র তখন ছিল অনুপস্থিত।
স্বাধীনতা-উত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। মধুর ক্যান্টিন ছিল মূলত রাজনৈতিক ছাত্রনেতাদের দখলে। আর এদিকে ইউনিভার্সিটি-সংলগ্ন শরীফ মিয়ার ক্যান্টিন ছিল কবি, সাংবাদিক আর নাট্যকর্মীদের দখলে।
এ সময় বাংলা বিভাগে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটা দাপট ছিল। রুদ্রর সঙ্গে কবি কামাল চৌধুরী, জাফর ওয়াজেদ আর আলী রীয়াজের একটা গ্রুপিং ছিল। রুদ্রর অনেক গুণ। শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনে এসেই হাঁক ছাড়ত—‘এই হর্স পাওয়ার দাও।’ হর্স পাওয়ার মানে এক প্লেট ছোলা। দাম আট আনা। তারপর মুড ভালো থাকলে গানের সুরে পুঁথি পাঠ করত। কালো আলখাল্লা পরিহিত কবি গোলাম সাবদার সিদ্দিকী ছিল অ্যাডেড অ্যাট্রাকশন। হাসান হাফিজও যোগ দিত এই আড্ডায়।
ওরা তিন ভাই—বড় ভাই বাকী ভাই, তারপর রাজা আর হাসান হাফিজ। ভাইয়েরা যেন ওকে ছাড়া পথ চলতে পারে না। হাসান হাফিজরা একসময় বাসা ভাড়া নিল। ওদের সঙ্গে থাকতে শুরু করল উর্মী জাহাঙ্গীর (রহমান)। মেসবাড়িতে মহিলা বোর্ডার!
হাসান হাফিজ সম্পর্কে বেলাল ভাই আমার গুরু কবি বেলাল চৌধুরী বলতেন, ওর পায়ের নিচে সরষেদানা আছে, তাই ও কোথাও স্থির থাকতে পারে না। সব সময়ই মুভিং, অ্যাক্টিভ। কিছু না কিছু করছে। তা ওর কাজকর্মে বোঝা যায়। কবিতা তো আছেই, তা ছাড়া অন্যান্য গ্রন্থ মিলিয়ে তার সংখ্যাও কম নয়, দুশোর ওপরে। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও স্প্যানিশ ভাষায় ওর কবিতার অনুবাদ বেরিয়েছে।
হাসান প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি হিসেবে অনেক দিন দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ওর ওপর সভাপতির দায়িত্ব চাপল। সেইসঙ্গে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদনা। এই খবর শোনার পর ওকে ফোন করে বলেছিলাম, একই সঙ্গে গণভবন আর বঙ্গভবনের দায়িত্ব পেয়ে শত্রুর সংখ্যা মনে হয় বাড়িয়ে ফেললে! হাসান বলে, ‘আমি ভাই যোগ্যতায় বিশ্বাস করি। পঞ্চাশ বছর ধরে যেমন আপনার সঙ্গে সম্পর্ক, তেমনি লেখালেখি-সাংবাদিকতার সঙ্গেও। দৈনিক বাংলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তো খুব একটা বেকার থাকিনি। পত্রিকায় না থাকলেও বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। আমার গায়ে কোনো রাজনৈতিক লেবেল নেই। অনেকেই চেষ্টা করে ট্যাগ লাগাতে। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবে, আমি কোনো রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছি কিংবা নিয়েছি? আমি হাসান হাফিজ, কবি—এই পরিচয়েই পথ চলতে চলতে এখানে এসেছি।’
ওর সঙ্গে দেখা হলে ইউনিভার্সিটি-জীবনের সেই নস্টালজিয়ায় ফিরে যাই; বলি, কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! এই পঞ্চাশ বছরে পৃথিবী কত বদলে গেল! আমরা হারালাম আমাদের কত প্রিয় কবি-লেখককে। রুদ্রও নেই। কামাল চৌধুরী জেলে। জাফর ওয়াজেদ আত্মগোপনে। আলী রীয়াজ তো এখন ন্যাশনাল ফিগার। অথচ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ জানতাম!
কবি হাসান হাফিজের ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে পলাশ, কৃষ্ণচূড়া আর লাল গোলাপের রক্তিম শুভেচ্ছা।
গাজা পুনরুদ্ধারের এই সময়ে ‘ফিলিস্তিন সাংস্কৃতিক পুরস্কার’ ঘোষণা করেছে ‘ফিলিস্তিন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট’। ১৩তম আসরের মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে—‘জেরুজালেম, গাজা উপত্যকা, গোটা ফিলিস্তিন ও জায়নবাদের বিরোধিতা’।
৩ দিন আগেএকশ বছর আগের কথা। ১৮৮৯ সাল। তুরিনে আজকের মতোই এক দিনে ফ্রিডরিখ নিৎশে কার্লো আলবার্তো পথের ৬ নম্বর বাড়ির ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসেন। কখনো হাঁটতে বের হতেন, আবার কখনো পোস্ট অফিসে চিঠিপত্র তুলতে যেতেন।
৪ দিন আগেবাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী আয়োজিত ইসলামি বইমেলায় প্রতিদিনই জড়ো হন হাজারো মানুষ। বিশেষত সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। আর এই জনস্রোতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একদল স্বপ্নবাজ তরুণের হাতে গড়া ‘লিটলম্যাগ কর্নার’।
৪ দিন আগেইসলাম-পূর্ব সময়ে এক ভয়ংকর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল যেন আরবরা। সমগ্র আরবে চলছিল ভয়াবহ অরাজকতা। গোত্রে গোত্রে শত্রুতা। সারাক্ষণ একে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টায় রত। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি ও মারামারি থেকে শুরু করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া; বছরের পর বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলা।
৪ দিন আগে