ইতিহাস
আজকের শিল্প—রঙ, রেখা, গানের সুর,
যা একদিন কেবল জাদুঘরের কাচে বাঁধা নিদর্শন হবে।
আজকের বিজ্ঞান—অণু ভেদ করে, মহাশূন্য ছুঁয়ে,
যা একদিন লেখা থাকবে হলুদ পাতার ফুটনোটে।
আজকের চিকিৎসা—ব্যথা সারায়, প্রাণ বাঁচায়,
কিন্তু ভবিষ্যতের চোখে—
এগুলো হবে কেবল বিস্মৃত কৌশল,
প্রাচীন পরীক্ষা-প্রস্তুতির খাতা।
আজকের যুদ্ধ—কামান, ড্রোন, বারুদের দাপট,
যা একদিন রক্তের গন্ধ হারিয়ে
শুধু মানচিত্রে টানা সীমানা হয়ে যাবে,
সময়ের তাগিদে আবার বদলাবে।
আজকের অর্থনীতি—শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন,
টাকার তৃষ্ণা, বাণিজ্য-ট্যারিফের ঢেউ,
যা একদিন নিছক সংখ্যার খেলা হবে
অচেনা গবেষকের বিশ্লেষণে।
আজকের রাজনীতি—প্রতিশ্রুতি আর বিরোধ,
ক্ষমতার হাহাকার, গালাগালির গলাগলি আর স্লোগান,
যা একদিন ধুলোবালিতে ঢাকা থাকবে,
কেবল কয়েকটি নাম টিকে যাবে কেউ নায়ক, কেউ খলনায়ক।
আজকের সাহিত্য—কবির রক্তে ভেজা শব্দের উত্তাপে
আলো জ্বালে, মানুষকে নাড়া দেয়,
কিন্তু একদিন—শুধু পাঠকের চোখে, ব্যাখ্যার ভেতর,
ইতিহাসের পাতায় ভেসে উঠবে তাদের চোখের সামনে।
কারণ ইতিহাস কেবল যা ঘটেছে তা নয়—
বরং সমকালীন সময়ে আমরা যে দৃষ্টিতে
অতীতকে যেভাবে দেখে থাকি,
ব্যাখ্যা করি, পুনর্লিখনে নতুন করে সাজাই।
তাহলে মানুষের সমস্ত চেষ্টা, সমস্ত সংগ্রাম,
সবচেয়ে ক্ষুদ্র হাতের আঁকিবুঁকি থেকে
সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধের শব্দ পর্যন্ত
একদিন গলে যাবে এক স্রোতে,
যার নাম—ইতিহাস।

