শক্তি সঞ্চয় করছে ঘুর্ণিঝড় ‘মন্থা’, গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৩৫

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে শনিবার সকাল ৬ টার দিকে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরবর্তীতে একই এলাকায়- ১০ দশমিক৬ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রঘিমাংশে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে রোববার সকালে গভীর নিম্নচাপ এবং পরে আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থার সম্পর্কে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বিজ্ঞাপন

শনিবার বিকালে আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ আমার দেশকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি এরইমধ্যে ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে রোববার নাগাদ গভীর নিম্নচাপে এবং এরপর দিন সোমবার সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে অন্ধপ্রদেশ অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ও উপকূলীয় এর প্রভাবে টানা ৩দিন বৃষ্টি থাকতে পারে। আগামী মঙ্গলবার থেকেই হালকা বৃষ্টি শুরু হলেও বুধবার থেকে শুক্রবার নাগাদ বৃষ্টি থাকতে পারে।

১১৭ এর বেশি গতিবেগের এই ঘুর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মন্থা’, যার অর্থ ‘মন্থন’। নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। এই সিস্টেম পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে যাবে। এ অঞ্চলে সাধারণত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।

গতি-প্রকৃতির দিক থেকে ঘুর্ণিঝড়টির ধরন সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক এটিকে ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’বলে উল্লেখ করেন। অবশ্য এর আগে চলতি বছরে বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। সর্বশেষ প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল বঙ্গোপসাগরের একটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, যেটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এটি ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে। এটি ২০২৪ উত্তর ভারত মহাসাগর ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রথম গভীর নিম্নচাপ, প্রথম ঘূর্ণিঝড় এবং প্রথম তীব্র ঘূর্ণিঝড় ছিল।

বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণত চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়

এদিকে গত কয়েকদিনের মতো বৃষ্টিহীন ঢাকায় গরমের দাপট অব্যাহত রয়েছে। সকালে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে অস্বস্তি বেড়ে যায়। আজ শনিবার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া শুষ্ক ছিল। উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হলেও গরমের বেশ দাপট লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফেনিতে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর ঢাকায় ৩৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

ঘূর্ণিঝড় কীভাবে তৈরি হয়

গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক পরিচলন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে উৎপত্তি হয় ঘূর্ণিঝড়ের, যা স্থানভেদে হারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোন নামে পরিচিত। সাধারণত বিশ্ব মানচিত্রে নিরক্ষ রেখা বা বিষুবরেখা তথা পৃথিবীর মাঝখান দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যে কাল্পনিক রেখা আঁকা হয় তার আশে-পাশের উষ্ণ সমুদ্রের উপরে বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।

প্রতি বছর পৃথিবীজুড়ে গড়ে ৮০টি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়, এর মধ্যে কিছু ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে আবার কিছু ঘূর্ণিঝড় মহাসাগরে বিলীন হয়ে যায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত